রুতুরাজ গায়কোয়াড়, শিবম দুবে, দীপক হুডা- চেন্নাই সুপার কিংসের তিন তারকা প্লেয়ারকে রবিবার আউট করে চমকে দেন ২৪ বছরের বিগ্নেশ পুথুর। সিএসকে-র বিরুদ্ধে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বিগ্নেশকে নামিয়ে ফাটকা খেলেছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। তবে তিনি আইপিএলের অভিষেক ম্যাচেই সুপারডুপার হিট। নজর কেড়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনিরও।
এদিন মুম্বইকে চার উইকেটে হারানোর পর ধোনিকে এগিয়ে এসে কথা বলতে দেখা যায় তরুণ এই স্পিনারের সঙ্গে। কান পেতে বিগ্নেশের কথা শোনেন। তাঁর পিঠ চাপড়িয়ে তাঁকে উৎসাহ দেন ধোনি। সিএসকে-র প্রাক্তন অধিনায়ক বরাবরই তরুণ ক্রিকেটারদের সমর্থন করে থাকেন। এদিন বিগ্নেশকেও অনুপ্রাণিত করতে ভুললেন না। আর এই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
সিএসকে-র তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন বিগ্নেশ
সিএসকে-র ইনিংসের অষ্টম ওভারে বল করতে এসেছিলেন বিগ্নেশ। সেই ওভারেই তিনি আউট করেন চেন্নাইয়ের অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে। অফ-স্টাম্পের বাইরে গায়কোয়াড়কে একটি ফুল লেন্থ বল করেন বিগ্নেশ, আর সিএসকে অধিনায়ক বড় শট খেলতে গিয়ে সোজা উইল জ্যাকসের হাতে ধরা পড়েন। পরের ওভারে ফেরান শিবম দুবেকে। বিগ্নেশের ফ্লাইট বলে লং-অনে শট মারার চেষ্টা করেছিলেন দুবে। কিন্তু তিলক বর্মার হাতে তিনি ক্যাচ দেন। একই রকম ভাবে দীপক হুডাকেও সাজঘরে ফেরান তরুণ স্পিনার। ডিপ স্কোয়ার লেগে ক্যাচ দেন হুডা। এদিন রোহিত শর্মার জায়গায় ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নেমে, চার ওভার বল করে ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট তিনি তুলে নেন। মুম্বই হারলেও, ভালো বল করে আলাদা ভাবে নজর কাড়লেন বিগ্নেশ।
কে এই বিগ্নেশ?
আইপিএলে অভিষেক ম্যাচেই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন বিগ্নেশ। কিন্তু আপনারা জানলে অবাক হবেন, কেরালার এই তরুণ কখনও সিনিয়র ক্রিকেট খেলেননি। নিজের রাজ্যের সিনিয়র দলে ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেকের সুযোগ এখনও পাননি বিগ্নেশ। এত কম অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও, চেন্নাইয়ের বড় ব্যাটসম্যানদের স্পিনের জালে জড়িয়ে নাস্তানাবুদ করেছেন।
২০০১ সালের ২ মার্চ কেরলের মালাপ্পুরমের পেরিনথালমান্নায় জন্ম বিগ্নেশের। বাবা সুনীল কুমার অটো চালান। আর মা কেপি বিন্দু গৃহবধূ। আর্থিক অবস্থা ভালো না হলেও, বিগ্নেশের ক্রিকেট খেলায় কখনও বাধা দেননি তাঁর বাবা-মা। খেলাধূলার পাশাপাশি পড়াশোনাতেও বেশ ভালো বিগ্নেশ। এখন পিটিএম কলেজে সাহিত্য নিয়ে স্নাতকোত্তর করছেন তিনি।
আরও পড়ুন: অনেক বেশি স্বাধীনতা পাওয়া যায়… IPL-এ প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েই MI-কে ঠুকলেন ইশান কিষাণ
কেরলের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৪ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছেন। তবে সিনিয়র দলে খেলা হয়নি। স্থানীয় কোচ মহম্মদ শেরিফের পরামর্শে বিগ্নেশ স্পিন বোলিং শুরু করেছিলেন। একটা সময়ে ‘চায়নাম্যান’ বোলিং কী জানতেন না, এর পর এই বোলিং-ই নিখুঁত করার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন তিনি।
ক্রিকেট খেলার উন্নতির জন্য ত্রিশূরে গিয়ে সেন্ট টমাস কলেজের হয়ে কেরল কলেজ প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগে বেশ কিছু উইকেট নিয়ে নজর কাড়েন। ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করায় জলি রোভার্স ক্রিকেট ক্লাব তাঁকে সই করায়। সেখান থেকে তিনি কেরল প্রিমিয়ার লিগে দল আলেপ্পি রিপল্স দলে সুযোগ পান। সেটাই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
আলেপ্পির হয়ে খেলার সময় দু'টি ম্যাচে তিনটি উইকেট নেন। সেই সময় তাঁর ‘চায়নাম্যান’ বোলিং নজর কেড়ে নেয়। ওই প্রতিযোগিতায় হাজির ছিলেন মুম্বইয়ের ‘স্কাউট’রা। তাঁরা বিগ্নেশকে ট্রায়ালের জন্য ডেকে নেন। এর পর মেজেঘষে তাঁকে তৈরি করে আইপিএলে মেগা নিলামে বেসপ্রাইস ৩০ লাখ টাকায় কিনে নেয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। আর সেই সুফলই এখন পাচ্ছে এমআই।