‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে ১৬ ঘণ্টার বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করা হয়েছে লোকসভায়। সোমবার বাদল অধিবেশনে এই বিশেষ আলোচনা হওয়ার কথা। এই আবহে পহেলগাঁও হামলা নিয়ে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের বক্তব্যে চড়ল পারদ। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার আগেই মন্ত্রী কিরেন রিজিজু পাকিস্তানের উপর ভারতের পদক্ষেপকে হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অন্যদিকে পি চিদম্বরম প্রশ্ন তুলেছেন, পহেলগাঁও হামলার জড়িতরা পাকিস্তান থেকেই এসেছিল, তার প্রমাণ কী?
লোকসভার তালিকাভুক্ত অ্যাজেন্ডা অনুযায়ী, সোমবার পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার জবাবে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বিশেষ আলোচনা হবে সংসদে। লোকসভায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। অংশ নেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর, নিশিকান্ত দুবেরা। রাজ্যসভায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনা হবে মঙ্গলবার।আলোচনায় অংশ নেবেন ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বিদেশে সফর করা প্রতিনিধি দলের সদস্যরাও।তার আগে এক্স বার্তায় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, 'যখন রাবণ লক্ষ্মণ রেখা অতিক্রম করেছিল, তখন লঙ্কা পুড়ে গিয়েছিল। যখন পাকিস্তান ভারতের টানা রেড লাইন অতিক্রম করেছিল, তখন সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলিও অগ্নিকাণ্ডের মুখোমুখি হয়েছিল!' একইসঙ্গে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যের কিছু অংশ তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
এদিকে এক সাক্ষাৎকারে পি চিদম্বরম বলেন, পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার হামলার পর এনআইএ কী কাজ করেছে তা প্রকাশ করতে চাইছে না কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁর কথায়, 'এনআইএ কী সন্ত্রাসবাদীদের শনাক্ত করেছে? তারা কোথা থেকে এসেছিল? আমরা যতদূর জানি, ওই জঙ্গিরা এ দেশের হতে পারে। আপনি কেন ধরে নিচ্ছেন যে তারা পাকিস্তান থেকেই এসেছে? এর কোনও প্রমাণ নেই।' এরপরেই চিদাম্বরম অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের পাল্টা স্ট্রাইক 'অপারেশন সিন্দুরে'র সময় ক্ষতির পরিমাণ গোপন করছে। তিনি বলেন, 'তারা ক্ষতির পরিমাণও গোপন করছে। আমি একটি কলামে বলেছিলাম যে যুদ্ধে উভয় পক্ষেরই ক্ষতি হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উইনস্টন চার্চিল প্রতিদিনই একটি বিবৃতি দিতেন। ব্রিটেনের যত ক্ষতিই হোক না কেন, তারা তা স্পষ্ট জানাতেন। কিন্তু কেন্দ্র ক্ষতি স্বীকার করতে নারাজ। কিন্তু যুদ্ধে ক্ষতি অনিবার্য এবং স্বাভাবিক। তাই, ক্ষতি স্বীকার করুন।'
এরপরেই কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। এক্স পোস্টে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য লেখেন, 'আবারও কংগ্রেস পাকিস্তানকে ক্লিনচিট দিতে তাড়াহুড়ো করছে-এবার পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর। কেন আমাদের বাহিনী যখনই পাকিস্তান-স্পন্সরিত সন্ত্রাসবাদের মুখোমুখি হয়, তখনই কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য ভারতের বিরোধী দলের চেয়েও ইসলামাবাদের আইনজীবীদের মতো বেশি শোনায়?' তিনি আরও বলেন, 'জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনও অস্পষ্টতা থাকা উচিত নয়। কিন্তু কংগ্রেসের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না-তারা শত্রুকে রক্ষা করার জন্য সর্বদা ঝুঁকে পড়ে।'
আরও পড়ুন-৯০ হাজারে শিশুকে কিনে ৩৫ লাখে বিক্রি! অবৈধ সারোগেসি চক্রের পর্দাফাঁস, হায়দরাবাদে গ্রেফতার চিকিসক-সহ ৮
পহেলগাঁওয়ের হামলার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ভারত। গত ৬ মে মধ্যরাতে সেখানে সেনা অভিযান চালানো হয়। ভারতের হামলায় গুঁড়িয়ে যায় একাধিক পাক জঙ্গিঘাঁটি। তারপর টানা চার দিন দুই দেশের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ চলেছে। ১০ মে ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশের সংঘর্ষ বিরতির কথা প্রথম সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, তাঁর মধ্যস্থতাতেই এই সংঘর্ষ বিরতি সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ভারত এখনও ট্রাম্পের সেই দাবিকে মান্যতা দেয়নি।