একুশের নির্বাচনের পর থেকে ‘ঘরছাড়া’ রয়েছেন বিজেপি কর্মী–সমর্থকেরা। বিজেপি নেতৃত্ব তাঁদের ঘরে ফেরাতে পারছেন না। এমনকী কোনও আশার বাণীও শোনাতে পারছেন না। এই অভিযোগ ঘরছাড়াদেরই। এই পরিস্থিতিতে কষ্ট করে দেবশালা পঞ্চায়েত এলাকার ভাতকুণ্ডা গ্রামের ধারে জঙ্গলে তাঁবু খাটিয়ে রয়েছেন প্রায় ৩০টি পরিবার। সেখানে বিজেপির বর্ধমান সদর জেলা সম্পাদক শ্যামল রায়ের নেতৃত্বে একটি দল ত্রাণ নিয়ে গেলে ওই কর্মীরা তাঁদের ফিরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। এমনকী তাঁরা জানিয়ে দেন, যারা নিরাপত্তা দিতে পারে না, তাদের ত্রাণেরও প্রয়োজন নেই।এখন যা অবস্থা তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চাইছেন বলে সূত্রের খবর। অন্তত নিরাপত্তা তো পাওয়া যাবে। আউশগ্রামের ভাল্কি পঞ্চায়েত এলাকার প্রেমগঞ্জের পরিবারগুলির দাবি, নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরে জঙ্গলে রাত কাটাতে হয়েছে তাঁদের। গ্রাম থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে জঙ্গলে তাঁবু খাটিয়ে রাতের পর রাত বাস করেন তাঁরা। এই দলে ৮ মহিলা এবং ৬ জন শিশুও রয়েছে। তাঁদের দাবি, ‘সাপের উৎপাত সহ্য করে আছি। সঙ্গে এখন নিত্য ঝড়বৃষ্টি–বজ্রপাত ভয় ধরাচ্ছে। দুধের শিশুদের নিয়ে তাঁবুর মধ্যে মাথা গুঁজে আছি।’ এখানের সবাই বাগদি পদবির মানুষ। জীবনে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। তাতেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন বিজেপি কর্মী সুভাষ বাগদি, ধর্মদাস বাগদি, দুলাল বাগদিদের অভিযোগ, ‘দলের জেলা কার্যালয়ে গিয়ে নেতাদের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা পাশে দাঁড়াননি। বাঁচলাম কি মরলাম খোঁজ না নিয়ে ত্রাণ দিতে এসেছেন! তাই ত্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছি।’যদিও বিজেপির জেলা সম্পাদক শ্যামল রায়ের দাবি, ‘ওঁদের সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বের সেভাবে যোগাযোগ হয়নি। তাই ওঁদের কাছে পৌঁছতে পারিনি। তবে ত্রিপল এবং পোশাক ব্যবহার করছেন ওঁরা। ঘরছাড়াদের একটা তালিকা আমরা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে দিয়েছি।’ কিন্তু ঘরছাড়ারা ঘরে ফিরতে চাইছেন। তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন এখন ফিরতে গেলে যদি তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের হাতে মার খেতে হয়। বিজেপি করতে গিয়ে তাঁরা অনেক আস্ফালন দেখিয়েছিলেন। এখন তা বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেখানে রাজ্য নেতৃত্বের এমন গা ছাড়া ভাব মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, ঘরেই যদি ফেরাতে না পারে তাহলে ত্রাণ দিয়ে কি হবে?