যখন শুভমন গিল লং-অন থেকে দৌড়ে এসে ট্র্য়াভিস হেডের ক্যাচটি নেন, তখন সারা বিশ্বের ক্রিকেট ভক্তেরা নিজেদের শ্বাস আটকে রেখেছিলেন। এটি কোনও সাধারণ ক্যাচ ছিল না। এটি কোনও সাধারণ ম্যাচও ছিল না। এটি ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-র সেমিফাইনালে ট্র্যাভিস হেডের উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটসম্যান দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন এবং আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এর সেমিফাইনালে একটা সময়ে ভারতীয় দলের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ভারতের বিরুদ্ধে অনেকবার দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছিলেন, এবং এবারও তিনি সেটাই করার হুমকি দিচ্ছিলেন, কিন্তু বরুণ চক্রবর্তী তার সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে দেন। হেডকে বিভ্রান্ত করে ভুল শট খেলতে বাধ্য করেন এবং তাতেই আউট হন ট্র্যাভিস।
মাথায় ফ্লপি টুপি পরে ছিলেন গিল, এবং হেডের বলটি এমনভাবে তিনি ধরলেন যেন এটি তার খুবই প্রিয়। গ্যালারিতে থাকা ভারতীয় সমর্থকরা আনন্দে ফেটে পড়লেন। হেড, যিনি ১০ বলে মাত্র ১ রান করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত ৩৩ বলে ৩৯ রান করে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান। তাঁর এদিনের ইনিংসে ছিল পাঁচটি চার ও দুটি ছক্কা। এটি ছিল তার ওয়ানডে কেরিয়ারের প্রথম ঘটনা যেখানে তিনি পাওয়ারপ্লের মধ্যেই কোনও স্পিনারের বলে আউট হলেন।
আরও পড়ুন … IND vs AUS: 'বাবা' অশ্বিন! বরুণকে যা বলেছিলেন, ঠিক সেটাই হল, আউট হলেন হেড, এজন্যই 'মাস্টার'
গিলের ক্যাচ নিয়ে আম্পায়ারের আলোচনা
ট্র্যাভিস হেড আউট হওয়ার পরপরই আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থকে শুভমন গিলের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে, মাইকেল আথারটন এবং ম্যাথিউ হেইডেন অনুমান করেন যে এটি সম্ভবত গিলের ক্যাচ নিয়ে কোনও আলোচনা ছিল। ভারতীয় সহ-অধিনায়ক ক্যাচটি নেওয়ার পরপরই বলটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী, ক্যাচকে বৈধ বলে গণ্য করার জন্য ফিল্ডারকে বলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকতে হয়।
আরও পড়ুন … হত্যা মামলায় অভিযুক্ত কুস্তিগীর সুশীল কুমারের জামিন মঞ্জুর করল দিল্লি হাইকোর্ট
গিলের ক্যাচ নিয়ে আথারটনের মন্তব্য-
আথারটন বলেন, গিল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিলেন এবং তার ক্যাচের বৈধতা নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। হেইডেন তার সঙ্গে একমত হন এবং বলেন, গিল বলটি প্রায় তিন সেকেন্ড ধরে রেখেছিলেন। তবে প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার যোগ করেন যে আম্পায়ারের সতর্কবার্তা দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল, যেন গিল নিশ্চিত থাকতে পারেন যে তিনি বলটি যথেষ্ট সময় ধরে রেখেছেন, তারপর সেটিকে ছেড়ে সেলিব্রেশন করেছেন।
এরপর আথারটন এবং হেইডেন ১৯৯৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে স্টিভ ওয়াহ এবং হার্শেল গিবসের বিখ্যাত ‘ড্রপ ক্যাচ’ নিয়ে আলোচনা করেন। হর্ষ ভোগলে গিলের প্রশংসা করেন যে তিনি আম্পায়ারের কথাটি বিনয়ের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন এবং মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে চলে গেছেন।
আরও পড়ুন … ভিডিয়ো: প্রথম বলেই হেডের ক্যাচ মিস শামির! তারপরও ODI ইতিহাসে সবথেকে মন্থরতম শুরু
ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত
প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই ভারত দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেয়, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মহম্মদ শামি ম্যাচের তৃতীয় ওভারে তরুণ ওপেনার কুপার কনলিকে আউট করেন। নবম ওভারে হেড বরুণ চক্রবর্তীর শিকার হন।
এরপর স্টিভ স্মিথ এবং মার্নাস ল্যাবুশানের ৫৬ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে ওঠে। যা ভারতের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠছিল। তবে ঠিক যখন মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে, তখন রবীন্দ্র জাদেজা মার্নাস ল্যাবুশানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন এবং ২৯ রানে আউট করেন। ৩৭.৩ ওভারে ২০৫ রানের মধ্যে ছয় উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। এখন দেখার অ্যালেক্স ক্যারিরা স্কোর বোর্ডে কত রান তোলে।