ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ খেলার সময় নিজের অবসরের কথা জানিয়ে ছিলেন শাকিব আল হাসান। তিনি নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচটি দেশের মাটিতে খেলতে চাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন। তবে নিরাপত্তা পাওয়ার বিষয় নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা যায় সেই সময়। সে দেশের অন্তর্বতী সরকারের তরফে এই অলরাউন্ডারের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করা হয়। তবে সম্প্রতি ঘটনায় নতুন মোড় আসে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তরফে সদর্থক বার্তা পান শাকিব। সুর নরম করতে দেখা যায় সরকার পক্ষকেও। অন্তর্বতী সরকারের যুব এবং ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন,‘শাকিব দেশের জন্য অনেক করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তাকে বাংলাদেশের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলতে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত’।
আর এর পরেই শাকিবের তরফেও দেশের জনগণের উদ্দেশে বার্তা দিতে দেখা যায়। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি তাঁর নীরবতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা। আমার প্রতি আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা আমাকে আজকের এই শাকিব আল হাসান হিসেবে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত করেছে। শুরুতেই আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই সকল আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। তাঁদের প্রতি এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা। যদিও স্বজন হারা একটি পরিবারের ত্যাগকে কোনও কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব না। সন্তান হারানো কিংবা ভাই হারানোর বেদনা কোনও কিছুতেই পূরণযোগ্য নয়। এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন তাঁদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এভাবে মনঃক্ষুণ্ন হতাম’।
শাকিব স্পষ্ট করেন রাজনীতিতে আগমন শুধুমাত্র তাঁর এলাকার উন্নয়ন করার জন্য। তিনি লেখেন, ‘আমি খুবই স্বল্প সময়ের জন্য মাগুরা-১ আসনের সাংসদ ছিলাম। আমার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়াটা ছিল মূলত আমার জন্মস্থান অর্থাৎ আমার মাগুরার মানুষের উন্নয়নের জন্য সুযোগ পাওয়া। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট কোনও দায়িত্ব ছাড়া নিজের এলাকার উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখাটা একটু কঠিন। আর আমার এই এলাকার উন্নয়ন করতে চাওয়া আমাকে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী করে’।
তিনি তাঁর ক্রিকেট জীবনে দেশের মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘দিনশেষে আমার পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশের ক্রিকেটার। আমি যখন যেখানে যে অবস্থাতেই থেকেছি অন্তর থেকে ক্রিকেটকেই ধারণ করেছি। এই ক্রিকেটকে ধারণ করে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সম্মান অর্জন করার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আপনারা। আপনাদের ভালোবাসা এবং সমর্থন আমাকে আজকের শাকিব আল হাসান বানিয়েছে। আমি যখন দেশের জন্য ক্রিকেটের মাঠে ব্যাট ধরেছি, তখন আমার সঙ্গে ব্যাট ধরেছেন আপনারা সবাই। গ্যালারি থেকে আপনাদের চিৎকার, আপনাদের সমর্থন আমাকে ভালো খেলার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ক্রিকেট ম্যাচের দিন চায়ের দোকানে টেলিভিশনের সামনে উপচে াাপড়া ভিড় আমাকে শক্তি যুগিয়েছে। আমি জিতলে, আপনারা সবাই জিতেছেন। আমি হেরে গেলে, হেরে গেছেন আপনারা সবাই!’