একদিনের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইংল্যান্ড, পাকিস্তানের পর শ্রীলঙ্কাকেও হারিয়ে দিলো আফগানিস্তান। এই সাফল্যের রহস্য কী?কোনও সাধারণ টিম নয়, আফগানিস্তান যাদের হারিয়েছে, তারা সকলেই প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আফগানিস্তান হল, সেই দেশ যেখানে ২০০০ সাল পর্যন্ত ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ ছিল, ২০১০ সালে তারা একদিনের ক্রিকেট খেলার পূর্ণ স্বীকৃতি পায়, আর ২০২৩-এ এসে তারাই ভেল্কি দেখাচ্ছে। একসময় পাকিস্তানের রিফিউজি ক্যাম্পে ক্যাম্বিস বলে যারা ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিল, যাদের দেশে এখনো ক্রিকেট খেলার পরিকাঠামো প্রায় নেই বললেই চলে, তারাই তিন প্রাক্তন চ্যাম্পিয়নকে হারাল কী করে?শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়টাই দেখুন। শ্রীলঙ্কা প্রথম ব্যাট করে ২৪১ রান করে অল-আউট হয়ে যায়। আফগানিস্তান ৪৫.২ ওভারে তিন উইকেটে ২৪২ রান করে নেয়। গুরবাজ শূন্য রানে আউট হওয়ার পরেও পরপর চারজন ব্যাটার রান পান। পুরো প্রাধান্য নিয়ে জেতা।ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান যখন জেতে তখন অনেকেই বলেছিল, এটা নেহাতই একটা অঘটন। ফ্লুকে জিতে যাওয়া। কিন্তু তারপর যাদের বিরুদ্ধে কখনও জেতেনি আফগানিস্তান, সেই পাকিস্তানকে হারানো এবং সোমবার শ্রীলঙ্কাকে পর্যুদস্ত করার পর আর ফ্লুক বা অঘটন বলার কোনও জায়গা নেই। কারণ, অঘটন একবার হতে পারে। বারবার হয় না। তখন সেটা আর অঘটন থাকে না। হয়ে যায় নিজেদের শক্তিতে জয়। একটা কথা মনে রাখা দরকার। প্রতিভার পাশাপাশি চার 'স' আফগান ক্রিকেটকে বদলে দিয়েছে। সুযোগ, সুপরিকল্পনা, সমর্থন ও সামর্থ্য।আফগানিস্তানের ক্রিকেট দলের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। আফগান ক্রিকেটাররা দিল্লির লাগোয়া গ্রেটার নয়ডায় শহিদ বিজয় পাঠক স্টেডিয়ামে ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্র্যাকটিস করেছেন। করোনা না হলে তারপরেও করতেন। সেই সময় অত বড় স্টেডিয়াম, নয়ডার মতো ঝাঁ চকচকে শহর, ক্রিকেটের যাবতীয় পরিকাঠামো হাতের কাছে পেয়ে তার পুরো সদ্ব্যবহার করেছেন তাঁরা।বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের মেন্টর হলেন অজয় জাদেজা। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার। একসময় অনেক অসাধারণ ইনিংস উপহার দিয়েছেন। ক্রিকেটার ও ক্রিকেট বোদ্ধা হিসেবে তাঁর দক্ষতা নিয়ে কোনও কথা হবে না। তাছাড়া জাদেজা খুব শান্ত স্বভাবের ক্রিকেটার। উত্তেজনাকে যে মাঝেমধ্যে লাগাম পরাতে হয়, সেটা তিনি আফগান ক্রিকেটারদের শিখিয়েছেন।আফগানিস্তানের কোচ হলেন জোনাথন ট্রট। সাউথ আফ্রিকায় জন্ম ইংল্যান্ডের এই প্রাক্তন প্লেয়ার একটা কথা ভালো করে শিখিয়েছেন টিমকে-- হেরে যেও না। জেতার জন্য খেলো।এই সব সুযোগের পাশাপাশি আফগান প্লেয়ারদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে আইপিএল। রশিদ খান, নবি, গুরবাজের মতো অনেক আফগান প্লেয়ার আইপিএলে খেলেন। আইপিএলের টিমে খেলা মানে বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলা তো বটেই, তাঁদের সঙ্গে ওঠাবসা করাও। তাঁদের কাছ থেকে শেখা। আর ক্রিকেটে কৌশল কতটা জরুরি, কখন কীভাবে নিজেকে বদলে নিতে হয়, সেটা জানাও খুব জরুরি। আইপিএলের এই শিক্ষা আফগান ক্রিকেটারদের অসম্ভব সাহায্য করেছে।সুযোগ পাওয়া ও তা কাজে লাগানোর বিষয়টি এতটা সহজ হত না, যদি না ট্রট ও জাদেজারা সুপরিকল্পনা করতেন। একটা বিষয় এই বিশ্বকাপ থেকে স্পষ্ট হয়েছে, প্রথম দিকে আফগান ব্য়াটাররা উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এখন আর তা তাঁরা করছেন না। মাটি কামড়ে পড়ে থাকছেন। দেখনদারি শট নেওয়ার থেকে বুঝে খেলার চেষ্টা করছেন। ফলে তাদেঁর জয়ও আসছে। আফগান বোলাররা তো বিশ্বমানের, বিশেষ করে তাঁদের স্পিন আক্রমণ।ভারতে এবার আফগানিস্তানের টিম ঢালাও জনসমর্থন পাচ্ছে। ভারতে থাকা আফগানরা মাঠে যাচ্ছেন, সেইসঙ্গে ভারতীয়রাও আফগানিস্তানকে সমর্থন করেছে। তাঁদের জন্য গলা ফাটিয়েছে। ক্রিকেট তো মনস্তাত্ত্বিক খেলাও। সেখানে কোনও দলের পিছনে প্রচুর সমর্থন থাকলে তারা মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে যায়। সেটা আফগানিস্তানের হয়েছে।এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চতুর্থ 'স', যা হল সামর্থ্য। আফগান ক্রিকেটাররা প্রতিভাবান। খুব কম সময়ের মধ্যে তাঁদের দলে রশিদ খান, নবি, মজিদ-সহ একঝাঁক বিশ্বমানের বোলার তৈরি হয়ে গিয়েছে। গুরবাজ, হাসমতউল্লাহরাও বড় মঞ্চে সফল হওয়ার মতো জায়গায় ও দলকে নির্ভরতা দেওয়ার অবস্থায় চলে এসেছে। তাঁরা তাঁদের সামর্থ্যের সদ্বব্যবহার করছেন তা-ই নয়, নিজেদের সামর্থ্য অনুসারেও খেলছেন।আফগান সহকারী কোচ ও প্রাক্তন প্লেয়ার রইস আহমদজাই বলেছেন, ‘এশিয়ায় এখন ভারত এক নম্বর ক্রিকেট খেলিয়ে দেশ। দুই নম্বরে আছে পাকিস্তান। কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন আফগানিস্তান দুই নম্বরে চলে গেছে। সেই সামর্থ্য আমাদের আছে।’প্রতিভা ও চার 'স' বাদ দিয়ে আত্মবিশ্বাসেও একশর মধ্যে ১০০ পাবেন আফগানিস্তান ক্রিকেটাররা। ফলে তাঁদের স্বপ্নপূরণ হওয়ার পথে বাধা কোথায়!(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)