কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলেক অপসারণ চেয়ে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অশোক দেব যে চিঠি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে, তার বিরোধিতা করলেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলেও খাতায় কলমে তিনি এখনও তৃণমূলেরই সাংসদ। সেই সঙ্গে অধিকারী বাড়ির সদস্য। অধিকারী বাড়ির সঙ্গে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সম্পর্ক মোটেও ভালো নয়। এই পরিস্থিতিতে তমলুকের সাংসদের এই বক্তব্য তৃণমূল বিরোধী অবস্থানকেই আরও স্পষ্ট করছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারনা।তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক হচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বা নিম্ন আদালত, কোনও ক্ষেত্রেই এটা ঠিক নয়। অশোক দেবকে আমি সম্মান করি। কিন্তু যেভাবে তিনি চিঠিটি লিখেছেন, সেটা ঠিক হয়নি।’ প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ করে কেন দিব্যেন্দু অধিকারী এই বক্তব্য রাখতে গেলেন? এর পিছনে কী কারণ থাকতে পারে? রাজনৈতিক মহলের মতে, যে প্রেক্ষাপটে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক অশোক দেব সু্প্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন, তার পিছনে রয়েছে সেই নন্দীগ্রাম। নন্দীগ্রামে ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে গিয়েছেন, সেই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির হয়ে ভোটে লড়েছেন দিব্যেন্দুর ভাই শুভেন্দু অধিকারী, যিনি এখন রাজ্যের বিরোধী দলনেতাও বটে। নন্দীগ্রাম মামলা বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাস থেকে সরিয়ে অন্য কোনও বিচারপতির বেঞ্চে দেওয়ার আবেদন করেছিলেন মমতা। কিন্তু তাঁর সেই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। এরপরই বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে চিঠি পাঠিয়েছিলেন বজবজের বিধায়ক অশোক দেব। এই পরিস্থিতিতে তমলুকের সাংসদের এই বক্তব্য কী বিশেষ কোনও বার্তা বহন করছে, সেই দিকেই নজর রাখছে রাজনৈতিক মহল।জানা গিয়েছে, দিব্যেন্দুর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক যে তলানিতে এসে ঠেকেছে, তার প্রমাণ মিলেছে। ইতিমধ্যে জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি দিয়ে দিব্যেন্দুর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন। দল সঙ্গে তাঁর যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেই কথা বিলক্ষণ বোঝেন দিব্যেন্দু। সেই বোঝেন বলেই কী এখন থেকে অন্য দলে যাওয়ার ব্যাপারে ছক কষছেন দিব্যেন্দু, সেই প্রশ্নই এখন মাথাচাড়া দিচ্ছে। যেহেতু তাঁর ভাই শুভেন্দু নিজেই বিজেপিতে ও বাবা শিশির অধিকারীরও তৃণমূলের সঙ্গে দুরত্ব তৈরি হচ্ছে, তাই দিব্যেন্দুর দলবদলের সম্ভাবনাও ক্রমেই উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।