মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসে রয়েছেন হাসপাতাল কর্মীরা। মাথায় বন্দুক ঠেকানো। রবিবার দক্ষিণ সিরিয়ার একটি হাসপাতালের এমনই ভয়ঙ্কর এক দৃশ্য দেখল গোটা বিশ্ব। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শরার সেনার মদতে গত শুক্রবার থেকে নতুন করে সংখ্যালঘু দ্রুজদের বসতি সুয়েইদা প্রদেশে হামলা শুরু করেছে সুন্নি বেদুইন জনগোষ্ঠীর জঙ্গিরা।
এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, মেডিকেল পোশাক পরা একদল লোক সশস্ত্র লোকদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে রয়েছে। একজনকে ধরে মাথায় আঘাত করা হচ্ছে যেন তাকে আটক করা হচ্ছে। সে একজন বন্দুকধারীর সঙ্গে লড়াই করে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, তারপর একবার অ্যাসল্ট রাইফেল দিয়ে এবং তারপর আবার অন্য একজন পিস্তল দিয়ে গুলি করে।রাশিয়ার রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম আরটি জানিয়েছে, সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) প্রকাশিত এই ভিডিওতে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সরকারের অনুগত যোদ্ধারা একটি হাসপাতালের কর্মীদের হত্যা করেছে। ভিডিওতে সেই দৃশ্য দেখানো হয়েছে। যদিও ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি হয় হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।
আরও পড়ুন-'ইজরায়েল আমাকে হত্যা...,' আইডিএফের বোমায় ছিন্নভিন্ন দেহ, মৃত্যুর আগে সাংবাদিকের শেষ বার্তা
ওই ভিডিও উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, সিরিয়ার প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত বেশ কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তিকে গোটা হাসপাতালকে ঘিরে থাকতে দেখা যায়। একজন বন্দী, একজন সশস্ত্র ব্যক্তির মুখে থাপ্পড় মারার পর, তাকে পিছনে ঠেলে দিতে দেখা যাচ্ছে। খুব কাছ থেকে দুবার গুলি করা হয়েছে। ফুটেজে আরও গুলি চালানোর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, যেখানে বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তি মেঝেতে পড়ে যাচ্ছে। গত শুক্রবার থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শরার সেনার মদতে নতুন করে সংখ্যালঘু দ্রুজদের বসতি সুয়েইদা প্রদেশে হামলা শুরু করেছে সুন্নি বেদুইন জনগোষ্ঠীর জঙ্গিরা। দু’পক্ষের লড়াইয়ে বেশ কয়েক জন হতাহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন-'ইজরায়েল আমাকে হত্যা...,' আইডিএফের বোমায় ছিন্নভিন্ন দেহ, মৃত্যুর আগে সাংবাদিকের শেষ বার্তা
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা এক বিবৃতিতে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল আব্দুল কাদের আল-তাহহানকে এই ঘটনার তদন্ত তদারকি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে অপরাধীদের যত দ্রুত সম্ভব শনাক্ত করে গ্রেফতার করা যায়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, এবং আমরা নিশ্চিত করছি যে অপরাধীদের জবাবদিহি করতে হবে এবং তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে বিচারের আওতায় আনা হবে।' অন্যদিকে সিরিয়ার দ্রুজ সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ হিকমত আল-হিজরি বলেছেন, 'এই ঘটনায় অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সামনে হাজির করতে হবে।'
উল্লেখ্য, দীর্ঘ বছরের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর সিরিয়ার শাসক বাশার আল আসাদকে উৎখাত করেছে বিদ্রোহী শিবির। তবে বাশার দেশ ছাড়লেও হিংসার আগুন নেভেনি দেশটিতে। সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ সিরিয়ায় সংখ্যালঘু দ্রুজদের নির্মূল করতে উঠেপড়ে লেগেছে সেখানকার নিরাপত্তাবাহিনী। চলছে গণহত্যা। রিপোর্ট বলছে, সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ আল-সুওয়াদাতে শয়ে শয়ে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে দ্রুজ সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার অপরাধে।