কোভিড-১৯ অতিমারী মুম্বইয়ের মায়েকার পরিবারকে পরিবেশ অনুকূল মূর্তি তৈরির থেকে কোনও ভাবেই দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনি। অতিমারীর জেরে মূর্তি তৈরির সামগ্রীর জোগান কম থাকলেও, ইচ্ছায়ে ভাটা পড়েনি। দীর্ঘ বছর ধরে এই পরিবার টিস্যু পেপার ও বাঁশ দিয়ে গণেশ মূর্তি বানিয়ে আসছে। এ বছরও তাঁর ব্যতিক্রম ঘটতে দেননি তাঁরা।
চলতি বছরে, সত্তরের দিগম্বর মায়েকার ও তাঁর দুই ছেলে সুনীল ও রাজেশের নেতৃত্বে ভিলে পার্লেচা পেশোয়া বাল গোপাল মিত্র মণ্ডল এমনই ৩৫টি মূর্তি বানিয়েছে। ৩ থেকে ৫ ফুটের এক একটি মূর্তি তৈরিতে প্রায় ১৫ হাজার টিস্যু পেপার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রতিমা তাঁদের ভিলে পার্লে (ইস্ট)-র পুজো মণ্ডপের শোভা বাড়িয়েছে। বাকিগুলি বান্দ্রা, গোরেগাঁও, আন্ধেরী, যোগেশ্বরী, সান্তাক্রুজ, থানে এবং কল্যাণের মণ্ডপ ও বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, বিসর্জনের ৩০ মিনিটের মধ্যেই এই মূর্তিগুলি জলে মিলে যাবে।

২০১৫ সালে মহারাষ্ট্র নেচার পার্ক সোসাইটির একটি সমীক্ষায় উঠে আসে যে, প্লাস্টার অফ প্যারিসের পরিবর্তে, যে মূর্তিগুলি ৯৫ শতাংশ পেপার পাল্প, ৪ শতাংশ প্রাকৃতিক আঠা ও ১ শতাংশ নন টক্সিক উপাদান দিয়ে তৈরি, সেগুলি সহজেই জলের সঙ্গে মিলে যায়। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিক নির্দেশে প্লাস্টার অফ প্যারিসের ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। মায়েকার জানিয়েছেন, অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে তৈরি মূর্তির তুলনায় তাঁদের নির্মিত মূর্তিগুলি অত্যধিক কম মাত্রায় দূষণ ছড়ায়।
বৃহন্মুম্বই সার্বজনিক গণেশোৎসব সমন্বয় সমিতির সভাপতি নরেশ দহিভাবকার জানিয়েছেন, মায়েকারের মডেলকে তাঁরা ২০২১ সাল থেকে বাস্তবায়িত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তাঁদের আশা ততদিনে পরিবেশ অনুকূল মূর্তিই সর্বজনগ্রাহ্য হবে। চলতি বছরে ৭ হাজার ইকো ফ্রেন্ডলি ও ১২ হাজার পিওপি-র মূর্তি তৈরি হয়েছে। যদিও ৮০ শতাংশ বাড়িতে পরিবেশ অনুকূল মূর্তি স্থাপিত।
সুনীল মায়েকার জানান, মূর্তিগুলির কাঠামো বানানো হয় প্রাকৃতিক আঠার সাহায্যে বাঁশ আটকে। তার পর সেই কাঠামোটিকে জলের সাহায্যে খবরের কাগজে ঢাকা টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে গণেশের আকার দেওয়া হয়। এর পর প্রায় দুমাস শুকিয়ে, এতে প্রাকৃতিক রং ও দ্রবণশীল সামগ্রীর সাহায্যে গণেশের মূর্তিকে সাজিয়ে তোলা হয়। এই সামগ্রীগুলি জলজ পরিবেশের কোনও ক্ষতি করে না। এমনকি, বিসর্জনের আগে বাঁশ গুলিকেও সরিয়ে ফেলা হয়। এর ফলে এটি দ্রুত জলে ঘুলে যায়। অন্যদিকে, মাটির তৈরি মূর্তিগুলি জলের রঙে প্রভাব ফেলে।

সুনীল আরও জানান, দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে ১৩ হাজার থেকে ১৭ হাজারের মধ্যে দাম পড়ে এই মূর্তিগুলির। গত পাঁচ বছর ধরে তাঁরা ১১ ফুট থেকে শুরু করে ২২ ফুটের মূর্তি বানিয়েছেন। ২২ ফুটের মূর্তি তৈরিতে ৫৫ হাজার টিস্যু পেপার ব্যবহার করা হয়েছে।
খাঁটি পরিবেশ অনুকূল মূর্তি কোনগুলি:
- যে মূর্তিগুলি বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে জলে দ্রবীভূত হতে শুরু করে।
- সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে যেগুলি জলে গুলে যায়।
- কোনও ভাবেই জলদূষণের কারণ হয় না।
- কোনও ধরনের অবশিষ্ট উপাদান ছাড়াই জলজ পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়।
(উৎস: মহারাষ্ট্র দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড)