ভয়াবহ দুর্ঘটনার ৫১ ঘণ্টা পরে প্রথম ট্রেন চলল ওড়িশার বালাসোরের বাহানগা রেল স্টেশনের অভিশপ্ত লাইনে। প্রথমে ডাউন লাইন দিয়ে ঢিমেগতিতে একটি মালগাড়ি বেরিয়ে যায়। সেইসময় ভারতীয় রেলের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্তার সঙ্গে লাইনের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। কোনওরকম গোলযোগ ছাড়াই ডাউন লাইন দিয়ে ওই মালগাড়ি যাওয়ার পর মালবাহী ট্রেনের উদ্দেশে হাত নাড়েন তিনি। সেইসঙ্গে অভিশপ্ত ট্র্যাককে হাতজোড় করে প্রণাম করেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকেও ধন্যবাদ জানাতে দেখা যায় তাঁকে।
যে লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে রবিবার রাতে ঈশ্বরকে অশেষ ধন্যবাদ জানান রেলমন্ত্রী, সেই লাইনই শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। সেই অভিশপ্ত সন্ধ্য়ায় বাহানগা বাজার রেল স্টেশনের কাছে আকরিক লোহা বোঝাই মালগাড়িকে ধাক্কা মেরেছিল আপ শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। যে ট্রেন ঘণ্টায় প্রায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে ছুটে যাচ্ছিল। মালগাড়ি আকরিক লোহা এবং করমণ্ডলের প্রবল গতির জেরে দুর্ঘটনার অভিঘাত ভয়াবহ হয়। লাইনচ্যুত হয়ে যায় চেন্নাইগামী করমণ্ডলের এক্সপ্রেসের ২১ টি কোচ। কয়েকটি ছিটকে গিয়ে অন্য লাইনে পড়ে।
যে লাইনে ততক্ষণে চলে আসে ডাউন SMVT বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কোচে ধাক্কা মারে সেই ট্রেন। কয়েকটি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে যায়। তার জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়। দুমড়ে-মুচড়ে যায় একাধিক কোচ। দুর্ঘটনার অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে প্রায় ৩০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন ১,১০০-র বেশি মানুষ। তাঁরা ওড়িশার বিভিন্ন হাসপাতালে ভরতি আছেন।
চারিদিকে সেই হাহাকার, আর্তনাদ, কান্নার মধ্যেই শনিবার দুপুর থেকে লাইনের কাজ শুরু করে রেল কর্তৃপক্ষ। খোদ রেলমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে প্রায় ১,০০০ জন শ্রমিক যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। সকালে প্রথমে ডাউন লাইন ঠিক করা হয়। সন্ধ্যার দিকে আপ লাইনও ঠিক করে ফেলেন শ্রমিকরা। তারপর রাত ১০ টা নাগাদ ডাউন লাইনে মালগাড়ি চালিয়ে ট্রায়াল দেওয়া হয়। ওই মালগাড়ি যাওয়ার পরেই হাত নাড়তে থাকেন রেলমন্ত্রী। তারপর অভিশপ্ত লাইনকে দেখে হাতজোড় করে প্রণাম করেন। ঈশ্বরকেও ধন্যবাদ জানান রেলমন্ত্রী - যিনি মন্ত্রী নন, বরং শেষ ৫১ ঘণ্টায় যেন রেলের সাধারণ কর্মীদের সহকর্মী হয়ে উঠেছিলেন।
ডাউন লাইনে ট্রায়াল রানে সাফল্য পাওয়ার পর রেলের কর্তা এবং শ্রমিকদের পেপটক দেন রেলমন্ত্রী। নিজে লাইমলাইট না কেড়ে নিয়ে কিছুটা মহেন্দ্র সিং ধোনির ধাঁচেই ‘টিম’-র প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, 'সবাই খুব ভালো কাজ করেছেন। পুরো টিম খুব ভালো কাজ করেছে। যা হয়েছে, সেজন্য আমরা দুঃখিত। যাঁরা পরিজনদের হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য শোকাহত আমরা। কিন্তু আমাদের দুর্ঘটনার মূল কারণে পৌঁছাতে হবে। দোষীদের কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন। যে দ্রুততার সঙ্গে আপনারা কাজ করেছেন, সেজন্য পুরো টিমকে ধন্যবাদ।'
(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক