ছবির মতো সাজানো-গোছানো অত্যাধুনিক দেশ জাপানের তোচিগি মহিলা সংশোধনাগার। কিছু দিন আগে পর্যন্ত এখানেই থাকতেন ৮১ বছরের আকিও। বেশ অনেকটা সময় জেলবন্দি থাকতে পেরে বৃদ্ধা আকিও বেজায় খুশি ছিলেন! আকিওর এই আনন্দের নেপথ্য কারণ যতটা উদ্বেগের, ততটাই যন্ত্রণার। যা স্পষ্ট ভাষায় বলছে, ক্রমশ বুড়িয়ে যাওয়া জাপানের একলা প্রবীণরা ভালো নেই মোটেই। যেমন - জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ভালো নেই আকিও-ও!
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এ এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দাবি করা হয়েছে, চুরির দায়ে জেলবন্দি ছিলেন ৮১ বছরের আকিও। এটা তাঁর দ্বিতীয় অপরাধ। এর আগেও চুরি করে ধরা পড়েছিলেন তিনি। তখন তাঁর বয়স ষাটের কোটায়। সেবার খাবার চুরি করেছিলেন আকিও।
পরবর্তীতে সাজা শেষ হওয়ার পর আকিও জেল থেকে ছাড়া পান। কিন্তু, পেনশনবাবদ সামান্য অর্থই রোজগার করেন আকিও। পরিবারের কোনও সদস্য তাঁর তাঁকে সাহায্য করেন না। এভাবে বেঁচে থাকাটা আকিও কাছে মৃত্যুর থেকেও কঠিন! তাই, তিনি আবার বেরিয়ে পড়েন - চুরি করতে! এবারও ধরা পড়েন। জেলে বন্দি হন।
আকিওকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বৃদ্ধা জানান, 'আমার আর্থিক পরিস্থিতি যদি ভালো এবং স্থিতিশীল হত, আমার যদি একটা স্বাচ্ছন্দ্য়ে ভরা জীবন থাকত, তাহলে আমি মোটেই এসব করতাম না।'
আকিও জানিয়েছেন, তাঁর এক ছেলে রয়েছে। তাঁর বয়স ৪৩ বছর। জেলে ঢোকার আগে পর্যন্ত সেই সন্তানের সঙ্গেই থাকতেন বৃদ্ধা। কিন্তু, ছেলে তাঁর সঙ্গে থাকতে চান না। একথা বহুবার মাকে বলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, তিনি মায়ের কাছ থেকে অন্যত্র চলে যেতে চান।
নিজের জীবনের করুণ পরিস্থিতির কথা উঠতেই আকিও বলেন, এত দূর এসে 'আমার মনে হয়, আমার বেঁচে থাকার কোনও অর্থই হয় না। আমি শুধু মরে যেতে চাই।'
গত বছরের অক্টোবর মাসে আকিওকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তিনি সর্বক্ষণ লজ্জিত এবং শঙ্কিত থাকেন। তিনি বুঝে উঠতে পারেন না, তাঁর ছেলে তাঁকে নিয়ে কী ভাববেন!
বৃদ্ধা আকিও অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে বলেন, 'একলা থাকা খুব কঠিন একটা কাজ। আমি যে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য়ে জড়িয়ে গিয়েছি, এর জন্য খুব লজ্জিত বোধ করি।'
জাপানের সরকারি পরিসংখ্য়ান বলছে, আকিও যা করেছেন, তা কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। বরং, বর্তমানে জাপানের জেলগুলিতে বন্দি প্রবীণ মহিলা আবাসিকদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি আবাসিক আকিওর মতোই একই কারণে চুরি করেছেন! তথ্য বলছে, এই সংশোধনাগারগুলিতে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মহিলা বন্দিদের সংখ্য়া ২০০৩ সালের তুলনায় বর্তমানে চারগুণ বেড়ে গিয়েছে।
তোচিগি মহিলা সংশোধনাগারের এক আধিকারিক - তাকাইয়োশি শিরানাগা বলেন, 'অসংখ্য মহিলা বন্দি মনে করেন, বাইরের দুনিয়ায় একা মরার থেকে জেলের ভিতর বন্দি থেকে মরা ঢের ভালো!'