জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও জঙ্গিহানার যোগ্য জবাব দিয়েছে ভারত। 'অপারেশন সিঁদুর’ স্ট্রাইকে একযোগে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯ জায়গায় জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। গোয়েন্দা আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ভারতের লক্ষ্যবস্তুগুলির মধ্যে ছিল ওই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘস্থায়ী জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি। (আরও পড়ুন: জঙ্গি মরতেই মাথায় রক্ত পাকিস্তান, পুঞ্চে নির্বিচারে শেলিং,নিহত শিশু-মহিলা সহ বহু)
'অপারেশন সিঁদুর’-র উদ্দেশ্য
গোয়েন্দা আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ভারতের এই প্রত্যাঘাতের উদ্দেশ্য ছিল এলইটি, জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম), হিজবুল মুজাহিদিন এবং অন্যান্য সহযোগী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির ব্যবহৃত মূল লজিস্টিক, অপারেশনাল এবং প্রশিক্ষণ কাঠামো ধ্বংস করা। যারা পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা (আইএসআই)-র থেকে সহায়তা পাচ্ছে।এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির জন্য মূল সহায়তা আসে সরকারি সুযোগ-সুবিধার মধ্যে লুকানো পরিকাঠামো আকারে।'অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানের জন্য নির্বাচিত ন'টি স্থানের প্রতিটিই ভারতে পরিচালিত বড় জঙ্গি ষড়যন্ত্র এবং অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টার সঙ্গে সম্পর্কিত। ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত জুড়ে জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য ভারত এই স্থানগুলি চিহ্নিত করেছে। (আরও পড়ুন: রাত ১.০৫ থেকে দেড়টা পর্যন্ত কী হয়? অপারেশন সিঁদুরের বিশদ জানাল সামরিক বাহিনী)
পাকিস্তানে 'অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রত্যাঘাত
মারকাজ শুভান আল্লাহ, বাহাওয়ালপুর
পাকিস্তানের দক্ষিণ পাঞ্জাবেরবাহাওয়ালপুর শহরটি মাসুদ আজহারের নেতৃত্বাধীন জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের সদর দফতর হিসেবে পরিচিত।২০১৫ সাল থেকে বাহাওয়ালপুরের মারকাজ শুভান আল্লাহ জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম) জঙ্গিদের অন্যতম ঘাঁটি এবং প্রশিক্ষণ শিবির ছিল। জইশ ২০০১ সালের সংসদ হামলা এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা আত্মঘাতী বোমা হামলা-সহ ভারতে বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল হামলার দায় স্বীকার করেছে বা এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সেখানে জইশ প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহার, তার সহযোগী মুফতি আব্দুল রউফ আসগর, মাওলানা আম্মার এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বাসস্থান রয়েছে।
মারকাজ তইবা, মুরিদকে
লাহোর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত মুরিদকের মারকাজ তইবা লস্কর-ই-তৈবার ঘাঁটি এবং এর শাখা জামাত-উদ-দাওয়ার দীর্ঘদিনের কেন্দ্র। ২০০ একরেরও বেশি জমি জুড়ে বিস্তৃত এলাকায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ, শিক্ষাকেন্দ্র এবং লজিস্টিক সহায়তার পরিকাঠামো রয়েছে। ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার নেপথ্যে হাত রয়েছে লস্করেরই। এমনকি ২৬/১১-এর মুম্বই হামলার চক্রীদেরও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল লস্কর।এটি ছিল সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণ, মগজধোলাই, অস্ত্রচর্চা এবং নিয়োগের প্রধান ঘাঁটি। জানা যাচ্ছে, এখানে প্রতি বছর প্রায় হাজার ছাত্র ভর্তি হয় যারা ভারত, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশ থেকে আসত। এই কমপ্লেক্সটির নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন নিজে।
