বড়দিনে পার্লামেন্টের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের বাগপতের বাসিন্দা এক যুবক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর শুক্রবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম জিতেন্দ্র কুমার। মৃত্যুর আগে যুবক দিল্লি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি মিথ্যে পুলিশ মামলার কারণে চাপের মধ্যে থাকায় তিনি চরম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এই ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন জিতেন্দ্রর বাবা। পুলিশ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: কোন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে সংসদের সামনে গায়ে আগুন? বড়দিনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য!
জানা যাচ্ছে, চারজনের অভিযোগের ভিত্তিতে যুবকের বিরুদ্ধে বাগপতে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ ছিল, মিথ্যে মামলায় তাঁকে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে হয়রানি করা হয়েছে। জিতেন্দ্রর মৃত্যুর পর তাঁর বাবা ওই চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই ঘটনার পরেই পুলিশ জানিয়েছে, তারা পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে এবং তদন্তে সাহায্য করার জন্য বাগপত থেকে দিল্লিতে একজন এসিপি-স্তরের অফিসারকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। দিল্লির একজন পুলিশ কর্তা বলেন, ‘আমরা অভিযোগটি খতিয়ে দেখছি এবং উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে মৃত যুবকের বিরুদ্ধে তিনটি ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত চারজন এবং এক পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগের স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। আমরা যাচাইয়ের পরে রিপোর্ট পেশ করব।’ (আরও পড়ুন: ১৯-এ দিয়েছিলেন ‘পদত্যাগের প্রস্তাব’, ২৪-এ দাঁড়িয়ে মমতার ‘পাখির চোখ’ ২০২৬)
আরও পড়ুন: ২০১৯ থেকে ২০২৪, মোদী-রাহুলের জন্যে বদলেছে অনেকটা, আবার একই আছে অনেক কিছু
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, জিতেন্দ্র বুধবার বিকেলে একটি ট্রেনে করে বাগপত থেকে দিল্লি আসেন। এরপর তিনি রেলভবন পার্কে গিয়ে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘটনায় তাঁর শরীরের ৯৫ শতাংশ অংশ পুড়ে যায়। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য আরএমএল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে পুলিশকে দেওয়া জবানবন্দিতে যুবক পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তিনি আত্মহত্যার উদ্দেশ্য নিয়েই দিল্লিতে এসেছিলেন এবং বাগপত থেকে পেট্রোল ভর্তি বোতলটি সঙ্গে এনেছিলেন। যদিও যুবক বাড়িতে জানিয়েছিলেন যে তিনি সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন মামলা করতে। (আরও পড়ুন: মনমোহনের স্মৃতিসৌধের জমি বরাদ্দে 'বিতর্ক'! কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্ট করলেন শাহ)
পুলিশ জানিয়েছে, যুবকের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ছিল। সেগুলি ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৪ সালে দায়ের হয়েছিল। যুবকের অভিযোগ ছিল, এই সব অভিযোগ মিথ্যে ছিল এবং পুলিশ ঠিকমতো তদন্ত করেনি। (আরও পড়ুন: 'বাবার বেলায়…', মনমোহনের প্রয়াণের পর কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক প্রণব কন্যা)
জিতেন্দ্র আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু, তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলায় পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হন এবং শ্রমিকের কাজে যোগ দেন। তাঁর বাড়িতে রয়েছেন, মা-বাবা ও তিন ভাই-বোন। মৃতের বাবা হিন্দুস্থান টাইমসকে জানান, ২০২১ সালে পুরানো শত্রুতার জেরে গ্রামের এক দম্পতি সহ চারজন জিতেন্দ্র এবং তাদের পরিবারকে মারধর করেছিল। জিতেন্দ্রর খুড়তুতো ভাই বলেন, ‘সামান্য জল সরবরাহ নিয়ে সমস্যা শুরু হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ জিতেন্দ্রদের অভিযোগে গুরুত্ব দেয়নি কারণ তারা নিচু জাতের।’ (আরও পড়ুন: 'সরকার ডিএ দেবে না…', সামনে বিস্ফোরক দাবি, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রিপোর্টে বলা…)
আরও পড়ুন: কলকাতা থেকে চালু নয়া আন্তর্জাতিক রুটের উড়ান, জানুন টাইমিং ও ভাড়ার বিশদ
জিতেন্দ্রর বাবা বলেন, মিথ্যে অভিযোগের কারণে তাঁর ছেলেকে দেড় মাস জেল খাটতে হয়েছিল। গাড়িতে করে ধাক্কা মারার চেষ্টা করেছিল তারা। গত মাসে, তারা জিতেন্দ্রকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল এবং জাতপাত তুলে অপমান করেছিল। কিন্তু, পুলিশ পাল্টা জিতেন্দ্রর নামে মামলা করে। তাদের অভিযোগ, অভিযুক্ত চারজন উচ্চ বর্ণের বলেই পুলিশ এরকম করেছে। জিতেন্দ্রর ভাই বলেন, ‘আমরা এর বিচার চাই। দাদার এটা প্রাপ্য ছিল না।’