মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মতো এবার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানির খেলায় ময়দানে নেমে পড়েছে ভারত।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্লোগানে ভর করে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও ভারত ক্রমশ ‘আত্মনির্ভর’ হয়ে উঠছে। এক সময়ে বিশ্বের উন্নত দেশগুলির অস্ত্রের জন্য মুখাপেক্ষী থাকা ভারত বর্তমানে বিশ্বের ৯০টি দেশকে অস্ত্র বিক্রি করছে। আর সেই দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হল ফিলিপিন্স।ঐতিহ্যগত সহযোগিতার গণ্ডি ছাড়িয়ে ভারত-ফিলিপিন্স সম্পর্ক এখন প্রতিরক্ষা, কৌশল, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির মতো বহু ক্ষেত্রে গভীরতা পাচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে ফিলিপিন্সের সম্পর্ক বহু দশকের পুরনো। এবার সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চার দিনের সফরে দিল্লি এসেছেন ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র। ভারত ও ফিলিপিন্স হল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বড় দুই গণতন্ত্র।বিগত কয়েক বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বেড়েছে দুই দেশের মধ্যে। এই সম্পর্ক কতটা মজবুত, তা বোঝা যায় একথা থেকে যে, ভারতের তৈরি ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল প্রথম যে দেশ কিনেছিল, তা হল ফিলিপিন্স। শুধু তাই নয়, আরও ভারতীয় প্রতিরক্ষা সামগ্রী কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে ম্যানিলা। ফিলিপিন্সের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান রোমিও ব্রাউনার ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের প্রতি তাঁর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের গুণমান এবং সাশ্রয়ী মূল্যের কথা উল্লেখ্য করেছেন তিনি। তিনি আশাবাদী যে আগামী বছরগুলিতে আরও দুটি সেট ব্রাহ্মোস মিসাইল সিস্টেম ফিলিপিন্সের হাতে এসে পৌঁছবে।
আরও পড়ুন-মৃত্যু মিছিল অব্যাহত! উত্তরপ্রদেশে ভয়াবহ বন্যা, বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচল
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ফিলিপিন্সের সঙ্গে ব্রহ্মস চুক্তি সাক্ষর করেছিল নয়া দিল্লি। যার আওতায় মোট তিনটি ব্রহ্মস মিসাইলের ব্যাটারি ওই দেশে পাঠানোর কথা ছিল ভারতের। এরপর ঠিক দু’বছর পর প্রথম পর্যায়ে ব্রহ্মস চুক্তি মোতাবেক মিসাইলের সরঞ্জাম পাঠিয়েছিল ভারত। সেই চুক্তি মেনেই ভারতের থেকে আরও ব্রহ্মস ব্যাটারি আনতে দ্বিতীয় দফায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি সাক্ষর করে দুই দেশ। প্রথমবার ব্যাটারিগুলি পাঠানো হয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনার মাধ্যমে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ রয়েছে ফিলিপিন্সের। চিন পুরো দক্ষিণ চিন সাগরকে তার নিজস্ব অঞ্চল বলে দাবি করে থাকে।সেই দাবির বিরোধিতায় ফিলিপিন্সকে বরাবরই সমর্থন জানিয়েছে ভারত।এরমধ্যেই দক্ষিণ চিন সাগরে রবিবার থেকে শুরু হয়েছে ভারত-ফিলিপিন্স নৌবাহিনীর যৌথ সামরিক মহড়া, যা দুই দেশের পারস্পরিক আস্থার প্রতিচ্ছবি।ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা কারও চাপের কাছে মাথা নত করে না এবং তার বন্ধুদের সাথে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এই জোয়ারঃ মহড়া ভারত-ফিলিপিন্সের বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করবে না, বরং চিনকে একটি বার্তাও দেবে যে ভারত আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চুপ করে বসে থাকবে না।নৌবাহিনী সূত্রে খবর, ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বর্তমানে ফিলিপিন্স-এ রয়েছে।ফিলিপিন্সের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান বলেন, রবিবার থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের যৌথ সামরিক মহড়া এখন পর্যন্ত সফল। চিনের হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা এখনও পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হইনি। তবে আমরা এতোক্ষণ ছায়ার আড়ালে ছিলাম।'
আরও পড়ুন-মৃত্যু মিছিল অব্যাহত! উত্তরপ্রদেশে ভয়াবহ বন্যা, বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচল
গত কয়েক বছরে ভারত ও ফিলিপিন্স শুধু প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ায়নি, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সমুদ্র নিরাপত্তার মতো নানা ক্ষেত্রেও নতুন মাত্রা যোগ করেছে।বাণিজ্যিক সম্পর্কও মজবুত হচ্ছে। ফিলিপিন্স ভারতের 'অ্যাক্ট ইস্ট' নীতির অন্যতম স্তম্ভ। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। তথ্যপ্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল, অটোমোবাইল ও কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা বেড়েছে।এর আগে ২০২৩ সালে ভারত ও ফিলিপিন্স তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে 'স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ'-এর স্তরে নিয়ে যাওয়ার আলোচনা করে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থের কারণে বহুপাক্ষিক মঞ্চেও একযোগে কাজ করছে দিল্লি ও ম্যানিলা।