সরজাল, তেহরা কালান
সরজালা জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশের জন্য একটি প্রধান জেইএম লঞ্চ সাইট। আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং ভারত-পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি)-র খুব কাছে বার্নালার ঘাঁটিটি অবস্থিত হওয়ায় এখান থেকেই মূলত অনুপ্রবেশের কাজগুলি হয়।পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের নারোয়াল জেলার শাকাগড়ের অবস্থিত এই ক্যাম্প জইশ-ই-মহম্মদ গোষ্ঠীর একটা অন্যতম ঘাঁটি। এটি সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় এই ঘাঁটি দিয়ে জঙ্গিরা ভারতে ঢুকে থাকে। এমনকি, কোনও হামলার পর তারা চোট পেলে সবার প্রথমে এখানেই চিকিৎসার জন্য এসে থাকে।
মেহমুনা, শিয়ালকোট
হিজবুল মুজাহিদিন (এইচএম) দ্বারা পরিচালিত এই ঘাঁটিট শিয়ালকোটের হেড মারালায় কোটলি ভুট্টা সরকারি হাসপাতালের কাছে অবস্থিত। পাকিস্তানের আইএসআই-এর সহায়তায় এই ঘাঁটিটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর সরকারি প্রাঙ্গণে গোপনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।ভারতীয় গোয়েন্দারা মনে করছেন, এখান থেকে এখনও অনুপ্রবেশ ও প্রশিক্ষণের কাজ চলছে স্থানীয় সমর্থনের উপর ভর করে।
মার্কাজ আহলে হাদিথ, বারনালা
পাকিস্তানের আওতাধীন আজাদ কাশ্মীরের ভিমবের এলাকায় তৈরি হয়েছে লস্করদের এই জঙ্গি ঘাঁটি। বারনালা হল পাক অধ্যুষিত কাশ্মীরের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য তৈরি অন্য়তম কেন্দ্র।বারনালাও আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখার খুবই কাছাকাছি। ফলে এখান দিয়েও অনুপ্রবেশ হয়েছে অনেক দিন ধরে।আগে থেকেই ভারতের নজরে ছিল বারনালা।
মারকাজ আব্বাস, কোটলি
পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের কোটলিকে ভারত বারবার আত্মঘাতী বোমারু এবং জঙ্গিদের একটি প্রধান প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সৈয়দনা বিলাল ও শাওয়াই নাল্লা ক্যাম্প, মুজাফফরাবাদ (জেইএম ও এলইটি) এই ক্যাম্পগুলি অনুপ্রবেশ পয়েন্ট এবং স্লিপার সেলগুলির জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মারকাজ আহলে হাদিস, বারনালা (এলইটি) এটি একটি সহায়ক সুবিধা এবং আঞ্চলিক লজিস্টিক হাব হিসেবে কাজ করত।
মাশকার রাহিল শহিদ, কোটলিএটিও পাক আওতাধীন আজাদ কাশ্মীরেরই অংশ। যা হিজবুল-মুজাহিদিন জঙ্গি গোষ্ঠীর ভারত লাগোয়া অন্যতম শাখা।শাওয়াই নাল্লা ক্যাম্প, মুজাফফরাবাদপাক অধিকৃত কাশ্মীরে মুজফ্ফরাবাদের সাওয়াই নাল্লা ঘাঁটিতে লস্করের নিয়োগ প্রক্রিয়া, সংগঠনে নাম লেখানো এবং প্রশিক্ষণের কাজ হয়। উত্তর কাশ্মীরে বিশেষ করে সোনমার্গ, গুলমার্গ এবং পহেলগাঁওয়ে হামলার সঙ্গে এই ঘাঁটির যোগসূত্র রয়েছে।মারকাজ সৈয়দনা বিলালএটি পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের মুজফ্ফরাবাদের লাল কেল্লার বিপরীতে অবস্থিত।জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশের আগে এটি ট্রানজিট ক্যাম্প হিসেবে কাজ করে। সাধারণত এখানে ৫০-১০০ জন জঙ্গি থাকে।