পাঁচবারের সাংসদ, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের ‘সেরা’ নেতা তিনি। এক মেয়ের বাবাও তিনি। স্বভাবতই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে যে ঘটনা ঘটেছে, তা একজন প্রাক্তন জনপ্রতিনিধি এবং এক মেয়ের বাবা হিসেবে তাঁকে যে নাড়িয়ে দিয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের (স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া) ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীকে সবথেকে বেশি বেদনা দিয়েছে যে বিষয়টা, সেটা হল যে এই পাশবিকতার ঘটনা ঘটেছে কলকাতায়। সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কলামে আক্ষেপের সুরে অধীর জানিয়েছেন, যে শহরে এরকম ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটল, সেই শহরই মহিলাদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দেশকে দিশা দেখিয়েছিল। অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক আগেই কলকাতার মহিলারা বাইরের দুনিয়ায় নিজেদের ছাপ রেখে দিয়েছেন। তাঁরা এগিয়ে এসেছেন। নিজেদের অধিকার দখল করেছেন।
‘মহিলাদের সম্মান প্রদর্শনের দীর্ঘ ইতিহাস আছে কলকাতায়’
ওই কলামে অধীর লিখেছেন, ‘অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গ থেকে টানা পাঁচবার সংসদের নিম্নকক্ষের জনপ্রতিনিধি এবং এক মেয়ের অভিভাবক হিসেবে ব্যক্তিগত স্তরে আমায় সবথেকে বেশি বেদনা দিয়েছে যে বিষয়টা, সেটা হল যে এমন একটা শহরে ওই ঘটনা ঘটেছে, যে শহরে মহিলাদের সম্মান প্রদর্শনের দীর্ঘ ইতিহাস আছে।’ সেই প্রসঙ্গে মাতঙ্গিনী হাজরার কথাও উল্লেখ করেন অধীর।
তবে অধীরের দাবি, কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের এই যে অধঃপতন ঘটেছে, সেটা একদিনেই হয়ে যায়নি। বরং গত কয়েক ধরে ধীরে-ধীরে পদস্খলন হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। সেই প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, সম্প্রতি রাজ্যে এমন অনেক যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে, যে ঘটনার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকদের যোগ আছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
'পার্টি অফিস ও থানার মধ্যে রেখা মুছে গিয়েছে'
অধীর অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের রাজত্ব চলছে। প্রায় প্রতিটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানকে 'হাইজ্যাক' করে নিয়েছে তৃণমূল। শাসক, জনপ্রতিনিধি, আইনরক্ষক, অপরাধীদের মধ্যেই যোগসাজশ তৈরি হয়েছে। দলীয় কার্যালয় এবং থানার মধ্যে যে রেখা থাকে, সেটা যখন মুছে যায়, তখন মানুষ এবং রাজ্যের মধ্যে যে সামাজিক যোগসূত্র থাকে, সেটা ভেঙে পড়ে বলে দাবি করেন অধীর।
মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রায় আশ্বস্ত হননি মানুষ, দাবি অধীরের
আর সেই কারণেই আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার দোষীর মৃত্যুদণ্ডের দাবি তুলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পদযাত্রা করলেও মানুষ আশ্বস্ত হননি বলে দাবি করেছেন অধীর। প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ দাবি করেন, সুরক্ষা নিয়ে মানুষ আশ্বস্ত হতে পারেননি। দেখতে পাননি কোনও আশা।