আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (IMF) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে নির্বাচিত হলেন ডঃ গীতা গোপীনাথ। গত তিন বছর ধরে আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ তিনি। গীতা আইএমএফের ইতিহাসে প্রথম মহিলা যিনি এই পদ সামলেছেন। আগামী বছরের জানুয়ারি পূর্বসূরি জিওফ্রে ওকামোটোর থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণকারী গীতা গোপীনাথ কর্ণাটকের মাইসুরুতে বড় হয়েছেন। তার বাবা টিভি গোপীনাথের মতে, গীতা খেলাধুলায় আগ্রহী ছিলেন। গিটার শিখেছিলেন। এবং একটি ফ্যাশন শোতেও অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ার জন্য সে সব ছেড়ে দিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালের এমনই এক ডিসেম্বরে কলকাতায় জন্ম গীতা গোপীনাথের। তবে বড় হয়েছেন কর্নাটকের মাইসুরুতে। তাঁর বাবা গোপীনাথ 'রাইতা মিত্র' নামে এক কৃষক সংগঠনের প্রধান ছিলেন। তাঁর কথায়, 'গীতা ছোটবেলায় খেলাধুলায় আগ্রহী ছিল, গিটার শিখেছিল এবং একবার ফ্যাশন শোতেও অংশ নিয়েছিল। তবে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ার জন্য সে সব ছেড়ে দিয়েছিল।'

'যে মেয়েটি ক্লাস সেভেন পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ স্কোর করত, সে হঠাত্ ৯০ শতাংশ পেতে শুরু করেছিল। তবে আমি কখনই আমার সন্তানদের পড়াশোনা করতে বলিনি। কোনও জোরও করতাম না। এর বন্ধুরাও আমাদের বাড়িতে আসত, একসঙ্গে পড়াশোনা করত, খেলত। তবে স্কুলে পড়ার সময়ে দুই মেয়েই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ঘুমিয়ে পড়ত। ভোর ভোর উঠে পড়তে বসে যেত,' ২০১৮-য় দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে জানান গোপীনাথ।
'স্কুলের পর, গীতা মাইসুরুর মহাজানা পিইউ কলেজে ভরতি হয়েছিল। তার মার্কস ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিকেল লাইনে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু ওর ঝোঁক অন্যদিকে। অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) করার সিদ্ধান্ত নিল,' জানান তিনি। প্রথমে সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনাই করেছিলেন গীতা। দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজ ফর উইমেন (এলএসআর)-এ পর পর তিন বছরই শীর্ষস্থানে ছিলেন। এর জন্য স্বর্ণপদকও পান তিনি। তবে কলেজ শেষে সিভিল সার্ভিসের পরিকল্পনা বাতিল করেন। তার বদলে এমবিএ-র প্রস্তুতি শুরু করেন।

কিন্তু এরই মাঝে গীতা দিল্লি স্কুল অফ ইকোনমিক্সে যোগ দেন। সেখানে তাঁর সহপাঠী ইকবাল সিং ধালিওয়ালকেই পরে তিনি বিয়ে করেন। দুর্দান্ত নম্বরের কারণে তাঁর পক্ষে স্কলারশিপ পাওয়া কোনও ব্যাপার ছিল না। সিয়াটেলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের পিএইচডি প্রোগ্রামে যোগদান করেন। ২০০১ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি পান। এরপর তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত বুথ স্কুল অফ বিজনেসে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। ২০০৫ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।
২০১৬-১৮ সাল তিনি কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন এবং কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের জন্য G-20 বিষয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপদেষ্টা গ্রুপের সদস্য হিসাবেও কাজ করেছেন। ২০২১ সালে ফিনান্সিয়াল টাইমসে বছরের ২৫ জন সবচেয়ে প্রভাবশালী মহিলার একজন ছিলেন তিনি। তিনি ভারত সরকার কর্তৃক প্রবাসী ভারতীয় সম্মানও পান। এটি প্রবাসী ভারতীয়দের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান।