ওড়িশার-কাণ্ডের পুনারাবৃত্তি এবার রাজস্থানে। শিক্ষাকর্মীদের বিরুদ্ধে মানসিক হেনস্থার অভিযোগ তুলে উদয়পুরের হস্টেলে প্যাসিফিক ডেন্টাল কলেজের এক এমবিবিএস ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। আর ঘটনা সামনে আসার পরই ক্যাম্পাসে শুরু হয় বিক্ষোভ। শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অন্যায্য আচরণের অভিযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে জম্মু ও কাশ্মীরের ছাত্রী শ্বেতা সিং আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ। মৃত ছাত্রীর সহপাঠী তথা রুমমেট রাত ১১টা নাগাদ তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। কিন্তু, ততক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোট। হাতে লেখা চিরকুটে কলেজের কর্মীদের বিরুদ্ধে পরীক্ষার সময়সূচীতে অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরোধ লাগিয়ে দেওয়া এবং বারবার আর্থিক দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে। আরও দাবি করা হয়েছে যে, যে সব শিক্ষার্থী বেতন দিতে পারতেন না, তাঁদের কলেজ প্রশাসন চরম হয়রানি করত।এই চাপ সহ্য করতে না পেরেই ওই ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে অনুমান পুলিশের।
আরও পড়ুন-‘সীমান্ত রক্ষা করুন, আপনার পরিবারের যত্ন নেব!’ সেনাকে বিশেষ উপহার কেন্দ্রের
অন্যদিকে, এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই কলেজের পড়ুয়ারা রাস্তায় নেমে পড়েন। কলেজ গেটের সামনে ধর্নায় বসেন শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী। ‘জাস্টিস ফর ভিক্টিম’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে গোটা চত্বর। সুইসাইড নোটে উল্লেখিত নির্দিষ্ট কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলা হয় প্রতিবাদ আন্দোলন থেকে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ যে, কলেজ প্রশাসন উপস্থিতি এবং পরীক্ষার উপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়।খবর পেয়েই সুকের থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রথমে বিক্ষোভরত ছাত্র-ছাত্রীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ জানালেও, তাঁরা অনড় থাকেন। রাত পর্যন্ত চলতে থাকে বিক্ষোভ। শেষপর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা আশ্বাস দেন, অভিযুক্ত কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কলেজের ডিরেক্টর বলেন, 'এই মুহূর্তে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে, এবং তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। কলেজ কর্তৃপক্ষও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং জড়িত কর্মীদের বরখাস্ত করা হবে।' এদিকে সুকের থানার এসএইচও রবীন্দ্র চরণ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। মৃত ছাত্রীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন-‘সীমান্ত রক্ষা করুন, আপনার পরিবারের যত্ন নেব!’ সেনাকে বিশেষ উপহার কেন্দ্রের
উল্লেখ্য, চলতি মাসেই অধ্যাপকের যৌন হেনস্থার বিচার চেয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে গায়ে আগুন দেওয়া ছাত্রীর মৃত্যুতে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে ওড়িশা।বালেশ্বরের ফকির মোহন অটোনোমাস কলেজের বি. এড. পড়ুয়া ২২ বছর বয়সি ছাত্রী কলেজ ক্যাম্পাসে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল ওড়িশার এইমস হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল। পরে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার। ছাত্রী আত্মহননের চেষ্টার ১১ দিন আগে কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটিতে চিঠি লিখেছিলেন। সেখানে বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন এবং সতর্ক করেছিলেন যে যদি কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে তিনি আত্মহত্যা করবেন। অবশেষে তাই হয়েছে।