অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি বছর ২৬ মে জাতীয় দুঃখ দিবস পালিত হয়। এই দিনটি 'স্টোলেন জেনারেশনস' নামে পরিচিত। কারণ হিসাবে জানা যায় যে উনিশ এবং বিংশ শতাব্দীতে, অস্ট্রেলিয়ান সরকার হাজার হাজার আদিবাসী এবং টরেস স্ট্রেইট দ্বীপপুঞ্জের শিশুকে তাদের পরিবার থেকে জোরপূর্বক আলাদা করে। এই শিশুদের সরকারি প্রতিষ্ঠান, মিশনারি হোম অথবা শ্বেতাঙ্গ পরিবারগুলির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল সভ্য সমাজে তাদের নিয়ে আসা, কিন্তু এটি তাদের সংস্কৃতি, এবং পরিচয় কেড়ে নয়। তাই ২৬ মে সেইসব শিশুদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত, যারা নিজ নিজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এটি এমন একটি দিন যখন সমগ্র জাতি এই ভয়াবহ ভুলের জন্য ক্ষমা চায় এবং ভবিষ্যতে উন্নতির প্রতিশ্রুতি দেয়।
কবে প্রথমবারের মতো জাতীয় দুঃখ দিবস পালিত হয়েছিল
১৯৯৭ সালে, 'ব্রিংগিং দেম হোম' প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেখানে চুরি যাওয়া প্রজন্মের গল্প এবং বেদনা তুলে ধরা হয়। এর পর, ১৯৯৮ সালের ২৬ মে প্রথমবারের মতো জাতীয় দুঃখ দিবস পালিত হয়, যার মাধ্যমে সমগ্র দেশ প্রকাশ্যে এই অন্যায়কে মেনে নেয় এবং ক্ষমা চায়। মনে রাখবেন, ক্ষমা চাওয়া কেবল একটি শব্দ নয়, এটি একটি পদক্ষেপ যা ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণ করে।
এই দিনের তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য
- এই দিনটি আত্ম-বিশ্লেষণ এবং অনুতাপের প্রতীক।
- এটি সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সমতাকে এগিয়ে নেওয়ার একটি মাধ্যম।
- সরকার এবং জনসাধারণ উভয়েরই দায়িত্ব প্রদর্শন করে।
- ভবিষ্যতে এই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি না করার জন্য এটি একটি সতর্কীকরণ।
জাতীয় দুঃখিত দিবস সম্পর্কে আকর্ষণীয় তথ্য
- ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে আদিবাসীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিল।
- জাতীয় দুঃখ দিবসের দিনে, অস্ট্রেলিয়ায় জার্নি অফ হিলিং নামে একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
- অনেক স্কুল, কলেজ এবং প্রতিষ্ঠান এই দিনে বিশেষ সেমিনার এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
- এটি জাতীয় নিরাময় দিবস নামেও পরিচিত।
প্রসঙ্গত, জাতীয় দুঃখ প্রকাশ দিবস এমন একটি দিন, যা কেবল অতীতের ভুল স্বীকার করে না। বরং এটি আমাদের মানবতা, সহানুভূতি এবং সংস্কারের পথে চলতেও অনুপ্রাণিত করে। এই দিনটি আমাদের শেখায় যে, 'সরি' বলার মধ্যে কোনও দুর্বলতা নেই, বরং এটিই সবচেয়ে বড় শক্তি।