আফগানিস্তানের সেমিফাইনালে ওঠার অঙ্কটা খুবই কঠিন ছিল। ২০৭ রানের বড় ব্যবধানে ইংল্যান্ড যদি প্রোটিয়াদের হারাত, তবেই ভাগ্য খুলত আফগানদের। কিন্তু সে গুড়ে বালি। শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ১১তম ম্যাচে টস জিতে প্রথম ব্যাট করতে নেমে চূড়ান্ত বিপর্যস্ত ব্রিটিশ ব্যাটিং অর্ডার। ২০৭ রানের ব্যবধানে জয় তো দূরের কথা, তারা মাত্র ১৭৯ রানেই গুটিয়ে গেল। পুরো ৫০ ওভারই খেলতে পারল না। যার নিটফল, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামার আগেই সেমিতে পৌঁছে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। ছিটকে যেতে হল আফগানিস্তানকে।
এদিন করাচিতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু শুরু থেকেই তারা নড়বড় করছিল। প্রোটিয়া বোলিংয়ের সামনে যেন একেবারে কেঁপে গিয়েছিলেন ইংলিশ ব্যাটাররা। প্রথম ওভারের শেষ বলে ফিল সল্টকে (৬ বলে ৮ রান) সাজঘরে ফেরান মার্কো জানসেন। এর পর জানসেনের শিকার জেমি স্মিথ। ৩ বল খেলে শূন্যতে সাজঘরে ফেরেন তিনি। পাওয়ার প্লে-তেই ৩ উইকেট পড়ে যায় ইংল্যান্ডের। বেন ডাকেটকে (২১ বলে ২৪) ফিরিয়ে আফগানিস্তানের স্বপ্নে পাওয়ার প্লে-তেই জল ঢেলে দিয়েছিলেন জানসেন। ৬.৪ ওভারে ৩৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছিল ইংল্যান্ড। সৌজন্যে জানসেন। তখনই দেওয়াল লিখন মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বাকিটা ছিল সময়ের অপেক্ষা।
আরও পড়ুন: চেনা ছন্দে নেটে অনুশীলন শুরু, কবে ২২ গজে ফিরতে চলেছেন বুমরাহ? মিলল ইঙ্গিত
তবে চতুর্থ উইকেটে হ্যারি ব্রুক এবং জো রুট কিছুটা হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রোটিয়া বোলিংয়ের সামনে এদিন বারেবারে কেঁপে উঠেছে ব্রিটিশদের ব্যাটিং অর্ডার। ব্রুক এবং রুটের ৬২ রানের পার্টনারশিপ ভাঙেন কেশব মহারাজ। সৌজন্যে জানসেনের দুরন্ত একটি ক্যাচ। চতুর্থ উইকেটির ক্ষেত্রেও বিশাল বড় ভূমিকা ছিল জানসেনের। হ্যারি ব্রুক ২৯ বলে ১৯ করে ফেরার পর নির্দিষ্ট ব্যবধানে উইকেট হারাতে শুরু করে ইংল্যান্ড। ব্রুকের পিছন পিছনই ৪৪ বলে ৩৭ করে আউট হন জো রুট। প্রসঙ্গত, ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর জো রুটের। এছাড়া ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার করেছেন ৪৩ বলে ২১ রান। এই ম্যাচে শেষ বারের মতো দেশের জার্সিতে দলকে নেতৃত্ব দিলেন বাটলার। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে হাতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর, তিনি ইতিমধ্যে নেতৃত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তবে অধিনায়ক হিসাবে শেষ ম্যাচটিও হতাশার হয়ে থাকল বাটলারের জন্য।
নয়ে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য জোফ্রা আর্চার কিছুটা লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন। ২১ বলে গুরুত্বপূর্ণ ২৫ রান করেছিলেন তিনি। কিন্তু বাকিদের যে তথৈবচ দশা। জেমি ওভারটন দুই অঙ্কের ঘরের পা রাখতে পারা আর একজন ব্যাটার। তাঁর স্কোর অবশ্য মাত্র ১১ রান। বাকিরা তো এক অঙ্কের ঘরই টপকাতে পারেননি। যার নিটফল, ৩৮.২ ওভারেই ১৭৯ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। প্রোটিয়াদের হয়ে জানসেন ছাড়াও তিন উইকেট নিয়েছেন উইয়ান মুল্ডার। কেশব মহারাজ নিয়েছেন ২ উইকেটে। একটি করে উইকেট নিয়েছেন লুঙ্গি এনগিদি এবং কাগিসো রাবাদা।
আরও পড়ুন: আফগানিস্তান-ইংল্যান্ড ম্যাচেও মাঠে ঢুকে পড়লেন দর্শক, পাকিস্তানের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে, চাপে PCB
অস্ট্রেলিয়া এবং আফগানিস্তানের কাছে হেরে এমনিতেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ লিগ থেকেই আগে ছিটকে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। এই ম্যাচটি তাদের জন্য ছিল নেহাৎ-ই নিয়মরক্ষার। কিন্তু এই ম্যাচের উপর ভাগ্য ঝুলে ছিল আফগানিস্তানের। যদিও প্রায় অবাস্তব একটা অঙ্ক ছিল। আসলে আফগানিস্তান তাদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরেছিল। কিন্তু তারা দুরন্ত পারফরম্যান্স করে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ঝটকা দেয়। তাদের তিন নম্বর ম্যাচটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে লড়াই করে জেতার জন্য তারা মরিয়া হয়েছিল, কিন্তু বৃষ্টির জেরে দ্বিতীয় ইনিংসের ১২.৫ ওভার খেলা হওয়ার পর ম্যাচটি বাতিল হয়ে যায়। যার জেরে পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে যায়। ফলে আফগানিস্তান চাপে পড়ে গিয়েছিল। এবং সেই চাপ আর কমাতে পারল না ইংল্যান্ড। বরং নিজেরা ল্যাজেগোবরে হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দিল আফগানিস্তানকে।