পঞ্চায়েত নির্বাচনের দামামা বাজতেই নয়াদিল্লি গিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দেখা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে। সেখানে তিনি জানিয়ে এসেছিলেন বাংলার ৩০ শতাংশ বুথ বাদ দিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। কারণ এই ৩০ শতাংশ বুথ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। যাদের সমর্থন পাওয়া যাবে না। তাই বাকি ৭০ শতাংশ বুথে লড়াই করবে বঙ্গ–বিজেপি। এই তথ্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দেওয়া হয়েছিল বলে সূত্রের খবর। কিন্তু মনোনয়ন–পর্ব শেষে দেখা গেল ওই ৭০ শতাংশ বুথেও সর্বত্র প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। ৭০ শতাংশ বুথ সংখ্যাগুরু ধরা হলেও কেন সেখানে প্রার্থী দেওয়া গেল না? তথ্য তলব করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
এদিকে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনি বঙ্গ–বিজেপির নেতারা। তাই তাঁদের উপর বেজায় চটেছেন অমিত শাহ, জেপি নড্ডা এবং বিএল সন্তোষ–সহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এতদিন মঙ্গল পাণ্ডে, সতীশ ধন্দ যে রিপোর্ট দিয়ে আসছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে তা এবার অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। সেটা হল—বঙ্গ বিজেপির সংগঠন বাংলায় কার্যত ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। আর সংগঠন দাঁড় করার কাজ না করে শুধু সরকারের সমালোচনা করে জনসমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংগঠন থাকলে প্রার্থী দেওয়াই যেত। সেখানে এমন চিত্র হয় কী করে? এই সব প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা বলে সূত্রের খবর।
অন্যদিকে খোদ শুভেন্দু অধিকারীর বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামের সব বুথে প্রার্থী দিতে পারেনি। পশ্চিম মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষের এলাকায় প্রার্থী দেওয়া যায়নি। সাংসদ সৌমিত্র খাঁর এলাকাতেও একই দৃশ্য। এছাড়া উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্র প্রার্থী দিতে না পারার ছবিই ফুটে উঠেছে। সে তথ্য পৌঁছে গিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। আর প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল কংগ্রেস দিকে দিকে জয় পেতে শুরু করেছে। প্রার্থী দিলেও সংগঠন না থাকায় জিততে পারত না বিজেপি। তবু লড়াই দেওয়া যেত। কিন্তু প্রার্থীই দিতে না পারায় সেই লড়াইয়ের জায়গাটিও রইল না। তাই এবার ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে।
আর কী জানা যাচ্ছে? কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আগেই নির্দেশ দিয়েছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনে সব বুথেই প্রার্থী দিতে হবে। দু’চার জায়গায় সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু এত সংখ্যক বুথে প্রার্থী দিতে না পারায় প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সেটা পরের বছর লোকসভা নির্বাচনে সমস্যা তৈরি করবে। এখানে দাঁড়িয়ে ৩৫টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। সেখানে এই ছবি ওই লক্ষ্যে পৌঁছতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ সংখ্যাগুরু বুথে যেমন প্রার্থী দেওয়া যায়নি তেমনই আদিবাসী এলাকাতেও প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। এই সব মিলিয়ে বঙ্গ–বিজেপির কাছে রিপোর্ট তলব করেছে নয়াদিল্লি বলে সূত্রের খবর।