বিমল গুরুংয়ের কলকাতায় উদয় হওয়া বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টরকে সামনে এনে দিয়েছে। বিমল গুরুং তিন বছর গা ঢাকা দেওয়ার পর পুজোর মুখে কলকাতায় এলেন প্রকাশ্যে। একাধিক মামলা তাঁর ওপর থাকলেও কেউ গ্রেপ্তার করেনি। আবার এসেই ঘোষণা করলেন, বিজেপি’র সঙ্গ ত্যাগ করে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সঙ্গে জোট করতে চান। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে ফের মমতাকেই দেখতে চান। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ হাওয়া মোরগের মতো বদল কেন বিমলের? রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা রয়েছে যার বিরুদ্ধে তাকে গ্রেপ্তার করা হল না কেন?সূত্রের খবর, এই গা ঢাকা দিয়ে থাকতে বিমলের বেশ সমস্যাই হচ্ছিল। পাহাড়ে আরও বেশি ঝুঁকি হয়ে যাচ্ছিল এভাবে থাকার। তাই তিন মাস আগে থেকে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয় তৃণমূলের। দিল্লিতে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বৈঠকও হয় তাঁর। শিলিগুড়িতে প্রশান্ত কিশোর ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হয় বিমল গুরুংয়ের প্রতিনিধিদের। সেখানে অবশ্য বিমল গুরুং ছিলেন না। ফিরে আসার বার্তা ছিল। যা প্রতিনিধিরা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।এই বৈঠক এমন সময়ে হয় যখন লোকসভা নির্বাচনে উত্তরের প্রায় সব আসনই হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। এবার বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে শাসকদলকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতেই হবে। তাই কী বিমল চুক্তি সাক্ষরিত হল? আর কলকাতায় প্রকাশ্যে এলেন বিমল? এটার কোনও সদুত্তর মেলেনি। বরং গুরুং বলেন, ‘আমি কেন্দ্রে এনডিএ’র শরিক। কিন্তু আজ এই মুহূর্ত থেকে এনডিএ ছাড়ছি।’ জানা গিয়েছে, বিজেপি’র সঙ্গে থেকে লাভ হচ্ছিল না গুরুংয়ের। মামলা থেকে মুক্তি পাচ্ছিলেন না তিনি। আবার গোর্খাল্যান্ড নিয়েও বিজেপি ইঙ্গিত দেয়নি। তাই তৃণমূলের সঙ্গে ছাড়া বিমলের পাহাড়ে ফেরার অন্য উপায় ছিল না। আর বিমলকে ছাড়া পাহাড়ে আসন জেতা সম্ভব নয়। তাই তৃণমূলের দরকার ছিল তাঁকে। এই দুই ফ্যাক্টর মিলে যাওয়াতেই আবার বিমল আসলো ফিরে।বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের গোর্খা ভোট ফ্যাক্টর। অন্তত ১২টি বিধানসভা আসনে প্রভাব ফেলতে পারেন বিমল গুরুং। ফলে তৃণমূলেরও দরকার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতাকে। সূত্রের খবর, তৃণমূলের এক নেতার সঙ্গে ঝাড়খণ্ডে বিমল গুরুংয়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ঠিক হয়, বিমল গুরুং উত্তরবঙ্গ থেকে তৃণমূলকে বিপুল পরিমাণ আসন তুলে দেবে। আর বিনিময়ে সমস্ত মামলা থেকে মুক্তি দিতে হবে বিমলকে। যদিও এই বৈঠকের কথা কেউ স্বীকার করেননি। তাই কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে গুরুং বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদর্শ নেত্রী। আমরা চাই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চাই মমতাকে। বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে লড়তে চাই।’