গণপিটুনির পৈশাচিক রূপ দেখল উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ জেলা! গত সোমবার ভোররাতে এক যুবককে এই এলাকায় গণপিটুনি দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল, তিনি নাকি গোহত্যা করেছেন। আর সেই কারণেই তাঁকে পিটিয়ে খুন করল একদল উন্মাদ ও উন্মত্ত জনতা।
সেই হতভাগ্যের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, মারের চোটে তাঁর শরীরের একাধিক অঙ্গ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল! তাঁর দু'টি ফুসফুস ফুটো হয়ে গিয়েছিল! ফেটে গিয়েছিল তাঁর যকৃত! বুধবার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট উল্লেখ করে একথা জানিয়েছেন পুলিশের এক তদন্তকারী আধিকারিক।
উল্লেখ্য, গণপিটুনির শিকার হওয়ার পর ওই যুবককে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তাঁর চিকিৎসা শুরু করা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। প্রায় ২১ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর হার মানেন তিনি।
পুলিশের নথি অনুসারে, গণপিটুনির ঘটনাটি ঘটেছিল সোমবার ভোর ৩টে ৩০ মিনিট নাগাদ। মোরাদাবাদের মাঝোলা থানার অন্তর্গত মান্ডি স্মৃতি চত্বরের মধ্যেই শাহে দীন নামে ৩৫ বছরের ওই ব্যক্তিকে উন্মত্ত জনতা ধরে গণপিটুনি দেয়। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সোমবার মধ্যরাতের পর মঙ্গলবার ভোররাত ১২টা ৩০ মিনিটে মৃত্যু হয় শাহে দীনের।
তাঁর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট উল্লেখ করে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, শাহে দীনের শরীরে অন্তত ১৪টি গুরুতর চোট ছিল। তাঁর লিভার বা যকৃত ফেটে যাওয়ায় এবং দু'টি ফুসফুস ফুটে হয়ে যাওয়াতেই তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
বুধবার এই ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন মোরাদাবাদের প্রাক্তন সপা সাংসদ এসটি হাসান। তাঁর দাবি, পুলিশকে এই ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত খুঁজে বের করে তাদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে হাসান বলেন, শাহে দীন কি আদৌ গোহত্যা করেছিলেন? আগে সেটা তদন্ত করে দেখা হোক। আর, তাতে যদি প্রমাণিত হয়, তিনি গোহত্যা করেছিলেন, তাহলেও তাঁর শাস্তি বিধান করার কথা আদালতের।
মোরাদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শহর) কুমার রণবিজয় সিং জানিয়েছেন, এই ঘটনায় ইতিমধ্য়েই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তাতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর ১০৩ (১) নম্বর ধারা অনুসারে, খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। তবে, সবটাই করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় আততায়ীদের বিরুদ্ধে।
নিহত যুবকের দাদা মঙ্গলবার এই ঘটনায় যে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তারই ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এএসপি সিং।