বিহারের খসড়া তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ ভোটার বাদ গেলেও নির্বাচন কমিশন তাঁদের নামের কোনও তালিকা প্রকাশ করেনি। এই মর্মে বুধবার এক আবেদনের ভিত্তিতে ৩ দিনের মধ্যে কমিশনের জবাব তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার সকালে শীর্ষ আদালতে একটি আবেদনে বলা হয়, গত ১ অগস্ট তালিকা সংশোধনের পর যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়, তাতে ছাঁটাই হওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা নেই। আদালতকে এই বিষয়ে কমিশনকে নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মসের তরফে প্রবীণ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ সকালে আর্জি জমা দেন।সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত, উজ্জ্বল ভুঁইঞা এবং এনকে সিংয়ের বেঞ্চে আবেদনটি উত্থাপন করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আদালত এই আর্জির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য জানতে চায়।মামলাকারীদের দাবি, নির্বাচন কমিশন বলছে বিহারে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে, অথচ তাদের কোনও বিবরণ দেওয়া হয়নি। এমনকী রাজনৈতিক দলগুলিও ওই বাদ পড়া ভোটারের তালিকা পায়নি।মামলাকারীদের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের প্রশ্ন, 'বলা হচ্ছে ৩২ লক্ষ ভোটার স্থায়ীভাবে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। এ বিষয়ে অন্য কোনও বিবরণ দেওয়া হয়নি। এই ৬৫ লক্ষ কারা, কারা স্থায়ী ভাবে অন্যত্র চলে গিয়েছেন, কারা মৃত, এই সব তথ্য প্রকাশ করা উচিত।' তিনি আবেদনে বলেন, খসড়া তালিকা বলছে ৬৫ লক্ষ নাম বাদ গিয়েছে। কিন্তু, সেই ৬৫ লক্ষ নামের কোনও তালিকা দেওয়া হয়নি। কারা রাজ্য ছেড়ে গিয়েছেন এবং কারা মারা গিয়েছেন? যে খসড়ার কথা বলা হচ্ছে, তা মাত্র দুটি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য। কিন্তু অন্য এলাকার চিত্রটা কী?
এরপরেই বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর মেনে নির্বাচন কমিশনকে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকে এই তথ্য দেওয়া উচিত। কমিশনের তরফে জবাবে বলা হয়, তারা দলগুলিকে এই তথ্য দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট তখন বলে, এই বিষয়ে আদালতে লিখিত জবাব দিতে হবে।বিচারপতি সূর্য কান্ত কমিশনের কৌঁসুলিকে বলেন, যে দলগুলিকে এই তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের নাম বলা হোক। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১২ অগস্ট ফেলেছে আদালত। তারমধ্যে কমিশনকে জবাব দিতে হবে। কমিশনের কৌঁসুলিকে আদালত আরও বলেছে, 'কী প্রকাশ করা হয়েছে এবং কী প্রকাশ করা হয়নি তা আমরাও যাতে দেখতে পারি তাই শনিবারের মধ্যে জবাব দিতে হবে।'
এডিআর-এর আবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া এই ৬৫ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ২২ লক্ষ মারা গিয়েছেন, ৭ লক্ষ ভোটারের নাম একাধিক স্থানে নিবন্ধিত হয়েছে বলে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর প্রায় ৩৫ লক্ষ ভোটার হয় অন্য কোথাও চলে গিয়েছেন অথবা তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।এডিআর আরও জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের দাবি সঠিক কিনা, তা যাচাই করার জন্য এই তথ্য প্রয়োজনীয়। এছাড়া, শুধুমাত্র কিছু রাজনৈতিক দলের কাছে এই নামের তালিকা পাঠানোই যথেষ্ট নয়। কারণ এই ভাবে কমিশনের দাবি যাচাই করা সম্ভব নয়। আর এই যাচাই করা প্রয়োজনীয় কারণ, কমিশন যাদের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে, তারা ভোটার নিবন্ধন বিধিমালার অধীনে আইনি প্রতিকার পাবেন না।
উল্লেখ্য, বিরোধীদের অভিযোগ, নিবিড় সংশোধনের পর সংশোধিত যে তালিকা নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছে, সেটা ত্রুটিপূর্ণ। তাড়াহুড়োর চক্করে বুথ লেভেল অফিসাররা বহু নিয়ম বহির্ভূত কাজ করছেন। ফলে সংশোধিত ভোটার তালিকাও ত্রুটিপূর্ণ। আরজেডির অভিযোগ, বুথ লেভেল অফিসাররা টার্গেট পূরণের জন্য ভোটারদের সঙ্গে কথা না বলেই ফর্ম পূরণ করে দিয়েছেন। অনেক ভোটারের নামে ফর্ম পূরণ হয়েছে, অথচ তিনি জানেন না। বহু মৃত ভোটারের নামেও এভাবেই ফর্ম ফিল আপ হয়েছে। ফলে ভুয়ো ভোটার ধরার যে দাবি কমিশন করছে, সেটা ভ্রান্ত।