ভারত-চিন সীমান্ত সংঘর্ষ ও গালওয়ান উপত্যকার বিষয়ে সেনা ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়। আর এই মামলার সূত্র ধরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও একবার তীব্র হয়েছে। এই আবহে শীর্ষ আদালতের সমালোচনা করে দাদা রাহুল গান্ধীর পাশে দাঁড়ালেন বোন এবং কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
মঙ্গলবার সংসদ চত্বরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, 'মাননীয় বিচারপতিদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি বলতে চাই যে কে প্রকৃত ভারতীয় তা তাঁরা নির্ধারণ করতে পারেন না। সরকারকে প্রশ্ন করা বিরোধী দলনেতার কর্তব্য। আমার ভাই কখনও ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে মন্তব্য করবে না। সেনাবাহিনীর প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। এটি ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।' সোমবার ভারতের জমি দখল করে নিয়েছে চিন, এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই শীর্ষ আদালতের কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তবে সুপ্রিম কোর্টের তরফে আপাতত ফৌজদারি মানহানির মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
সোমবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'আপনি কীভাবে জানলেন চিন ২,০০০ বর্গকিমি ভারতীয় জমি দখল করেছে? আপনি যদি প্রকৃত ভারতীয় হন, তাহলে আপনি এ ধরনের মন্তব্য করবেন না। আপনি কী গালওয়ানে ছিলেন? আপনার কাছে কি কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রমাণ আছে?' তখন প্রবীণ আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি যুক্তি দেন যে একজন বিরোধী দলনেতা হিসেবে রাহুল গান্ধীর এমন প্রশ্ন তোলার অধিকার রয়েছে। এরপরেই বিচারপতি দত্ত কড়া জবাব দেন, 'তাহলে আপনি সংসদে এমন কথা বলুন, রাস্তায় নয়।' তবে এই তীব্র ভর্ৎসনার মধ্যেও শীর্ষ আদালত রাহুল গান্ধীর পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলাটি খারিজ করেনি। বরং মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশের তরফে কোনও শুনানির সুযোগ না দিয়ে সরাসরি বিচার গ্রহণের প্রসঙ্গ তুলে সিংভি যুক্তি দেন যে, এতে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি হয়েছে। সেই যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট মামলাটিতে স্থগিতাদেশ জারি করে এবং যোগ্যতাসম্পন্ন সব পক্ষকে নোটিশ পাঠায়।এর আগে মে মাসে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট রাহুল গান্ধীর একই আবেদন খারিজ করে দেয়। বিচারপতি সুব্রত বিদ্যার্থী রায় দেন, 'মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানেই এই নয় যে কেউ সেনাবাহিনীকে অপমান করবে বা মানহানিকর মন্তব্য করবে।'
ঘটনার সূত্রপাত
২০২০ সালের জুন মাসে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চিনের সেনাবাহিনীর সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হন। সেই প্রেক্ষিতে 'ভারত জোড়ো যাত্রা' চলাকালীন রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, ওই ঘটনার পর চিন প্রায় ২,০০০ বর্গকিমি ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে এবং নরেন্দ্র মোদী সরকার কার্যত 'আত্মসমর্পণ' করেছে। এই মন্তব্য নিয়েই লখনউতে এক নির্বাচিত প্রতিনিধি সংক্রান্ত বিশেষ আদালতে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানির মামলা দায়ের হয়। সেই মামলাতেই এবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়।