দীর্ঘদিনের কচ্ছতিভুর ইস্যুর সমাধান এবং শ্রীলঙ্কার কারাগারে আটক ভারতীয় জেলে ও নৌকাগুলির মুক্তি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরাসরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানালেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে স্ট্যালিন অভিযোগ করেন, গত ১০ বছরে তামিল মৎস্যজীবীদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে মোদী সরকার। এরই পাশাপাশি কচ্ছতিভু ইস্যু নিয়েও সরব হন স্ট্যালিন। এদিকে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার মৎস্যমন্ত্রী ডগলাস দেবানন্দ মন্তব্য করেছিলেন, ভারতীয় মৎস্যজীবীরা প্রায়ই শ্রীলঙ্কার জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে। এদিকে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী এও বলেছিলেন যে শ্রীলঙ্কা কচ্ছতিভু দ্বীপ কোনও ভাবেই ফিরিয়ে দেবে না ভারতকে। এই আবহে ডগলাসের মন্তব্যে পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর কেন চুপ আছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন স্ট্যালিন। (আরও পড়ুন: আমেরিকার আলাস্কায় ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প, জারি সুনামি সতর্কতা)
আরও পড়ুন: মুম্বইয়ে জরুরি অবতরণের আগে 'প্যান প্যান প্যান' কল গোয়াগামী ইন্ডিগো বিমানের
এদিকে স্ট্যালিন দাবি করেছেন, তামিলনাড়ু বিধানসভা ইতিমধ্যেই কচ্ছতিভু দ্বীপ ফেরত নেওয়ার দাবিতে প্রস্তাবনা পাশ করেছে। তিনি নিজে নাকি ব্যক্তিগত ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে কচ্ছতিভু নিয়ে বারংবার আবেদন জানিয়েছেন। এদিকে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে স্ট্যালিনের এই কচ্ছতিভু ইস্যুতে চাপের জবাবে পালটা তোপ দেগেছে বিজেপি। এই নিয়ে গেরুয়া শিবিরের মুখপাত্র নারায়ণ তিরুপতি বলেন, 'কংগ্রেসের সঙ্গে ১৪ বছর কেন্দ্রের সরকারে থেকেছে ডিএমকে। তখন তারা কেন এটা নিয়ে কিছু করেনি? আর কংগ্রেস জমানায় ১০০০ মৎস্যজীবী প্রাণ হারিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার নৌসেনার গুলিতে। তবে এখনও শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী আর গুলি ছোড়ে না। আমরা এক ভারতীয় মৎস্যজীবীর মৃত্যুদণ্ডও আটকাতে পেরেছি।' (আরও পড়ুন: প্রথম স্ত্রী থাকাকালীন কি দ্বিতীয় স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে বাধ্য স্বামী?)
আরও পড়ুন: আজই শেষ আলোচনা, ট্রাম্প বললেন- 'ভারতের সাথে শুল্ক চুক্তির খুব কাছাকাছি আমেরিকা'
উল্লেখ্য, ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭৪ সালে এই দ্বীপটি একটি চুক্তির মাধ্যমে শ্রীলঙ্কাকে দিয়েছিলেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্ট্যালিনের বাবা এম করুণানিধিকে আগাম অবহিত করা হয়েছিল সেই চুক্তির বিষয়ে। পরে রাজনৈতিক স্বার্থে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। ১৬৩ একরের কচ্ছতিভু দ্বীপ নিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে সরব হয়েছিল বিজেপি। এদিকে ২০২৬ সালে তামিলনাড়ুতে বিধানসভা ভোট। এহেন পরিস্থিতিতে ফের এই ইস্যুটি বড় হয়ে উঠতে পারে তামিলনাড়ুতে। (আরও পড়ুন: চিনা মাদক পাচারের অভিযোগে আমেরিকায় ধৃত পঞ্জাবি গ্যাংস্টার, কে এই ওপিন্দর সিং?)
ভারতের রামেশ্বরম এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে কচ্ছতিভু দ্বীপ অবস্থিত। যে দ্বীপ ব্যবহার করতেন ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীরা। কিন্তু ১৯৭৪ সালে 'ইন্দো-শ্রীলঙ্কান সামুদ্রিক চুক্তির মাধ্যমে ১৬৩ একরের সেই দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দেয় ভারত। এই দ্বীপ নিয়ে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে টানাপোড়েন ছিল দীর্ঘদিনের। এর জেরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব পড়ছিল। এই আবহে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে শ্রীলঙ্কার হাতে কচ্ছতিভু দ্বীপ তুলে দেওয়া হয়েছিল। তবে ভারত সরকারের সেই সিদ্ধান্তের ফলে তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল। আগে এই দ্বীপের আশেপাশের জল থেকে মাছ ধরে জীবিকা অর্জন করতেন কয়েক হাজার মৎস্যজীবী। তবে দ্বীপ হস্তান্তরের পরে সেই দ্বীপের ধারেকাছেও ভারতীয়দের ঘেঁষতে দেয় না শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী। এমনিতেও বহু ক্ষেত্রেই শ্রীলঙ্কার জলসীমায় প্রবেশ করার অভিযোগে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের গ্রেফতার করে লঙ্কার নৌসেনা।