বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চলচ্চিত্র জগতে। বৃহস্পতিবার সকালে ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বুদ্ধদেববাবু। চলচ্চিত্র-প্রেমীদের কাছে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত পরিচালিক ছবির কদর ছিল বরাবরের। 'দূরত্ব', 'নিম অন্নপূর্ণা', 'গৃহযুদ্ধ', 'ফেরা', 'বাঘ বাহাদুর', 'উত্তরা', 'তাহাদের কথা', 'চরাচর'-এর মতো ছবি তিনি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। ১৯৬৮ সালে ‘সময়ের কাছে’ শর্ট ফিল্ম দিয়ে ছবি বানানোয় হাতেখড়ি তাঁর। ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘উড়োজাহাজ’ তাঁর পরিচালিত শেষ ছবি। অঞ্জন দত্ত, মমতা শঙ্কর, মিঠুন চক্রবর্তী, তাপস পাল, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন বুদ্ধবাবু। প্রথাগত সিনেমার বাইরে গিয়ে দর্শকদের কাছে নিয়ে এসেছিলেন অন্য ধারার ছবি। বাংলা সিনেমার একটা যুগের অবসান হল তাঁর চলে যাওয়াতে। ১৯৭৮-এ প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি ‘দূরত্ব’ পরিচালনা করে জাতীয় পুরস্কারের শিরোপা পেয়েছিলেন তিনি। ছবির গল্পও ছিল তাঁর লেখা। ছয় ও সাতের দশকে নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবি সে সময় চলচ্চিত্র সমাজকে চমকে দিয়েছিল। এক অন্য ধারার গল্পের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন দর্শকরা। ১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গৃহযুদ্ধ’ ছবিও বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সেরা ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই ছবির প্রক্ষেপটেও ছিল নকশাল আন্দোলন। ছবির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অঞ্জন দত্ত ও মমতা শংকর।বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত পরিচালিত ১৯৯২ সালের ছবি ‘তাহাদের কথা’ পেয়েছিল দু'-দু'টি জাতীয় পুরস্কার। ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। সঙ্গে ‘বেস্ট ফিচার ফিল্ম’ হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিল এই ছবি। তাঁর ছবি ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ (২০০২) তো পরিচিত ঘরে ঘরে। ছবির জন্য একগুচ্ছ পুরস্কার এসেছিল পরিচালকের ঘরে। পেয়েছিলেন আনন্দলোক পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ এশিয়ান চলচ্চিত্র পুরস্কার ও জাতীয় পুরস্কার।ফের ২০০৫ সালে তাঁর ছবি ‘কালপুরুষ’ সাড়া ফেলে দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে মিঠুন চক্রবর্তী ও রাহুল বোস। টোরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছিল এই ছবি। সঙ্গে পেয়েছিল জাতীয় পুরস্কারও। ইন্দ্রণীল সেনগুপ্ত ও স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে তৈরি তাঁর ছবি ‘জানলা’ (২০০৯) সমাদর পেয়েছিল আন্তর্জাতিক মহলে। ‘এশিয়া পেসিফিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’, ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’-এ দেখানো হয়েছিল এই ছবি। সঙ্গে ‘এশিয়া পেসিফিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ সেরা ছবির শিরোপা জিতেছিল ‘দ্য় উইন্ডো’ (জানালা)