মেঘালয়কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি এবার দক্ষিণ ভারতে। অন্ধ্রপ্রদেশে বিয়ের এক মাসের মধ্যেই নিখোঁজ হয়েছিলেন বর। তারপর খাল থেকে উদ্ধার হয় যুবকের দেহ। এরপরেই তদন্ত শুর হতেই পুলিশ জানতে পেরেছে যে ওই ব্যক্তিকে তাঁর স্ত্রী হত্যা করেছে প্রেমিকের সঙ্গে মিলে। মাত্র এক মাস আগেই মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমা সারতে গিয়ে স্বামী রাজা রঘুবংশীকে খুন করিয়েছিল সোনম রঘুবংশী। আর তাকে সাহায্য করেছিল সোনমের প্রেমিক রাজ কুশওয়াহ ও তার বন্ধুরা। তারপরে এই ঘটনা যেন হানিমুন মিস্ট্রিকেই আবার মনে করিয়ে দিল। (আরও পড়ুন: শিশুরাও নিরাপদ নয় পাকিস্তানে, UNSC-র মঞ্চে পড়শির দুমুখো চেহারা তুলে ধরল ভারত)
আরও পড়ুন: দিল্লির সরকারি হাসপাতালে যৌন নির্যাতনের শিকার মহিলার মৃত্যু চিকিৎসাধীন অবস্থায়
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১৮ মে কুর্নুলের ঐশ্বর্যর (২৩) সঙ্গে তেলাঙ্গানার গাড়ওয়ালের পেশায় ল্যান্ড সার্ভেয়ার এবং নৃত্যশিল্পী তেজেশ্বরের (২৬) বিয়ে হয়। বিয়ের আগে ঐশ্বর্য তেজেশ্বরকে বলে, সে তাঁর প্রেমে পড়েছে। কিন্তু বিয়ের এক মাস পর আচমকা তেজেশ্বর নিখোঁজ হয়ে যান। এরপরেই তেজেশ্বরের পরিবার নববধূ ঐশ্বর্যর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। তাঁদের দাবি ছিল ছেলের নিখোঁজ হওয়ার নেপথ্যে ঐশ্বর্যর প্রধান ভূমিকা রয়েছে। থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর পুলিশ ওই মহিলা এবং তার মা সুজাতাকে আটক করে। এরপরেই আসল রহস্য উন্মোচন হয়। পুলিশ জানতে পারে, ঐশ্বর্যর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এক বিবাহিত ব্যক্তির। তিনি পেশায় একজন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। বিয়ের এক মাসের মধ্যেই ঐশ্বর্য প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তেজেশ্বরকে খুনের জন্য তারা তিনজনকে নিয়োগ পর্যন্ত করেছিল। ঐশ্বর্যর মা সুজাতা একই নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনে (এনবিএফসি) কাজ করতেন। সেই সূত্রেই মেয়ের সঙ্গে আলাপ হয় ওই বিবাহিত ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের। (আরও পড়ুন: হড়পা বানের তাণ্ডবে হিমাচলে মৃত্যু ২ জনের, নিখোঁজ আরও প্রায় ২০)
আরও পড়ুন-রাজের সঙ্গে প্রেম সোনমের! মেঘালয়কাণ্ডে সম্পর্কের কথা কবুল দুই অভিযুক্তের
এরপরেই অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুল জেলার ব্যাঙ্ক ম্যানেজার থিরুমল রাওকে ঐশ্বর্যর প্রেমিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়। তেজেশ্বরকে খুনের করার জন্য ফাঁদ পেতেছিল থিরুমল। লোনের জন্য ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করা তিনজনকে ২ লক্ষ টাকা অগ্রিম দিয়েছিল সে। একথা জানিয়েছেন জোগুলাম্বা গাড়ওয়াল জেলার এসপি টি শ্রীনিবাস রাও। বর্তমানে অন্ধপ্রদেশ ও তেলাঙ্গানা পুলিশ এই মামলার তদন্ত করছে।ইতিমধ্যে ঐশ্বর্য ও থিরুমল-সহ আটজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুজাতা প্রথম থেকেই মেয়ে ও ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সম্পর্কের বিষয়ে জানতেন। থিরুমল রাওয়ের বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত হেড কনস্টেবল। তিনি ছেলেকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বড় দায়িত্ব ভারতীয় নভোচরের কাঁধে, মহাকাশে আজ কী করবেন শুভাংশুরা?
ব্যাঙ্ক ম্যানেজার থিরুমল রাও-এর ধারণা ছিল পুলিশের খাতায় তেজেশ্বর নিখোঁজ হিসাবেই থাকবেন। তাঁর মৃতদেহ কখনও পাওয়া যাবে না। ঐশ্বর্যর সঙ্গে লাদাখে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। আর সেই জন্য ২০ লক্ষ টাকা ঋণ পর্যন্ত নিয়েছিল। নিজের এবং ঐশ্বর্যর নামে টিকিট বুকিংও করেছিল থিরুমল।পুলিশ জানিয়েছে, তেজেশ্বরকে হত্যার আগে স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা করে বিফল হয় থিরুমল। আট বছর আগে বিয়ে হলেও দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন। ঐশ্বর্যের মা সুজাতার সঙ্গেও ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের নিত্য যোগাযোগ ছিল বলে খবর। সুজাতা ওই ব্যাঙ্কেই সাফাইকর্মী হিসাবে কাজ করতেন। ঐশ্বর্য মায়ের অনুপস্থিতিতে চাকরিতে বহাল হয়। তখনই দু'জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। (আরও পড়ুন: ডিগবাজির পর ডিগবাজি! ইরানে পরমাণু কেন্দ্রে হামলা নিয়ে কথার ঠিক নেই ট্রাম্পের)
আরও পড়ুন: পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সামনেই ইসলামাবাদের মুখোশ টেনে খুললেন রাজনাথ, বললেন...
কিন্তু সুজাতা মেয়ের এই সম্পর্ক মানতে চাননি। তিনি ঐশ্বর্যকে জোর করেন তেজেশ্বরকে বিয়ে করতে। কিন্তু ঐশ্বর্য প্রস্তুত ছিলেন না। তেজেশ্বরের সঙ্গে তার বিয়ে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত হয়। কিন্তু কাউকে কিছু না বলে ঐশ্বর্য বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়ে বিয়ে ভেঙে দেয়।পরে সে তেজেশ্বরকে বোঝায় যে তার মা যৌতুক দিতে অক্ষম বলে লজ্জায় সে নিখোঁজ হয়েছিল। কিন্তু তেজেশ্বরকে ছাড়া সে বাঁচবে না, তাই এই বিয়ে করতে ইচ্ছুক ঐশ্বর্য। এদিকে, হবু কনের সঙ্গে যে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার থিরুমল রাওয়ের সম্পর্ক রয়েছে তা কানাঘুঁষোয় শুনেছিল তেজেশ্বরের পরিবার। তাঁরা এ বিয়ে করতে নিষেধও করেন। কিন্তু পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ঐশ্বর্যকে ১৮ মে বিয়ে করেন তেজেশ্বর।পুলিশ জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ঐশ্বর্য এবং থিরুমল রাও ২০০০ বার ফোনে বলেছিল। এমনকি বিয়ের সময়ও ঐশ্বর্য ক্রমাগত ফোনে কথা চালিয়ে যাচ্ছিল। শ্বশুরবাড়ির লোকজন এত ফোনালাপ নিয়ে বকুনি দিতে সে মায়ের সঙ্গে কথা বলছিল বলে জানায়।