একদিকে বিএনপি-সহ বাংলাদেশের রাজনৈতিকগুলি দ্রুত ভোট করানোর দাবিতে সুর চড়াচ্ছে, অন্যদিকে মহম্মদ ইউনুসের কেয়ারটেকার সরকার নানা অছিলায় নির্বাচনের বিষয়টি যতটা সম্ভব পিছনে ঠেলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এত দিন বলা হচ্ছিল, আগে সংস্কারের কাজ সারা হবে, তারপর নির্বাচন হবে। কিন্তু, তাতে রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষেপে যাওয়ায় এবার নির্বাচন ইস্যুতে পালটা তাদের কোর্টেই বল ঠেলে দিচ্ছে ইউনুস প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ মনে করছেন, ভোটের আগে সময় কেনার জন্য এটা ইউনুস অ্যান্ড কোম্পানির নয়া কৌশল। যার আভাস পাওয়া গেল সোমবারও (২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)। এদিন ঢাকা শহরের বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন মহম্মদ ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
খুব স্বাভাবিকভাবেই এদিনও তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচন হবেটা কবে? জবাবে সেই একই কথা বলেন শফিকুল, যা আগেও এই কেয়ারটেকার প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। শফিকুল সাংবাদিকদের জানান, হয় চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে অথবা ২০২৬ সালের মার্চ মাস নাগাদ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। যে কথা ইউনুস নিজেও আগেই বলেছিলেন।
অর্থাৎ, রাজনৈতিক দলগুলি যতই দ্রুত ভোট করানোর দাবি তুলুক না কেন, ইউনুস প্রশাসন যে নিজেদের মর্জি মাফিকই চলবে, সেটা এদিন আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল। উলটে এর দায় ঘুরিয়ে কার্যত রাজনৈতিক দলগুলির উপরেই চাপালেন শফিকুল।
বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে তিনি জানান, নির্বাচন কবে হবে, তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলিরই ঐকমত্যের উপর!
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের নবগঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানেও নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট দিশা দেখা যায়নি। বরং, সেই বৈঠকেও মহম্মদ ইউনুস ফের একবার সংস্কারের উপরেই বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।
এদিকে, এরই মধ্যে বাংলাদেশে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে চলেছে। যার নেতৃত্বদের মধ্যে অন্যতম হতে চলেছেন ইউনুস প্রশাসনের অন্যতম উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। সূত্রের দাবি, কেয়ারটেকার সরকারের পদে ইস্তফা দিয়েই নতুন দলের দায়িত্ব সামলাতে চলেছেন তিনি।
নিন্দুকেরা বলছে, এই সবকিছুই হচ্ছে বর্তমান প্রশাসন ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা দফতরের মদতে। যাতে পরবর্তী নির্বাচনে এই নতুন দল গণতান্ত্রিকভাবে জিতে ক্ষমতায় আসতে পারে। তেমনটা ঘটলে সেই নির্বাচিত সরকারেও ইউনুসেরই প্রভাব থাকবে। তবে, শেষমেশ এমনটা সত্যিই ঘটবে কিনা, তার উত্তর দেবে সময়।
এদিকে, নতুন দল নিয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করবেন না বলে এদিনও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ইউনুসের প্রেস সচিব। কারণ, এটা নাকি 'সরকারি বিষয় নয়'! তবে, নাহিদ ইসলাম যে এদিনের সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক সম্মেলন হওয়া পর্যন্ত তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দেননি, তা স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন শফিকুল।
পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, এদিন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সমস্ত সরকারি দফতরে ই-ফাইলিং ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন মহম্মদ ইউনুস।