আমেরিকার বাজারে আত্মপ্রকাশ করেই 'চূড়ান্ত সাফল্য' অর্জন করেছে ভারতের দুগ্ধ পণ্যজাত সামগ্রী প্রস্তুতকারী সংস্থা 'আমূল'। তাই এবার ইউরোপের বাজার ধরতে তোড়জোড় শুরু করেছে সংস্থার কর্তৃপক্ষ।আন্তর্জাতিক স্তরে আমূলের সাফল্যের কথা তুলে ধরে, তাঁদের এই সিদ্ধান্ত সর্বসমক্ষে এনেছেন আমূল এবং গুজরাত কোঅপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশন লিমিটেড (জিসিএমএমএফ)-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়েন মেহতা। তাঁর মতে, আমূল যদি ইউরোপের বাজারেও পণ্য সরবরাহ করতে পারে, তাহলে তা হবে এক ঐতিহাসিক ঘটনা।ড. ভার্গিস কুরিয়েনের ১১তম স্মৃতিসভায় 'আমূল মডেল: লক্ষ-লক্ষ মানুষের জীবন বদল' শীর্ষক একটি আলোচনায় অংশ নিয়ে জয়েন বলেন, 'এই মুহূর্তে ভারতই হল বিশ্বের বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদক দেশ। আগামী বছরগুলিতে, সারা পৃথিবীতে যত দুধের প্রয়োজন হবে, আমরাই তার এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদন করব। আপাতত সেটাই আমাদের লক্ষ্য।'উল্লেখ্য, শনিবার একটি বেসরকারি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই মঞ্চে বক্তৃতা করার সময় জয়েন বলেন, 'দুগ্ধজাত পণ্য কেবলমাত্র একটি ব্যবসা নয়। এটি গ্রামীণ ভারতের একটি অন্যতম জীবনরেখা।'এরপরই জয়েন জানান, সম্প্রতি আমেরিকায় আমূলের পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেই উদ্যোগ 'চূড়ান্ত সফল' হয়েছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি, জয়েন এটাও উল্লেখ করেন, তাঁরা এবার ইউরোপের বাজার ধরতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। যা এর আগে কখনও করা হয়নি।সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আমূল কর্তৃপক্ষ ক্রেতাদের প্রয়োজন অনুসারে তাদের পণ্য়ের সম্ভার যেমন বাড়িয়ে চলেছে, তেমনই সংস্থায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা ও উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।একইসঙ্গে, ক্রেতারা প্রত্যেকে যাতে রাসায়নিকবিহীন সম্পূর্ণ জৈব পণ্য হাতে পান এবং তা যাতে প্রোটিনের গুণে ভরপুর থাকে, সেদিকেও সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রেখেছে আমূল কর্তৃপক্ষ। এই প্রসঙ্গে আমূলের প্রতিষ্ঠাতা ড. কুরিয়েনের দূরদৃষ্টি এবং তাঁর উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন জয়েন।জয়েন বলেন, 'যদি ভারতের কাছে বিশ্ববাসীকে দেওয়ার মতো কোনও উপহার থাকে, তাহলে তা হল সমবায় কর্মপদ্ধতি। যা ড. কুরিয়েন আমাদের উপহার দিয়েছিলেন। সমবায় কর্মপদ্ধতির উপর তাঁর যে বিশ্বাস ছিল, তা ভারতজুড়ে এক নয়া বিপ্লব ঘটিয়েছিল।'জয়েন আরও জানান, প্রত্যেক দিন আমূল ৩১০ লক্ষ লিটারেরও বেশি দুধ সংগ্রহ করে। ভারতের নানা প্রান্তে অবস্থিত ১০৭টি দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন কেন্দ্রের মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ দুধ সংগ্রহ করা হয়। যা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ৫০ রকমেরও বেশি দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করা হয়। প্রত্যেক বছর এইসব পণ্যের ২ হাজার ২০০ কোটি প্যাকেট বিক্রি করা হয়!বর্তমানে আমূলের বার্ষিক টার্নওভার ৮০ হাজার কোটি টাকা। যার জেরে ভারতীয় এই সংস্থা বিশ্বের অন্যতম প্রধান দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদক সংস্থায় পরিণত হয়েছে। ৩৬ লক্ষ কৃষকের কাছে এই সংস্থার মালিকানা রয়েছে।এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত ড. কুরিয়েনের মেয়ে নির্মলা কুরিয়েনও। তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে তাঁর বাবা এক কঠিন স্বপ্ন দেখার এবং তা বাস্তবায়িত করতে উদ্যোগ শুরুর সাহস দেখিয়েছিলেন।যে দেশের মানুষ ভালো করে দুধ খেতে পায় না, সেই দেশকেই দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর করতে চেয়েছিলেন ড. কুরিয়েন। আর আজ ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদক দেশে পরিণত হয়েছে।