যাত্রাপথেও কর্তব্য অবিচল রইলেন তিন চিকিৎসক। তাঁদের তৎপরতা ও কর্মদক্ষতায় প্রাণ বাঁচল বিমানে সওয়ার এক সহযাত্রীরা। করতে হল না জরুরি অবতরণও।
শনিবার এমনই এক মানবিক ঘটনার সাক্ষী থাকলেন বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতাগামী একটি ইন্ডিগো বিমানের যাত্রীরা। দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ওই বিমানেরই এক যাত্রী উড়ান শুরু হওয়ার পর মাঝ আকাশে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
সেই সময় বিমানের যাত্রীদের মধ্যে থাকা তিনজন চিকিৎসক তৎক্ষণাৎ নিজেদের কর্তব্য পালন করতে এগিয়ে আসেন। তাঁরাই চল্লিশের কোটায় থাকা, অসুস্থ ওই যাত্রীর প্রাথমিক চিকিৎসার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন।
ফলত, বিমানটিকে ঘুরিয়ে বেঙ্গালুরু নিয়ে যেতে হয়নি। এড়ানো গিয়েছে জরুরি অবতরণের মতো পরিস্থিতিও। বদলে নির্দিষ্ট রুট অনুসারে ওই বিমান কলকাতা বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন অনুসারে, ইন্ডিগোর ওই বিমানে সওয়ার ছিলেন ডা. এম এম শমিম। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী ডা. নাজরিন পরভিন। এছাড়াও ওই বিমানেই ছিলেন আরও একজন শল্য চিকিৎসক। যাঁর নাম জানা না গেলেও তিনি বেঙ্গালুরুর এমএস রামাইয়া হাসপাতালে কর্মরত বলে জানা গিয়েছে।
সূত্রের দাবি, এই তিনজন ছিলেন বলেই শনিবার ওই বিমানটিকে বেঙ্গালুরু ফেরত যেতে হয়নি বা ভুবনেশ্বরে জরুরি অবতরণও করাতে হয়নি। উল্লেখ্য, ওই বিমানে সেদিন সব মিনিয়ে ২০০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিলেন।
শনিবার সকালে ফ্লাইট ৬ই ৫০৩ বেঙ্গালুরুর বিমানবন্দর থেকে সকাল ১০টা বেজে ৪২ মিনিটে উড়ান শুরু করে। বিমানটি ওই দিন নির্ধাধিত সময়ের থেকে প্রায় ২০ মিনিট দেরিতে সফর শুরু করেছিল।
উড়ান শুরু হওয়ার প্রায় একঘণ্টা পর হঠাৎই বিমানে থাকা এক যাত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা এবং শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর গুরুতর লিভারের সমস্যা রয়েছে। তার জেরেই ওই ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট এবং বমি শুরু হয়। বিমানে ওই ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর ছেলেও ছিলেন।
বিমানে সওয়ার এক যাত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অসুস্থ ওই ব্যক্তি ১৬ নম্বর সারিতে বসেছিলেন। হঠাৎই তিনি রক্ত বমি করতে শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে বিমানের এক কর্মী যাত্রীদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, বিমানে কোনও চিকিৎসক রয়েছেন কিনা। এই ঘোষণা শুনেই ওই তিন চিকিৎসক এগিয়ে আসেন।
এই প্রসঙ্গে ডা. পরভিন পরবর্তীতে জানান, ওই ব্যক্তি রক্তবমি করছিলেন। ওঁর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। ওঁর রক্তচাপও ক্রমশ কমছিল। তবে, বিমানে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল। তার মাধ্যমেই অসুস্থ ব্যক্তিকে তৎক্ষণাৎ অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে, তাঁর স্যালাইনও চালু করা হয়। বিমানে সমস্ত ব্যবস্থা থাকায় রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করতে কোনও সমস্যা হয়নি। এরপর ওই ব্যক্তির শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়।
ইতিমধ্যে, দুপুর ১টা বেজে ২৪ মিনিটে বিমান কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে যায়। সেখানে ইন্ডোগোর নিজস্ব মেডিক্যাল টিম তৈরি ছিল। বিমান অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গে ওই অসুস্থ ব্যক্তিকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় বিমানে উপস্থিত অধিকাংশ যাত্রীই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তাঁরা সকলেই সংশ্লিষ্ট তিন চিকিৎসকের ভূমিকায় অত্যন্ত খুশি। সহযাত্রীরা কর্তব্যপরায়ণ তিন চিকিৎসককে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন।