আপনারা পাঠান। আমরা কিনতে তৈরি আছি। ভারতকে ৫০০টি পণ্যের বিষয়ে রীতিমতো তালিকা পাঠাল রাশিয়া। এর মধ্যে গাড়ি, বিমান এবং ট্রেনের যন্ত্রাংশের মতো পণ্যও রয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চারটি সূত্র মারফত এই খবর মিলেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ প্রেক্ষিতে পশ্চিমী দেশগুলি রাশিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লির দিকে বাণিজ্যের জন্য হাত বাড়াচ্ছে মস্কো।
উক্ত তালিকাটি অবশ্য 'প্রাথমিক' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মোট কতগুলি আইটেম এবং ঠিক কী পরিমাণে রপ্তানি করা হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের এক সূত্র মাফিক দাবি, রাশিয়ার এমন অনুরোধ বেশ অভিনব একটি বিষয়। আরও পড়ুন: Assembly: তৃণমূলের প্রস্তাবে সমর্থন বিজেপির! মোদীর দরবারে যাচ্ছে প্রতিনিধিদল, কিন্তু কেন?
ভারত আপাতত যে কোনও পন্থায় এই বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী। এর অন্যতম কারণ হল, দুই দেশের মধ্যে বাড়তে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি। অর্থাত্, রাশিয়া থেকে যত পণ্য ভারত আনে, তার তুলনায় ভারত থেকে রাশিয়ায় কম পণ্য রফতানি হচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা এই সুযোগ নিয়ে একটি আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন। তাঁদের মতে রাশিয়ার সঙ্গে বেশি বেশি বাণিজ্য করতে গেলে, বিষয়টি পশ্চিমী বিশ্ব ভাল চোখে না-ও দেখতে পারে। সেক্ষেত্রে এক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে গিয়ে বাকি দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক ভেস্তে যেতে পারে।
মস্কোর একটি বাণিজ্য সূত্রে খবর, রাশিয়ার শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক বড় বড় সংস্থাগুলিকে তাদের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও সরঞ্জাম সরবরাহ করতে অনুরোধ করেছে।
রাশিয়ার শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক এবং ভারতের বিদেশ ও বাণিজ্য মন্ত্রক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আপাতত এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ তাঁদের।

ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর গত ৭ নভেম্বর থেকে মস্কো সফরে যান। তার কয়েক সপ্তাহ আগেই রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই বিশেষ অনুরোধ করা হয়েছিল। এমনটাই বলছেন দুই ভারতীয় সূত্র জানিয়েছে। তবে সেই বিদেশ সফরের সময় নয়াদিল্লি রাশিয়াকে ঠিক কী জানিয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, মস্কো সফরের সময়, এস জয়শঙ্কর বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে আপাতত ভারতের রাশিয়ায় রফতানি বাড়ানো প্রয়োজন। আরও পড়ুন: Forbes-এর ১০০ ধনীতমের মধ্যে Nykaa-র ফাল্গুনী নায়ার, ৩৯ হাজার কোটি টাকার সম্পদ!
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য প্রকাশ্যে মস্কোর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু পশ্চিমী দেশগুলির মতো তাদের সঙ্গে রাশিয়ার আর্থিক বয়কটে যোগ দেননি। বিশ্ববাজারে তেলের ঘাটতির কারণে ক্রুড অয়েলের দাম বেড়েছিল। সেই সময়ে সস্তায় রাশিয়া থেকে বিপুল হারে তেল আমদানি করেছে ভারত।
তাঁর সেই বিদেশ সফরে কৃষি, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস, বন্দর ও নৌপরিবহন, অর্থ, রাসায়নিক ও সার এবং বাণিজ্যের দায়িত্বে থাকা উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও গিয়েছিলেন। ফলে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের গুরুত্ব তা থেকে বেশ স্পষ্ট।
রাশিয়ায় বর্তমানে এয়ারলাইন্স ক্ষেত্রে চাপ রয়েছে। তাদের প্রায় সব বিমানই অন্য দেশ থেকে কেনা। ফলে এই বয়কটের জেরে তাদের যন্ত্রাংশের তীব্র ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
বিমান এবং হেলিকপ্টারের জন্য, রাশিয়া ল্যান্ডিং গিয়ার, ফুয়েল সিস্টেম, কমিউনিকেশন সিস্টেম, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা, লাইফ জ্যাকেট এবং বিমানের টায়ার-সহ মোট ৪১টি পণ্যের অনুরোধ করেছে।
গাড়ির যন্ত্রাংশের চাহিদাও তুঙ্গে। আর তা হবে না-ই বা কেন! বেশিরভাগ বিদেশি গাড়ি নির্মাতাই রাশিয়ার বাজার থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।
রাশিয়ার পাঠানো আলোচ্য তালিকাটি প্রায় ১৪ পৃষ্ঠা লম্বা। তাতে পিস্টন, তেলের পাম্প এবং ইগনিশন কয়েলের মতো গাড়ির ইঞ্জিনের অংশের উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও বাম্পার, সিটবেল্ট এবং ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেমের চাহিদা রয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই তালিকায় কাগজ, কাগজের ব্যাগ এবং প্যাকেজিং মেটিরিয়াল, সুতো-সহ টেক্সটাইল উত্পাদন করার উপকরণ এবং সরঞ্জামের কথাও উল্লেখ করেছে রাশিয়া।
তাছাড়া রাশিয়া গত কয়েক দশক ধরেই ভারতের সামরিক সরঞ্জামের বৃহত্তম সরবরাহকারী। এটি ভারতীয় ওষুধ পণ্যেরও চতুর্থ বৃহত্তম বাজার। আরও পড়ুন: Forbes: এক বছরে টাকা দ্বিগুণ করেছেন Adani, এদিকে কমেছে Ambani-র, রইল তালিকা
রুশ তেলের আমদানি বৃদ্ধি এবং কয়লা ও সারের আমদানি বাড়ায় আপাতত ভারত বাণিজ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার উপায় খুঁজছে। এমন প্রেক্ষিতে মস্কোর এই ১৪ পাতার চিঠি নিয়ে মোদী সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে সমগ্র বিশ্ব।