কেন্দ্রীয় বাজেট বক্তৃতায় আবারও নজর কাড়ল অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের পরনে থাকা শাড়ি। শনিবার তিনি যে শাড়িটি পরে সংসদে পৌঁছন, তা ছিল মধুবনী শিল্পকলার প্রতীক।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এই শাড়িটি আসলে একটি উপহার। যে উপহার তাঁকে দিয়েছেন একজন শিল্পী। তাঁর নাম দুলারী দেবী। তিনি পদ্মশ্রী সম্মানে একজন ভূষিতা মধুবনী শিল্পী।
দুলারী আদতে বিহারের মানুষ। সম্প্রতি মধুবনীতে আয়োজিত একটি ঋণ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন নির্মলা। সেই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল মিথিলা আর্ট ইনস্টিটিউটে। সেখানেই দেশের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান দুলারী।
সেই সম্মুখ সাক্ষাতের সময়েই অর্থমন্ত্রীকে একটি শাড়ি উপহার দেন শিল্পী। এবং তিনি নির্মলা সীতারামনকে অনুরোধ করেন, যদি তিনি বাজেট পেশের দিন এই শাড়িটি পরেন, তার জন্য।
এদিন দুলারী দেবীর কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দুলারী দেবী জানান, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে তাঁর উপহার দেওয়া শাড়িটি পরে বাজেট পেশ করতে দেখে তিনি আপ্লুত, ভীষণ খুশি।
দুলারী বলেন, 'সীতারামনজি মিথিলা চিত্রকলা সংস্থানে এসেছিলেন। সেখানেই আমি তাঁকে আমার তৈরি করা ওই শাড়িটি উপহার দিই। এই শাড়িকে বাংলোরি সিল্ক বলে। আমি ওঁকে শাড়িটি পরার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। শাড়িটি তৈরি করতে একমাস সময় লেগেছিল। আজ আমি ওঁকে ওই শাড়ি পরে থাকতে দেখে খুব খুশি হয়েছি। এটা বিহার এবং সারা দেশের কাছেই গর্বের বিষয়।'
প্রসঙ্গত, যে শাড়ি নিয়ে এত কথা হচ্ছে, সেটি অত্যন্ত মার্জিত। অফ-হোয়াইট রঙের সেই শাড়িতে মানানসই সোনালি রঙের চওড়া পাড় ও নানা হালকা রঙের কারুকাজ রয়েছে। এই শাড়ির সঙ্গে একটি লাল রঙের ব্লাউজ এবং শাল পরেছিলেন নির্মলা সীতারামন।
তাঁর হাতে ছিল বাজেটের 'বহি-খাতা'। যা আদতে একটি ট্যাব। সেটি মোড়া ছিল লাল কাপড়ে। তাতে ছিল সোনালী রঙের অশোকস্তম্ভ, যা ভারতের জাতীয় প্রতীক।
প্রসঙ্গত, যে শিল্পী এই শাড়ি তৈরি করেছেন, সেই দুলারী দেবীর জীবনকাহিনিও যথেষ্ট অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি অতি সাধারণ জেলে পরিবারের সন্তান। জেলে বা মৎস্যজীবীরা সাধারণত ছবি আঁকার মতো কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন না।
কিন্তু, দুলারী কর্পুরি দেবী নামে এক মধুবনী শিল্পীর অধীনে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। আর সেখান থেকেই শিল্পের প্রতি তাঁর ঝোঁক তৈরি হয়।
মাত্র ১৬ বছর বয়সী দুলারীকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। তিনি তাঁর সন্তানকেও হারিয়েছিলেন। পেট চালাতে পরিচারিকার কাজ করেছেন। তারপরও হার মানেননি দুলারী। চালিয়ে গিয়েছেন শিল্পচর্চা। যা তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান পর্যন্ত এনে দিয়েছে।