হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই যেখানে বাংলাদেশে লাগাতার হিন্দুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠছে, এবার সেই দেশের মাটিতে ঘটল 'হিন্দু সেজে ডাকাতির চেষ্টা'র ঘটনা!
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যেই টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্য়ে আটজনই মহিলা!
বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) তরফে জানানো হয়েছে, গোপন সূত্রে আসা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েই ওই ১০ জনকে পাকড়াও করা হয়। ধৃতরা সকলেই ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলেও ডাকাতি করার জন্য এক বিশেষ 'ছদ্মবেশ' ধারণ করেছিল!
কেমন সেই ছদ্মবেশ? বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসন ও সংবাদমাধ্যমের দাবি অনুসারে, ডাকাতি করার জন্যই ধৃত আট মহিলা হিন্দু গৃহবধূদের মতো শাড়ি পরেছিল। দুই হাতে গলিয়ে নিয়েছিল শাঁখা আর পলা। যা হিন্দু বিবাহিতা মহিলাদের খুবই চেনা বেশ।
বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তরফে অভিযুক্তদের যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ধৃত ওই আট মহিলার মাথায় সিঁথি কাটা না থাকলেও বেশ খানিকটা ধ্যাবড়া করে সিঁদুর লাগানো আছে!
পুলিশের বক্তব্য, ডাকাতির সময় কেউ যদি তাদের দেখেও ফেলত, তাহলেও হিন্দু ভেবে ভুল করত। ফলত, ডাকাতির তদন্ত ভুল পথে চালিত হত। আর সেই কারণেই জেনেবুঝে হিন্দু গৃহিণীদের মতো সেজেছিল ধৃতরা! কিন্তু, ডাকাতি করা আগেই পুলিশ তাদের প্রথমে আটক ও পরে গ্রেফতার করে।
সোহাগপাড়া এলাকা থেকে তাদের পাকড়াও করা হয়। সেই অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিবি (উত্তর)-এর ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক এবিএমএস দোহা। জানা গিয়েছে, ধৃতরা তাদের এই কুকর্ম করার জন্য একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেছিল। সেটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে গ্রিল কাটার-সহ ডাকাতির অন্যান্য সরঞ্জাম।
ধৃতদের মধ্যে তসলিমা (৩২), আসমা বেগম (৩০), আলেয়া (৩৭), সোনিয়া আক্তার (২১), রাফিয়া আক্তার (২৬) ও সুরাত মিঞাঁর (৩৮) বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ধরমণ্ডল গ্রামে। এছাড়াও, আকলিমা বেগম (৪০) একই উপজেলার সরাইল, জুলেখা বেগম (৩১) হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা এবং সেলিম সরকার ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কুশমাইল টেকিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
তদন্তে গোয়ান্দা বিভাগ জানতে পেরেছে, শুধুমাত্র ডাকাতি করার উদ্দেশেই ছদ্মবেশ ধরে গাজিপুরের সালনা থেকে মির্জাপুর এসেছিল অভিযুক্তরা।
পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতরা স্বীকার করেছে, তারা আগে থেকে রেইকি করে তবে 'অপারেশন' চালাত এবং নিজেদের পরিচয় গোপন করার জন্য কখনও হিন্দু, আবার কখনও অন্য কোনও ধর্মের মানুষের মতো সাজগোজ করত।
পুলিশ এখন দেখছে, এই ডাকাত দলটির সঙ্গে আরও কোনও ব্যক্তি যুক্ত রয়েছে কিনা। থাকলে তাদেরও পাকড়াও করা হবে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা বিভাগ।