হার্ট অ্যাটাক, হঠাৎ করে আসে। অথচ প্রায়শই মানুষ এর লক্ষণগুলি উপেক্ষা করে। কিন্তু আচমকা যখন হার্ট অ্যাটাক হয়, অনেক দেরি হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, হার্ট অ্যাটাকের আগে শরীর কিছু সংকেত দিতে শুরু করে, যা সময়মতো শনাক্ত করা গেলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। বিশেষ বিষয় হলো, আমাদের চোখ ৩০ দিন আগে থেকেই হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত দিতে পারে। এই বিষয়টি সম্পর্কে আগে থেকে জেনে রাখা জরুরি।
হার্ট অ্যাটাকের প্রধান ৪ লক্ষণ যা চোখ দিয়েই বোঝা যায়
নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি উপেক্ষা করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। সময়মতো তাদের শনাক্ত করে চিকিৎসা করলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।
১. চোখের পাতার চারপাশে হলুদ বা সাদা দাগ তৈরি হওয়াকে চিকিৎসা ভাষায় জ্যানথেলাসমা বলা হয়। এই অবস্থা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি নির্দেশ করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। জ্যানথেলাসমা সাধারণত চোখের চারপাশে ছোট ছোট চর্বি জমার মতো দেখা যায়। এই স্তরগুলি হৃদপিণ্ডের ধমনীতে বাধা নির্দেশ করে, যা হার্ট অ্যাটাকের মতো গুরুতর অবস্থার কারণ হতে পারে। যদি আপনি এই ধরনের লক্ষণগুলি লক্ষ্য করেন, তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং আপনার কোলেস্টেরল পরীক্ষা করুন।
২. চোখের মণির চারপাশে ধূসর বা সাদা বৃত্ত গঠনও হৃদরোগ সম্পর্কিত সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। একে আর্কাস সিনিলিস বলা হয়। এই রিংটি কোলেস্টেরল বৃদ্ধির লক্ষণ এবং রক্ত ধমনীতে চর্বি জমার ইঙ্গিত দেয়। এই অবস্থাটি প্রায়শই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা স্থূলত্বের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। এই বৃত্ত ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং এটি উপেক্ষা করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে, একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
৩. যদি আপনার দৃষ্টি ঘন ঘন ঝাপসা হয়ে যায়, অথবা চোখে ঝিনঝিন অনুভূতি হয়, তাহলে এটি হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। হৃদপিণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটলে সাধারণত এই সমস্যা দেখা দেয়। এই লক্ষণটি বিশেষ করে এমন লোকেদের মধ্যে দেখা যায় যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, প্রচুর মানসিক চাপ নেন, অথবা যাদের খাদ্যাভ্যাসও ভারসাম্যহীন হয়ে থাকে। এই ধরনের ক্ষেত্রে, রক্ত প্রবাহ সঠিকভাবে চোখে পৌঁছাতে পারে না, যার ফলে এই সমস্যা হয়। যদি এই লক্ষণটি বারবার দেখা দেয়, এটিকে হালকাভাবে নেবেন না।
৪. চোখ ঘন ঘন ফোলা বা লালচে ভাব হৃদরোগের একটি বড় লক্ষণ হতে পারে। এই সমস্যাটি তখন দেখা যায়, যখন শরীরে তরল ধারণ বৃদ্ধি পায়, যা হৃদপিণ্ড সঠিকভাবে পাম্প না করার কারণে ঘটে থাকে। চোখের নিচে ফোলাভাব এবং লালভাব সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং রক্তচাপ বা হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাসের ইঙ্গিত দিতে পারে। এর সঙ্গে সঙ্গে চোখে জ্বালাপোড়া বা ভারী ভাবও অনুভূত হতে পারে। যদি এই লক্ষণগুলি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
হার্ট অ্যাটাক এড়ানোর উপায়
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান: কোলেস্টেরল এবং ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলুন। তাজা ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য খান। মাছ, বাদাম এবং হৃদরোগের জন্য উপকারী চর্বি খান।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে।
- মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন: মানসিক চাপ হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ। যোগব্যায়াম এবং ধ্যানের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করুন।
- ধূমপান এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান হৃদপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- চেকআপ করান: নিয়মিত আপনার হার্ট চেক করান।
ডিসক্লেইমার: সাধারণ তথ্যের ভিত্তিতে এই খবর। শরীরে কোনোরকম অপ্রস্তুতি দেখলে অবশ্যই ডাক্তার দেখান।