যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মর্মান্তিক ঘটনা। আল-শিফা হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের জন্য তৈরি একটি তাঁবুতে ইজরায়েলি হামলয় নিহত হলেন আল জাজিরার পাঁচ সাংবাদিক। কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন খ্যাতনামা প্রতিবেদক আনাস আল-শরিফ (২৮) এবং তাঁর সহকর্মী মহম্মদ কুরেইকেহ, ক্যামেরা পার্সন ইব্রাহিম জাহের, মোআমেন আলিওয়া এবং মহম্মদ নুফাল। মোট সাত জনের মৃত্যু হয়েছে এই হামলায়।আর মৃত্যুর ঠিক পরে সাংবাদিক আল-শরিফের সোশ্যাল মিডিয়ায় থেকে আবেগঘন বার্তা প্রকাশ্যে এসেছে। (আরও পড়ুন: অপারেশন সিঁদুরে বাঙ্কারে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানি মুনিরের নিশানায় মুকেশ আম্বানি!)
আরও পড়ুন: ট্যারিফ যুদ্ধের মাঝে অজান্তেই 'আসল লড়াইতে ভারতের উপকার' করছেন ট্রাম্প?
আল-শরিফ উত্তর গাজা থেকে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত প্রতিবেদন করে আসছিলেন।আল জাজিরা দাবি করেছে, রবিবার দুপুরে হাসপাতালের মূল ফটকের বাইরে সাংবাদিকদের জন্য তৈরি করা তাঁবুতে সরাসরি নিশানা করে এই হামলা চালানো হয়। হামলার পরপরই ইজরায়েলি সেনা মুখপাত্র আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে, আল-শরিফকে টার্গেট করেই হামলা চালানো হয়েছে। ইজরায়েলের অভিযোগ, তিনি আসলে হামাসের একজন সন্ত্রাসী এবং একটি সেল-এর প্রধান ছিলেন। ইজরায়েলের অসামরিক লোকজন ও সেনাদের উপর রকেট হামলার পরিকল্পনা করছিলেন ওই সাংবাদিক।আল-শরিফ এই হামলার ঠিক আগেই এক্স হ্যান্ডেলে গাজা সিটিতে তীব্র ইজরায়েলি বোমাবর্ষণের কথা জানিয়েছিলেন।মৃত্যুর আগে আনাস আল শরিফ একটি বার্তা দিয়ে যান। তাঁর যদি মৃত্যু হয়, তাহলে যেন আল জাজিরার তরফে এই বার্তা প্রকাশ করা হয়, সে বিষয়ে তিনি আবেদন জানান। মৃত্যুর পর তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে এক বার্তা পোস্ট হয়, লেখা হয়, ‘যদি এই কথাগুলো তোমরা পড়তে পারো, জেনে রেখো, ইজরায়েল আমাকে হত্যা করতে এবং আমার কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করতে সফল হয়েছে।’ (আরও পড়ুন: পূর্ব ভারত থেকে হামলা শুরু করব, হুমকি দিয়ে দাবি পাক সেনাপ্রধান মুনিরের)
আরও পড়ুন-'এই কলিযুগে এত ভালবাসা...,' রাখি পূর্ণিমায় রেকর্ড গড়ে আবেগাপ্লুত খান স্যার
তিনি আরও জানান, মানুষের কণ্ঠকে যাতে পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা তিনি করতেন। জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে মানুষ কীভাবে বসবাস করছিলেন, সেই ছবি সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান আনাস আল শরিফ। সবকিছু মিলিয়ে আইডিএফ যেভাবে জেনে বুঝে গাজার মানুষকে হত্যা করছে, তা তাঁর শেষ বার্তা প্রকাশ করে যান আনাস আল শরিফ। তাঁর কথায়, 'আমি সমস্ত যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে বেঁচে আছি, বহুবার দুঃখ-কষ্টের স্বাদ পেয়েছি, তবুও আমি কখনও সত্যকে প্রকাশ করতে দ্বিধা করিনি - যাতে আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হন যারা নীরব ছিলেন। আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, শৃঙ্খল তোমাদের নীরব করে দেবে না, সীমান্ত তোমাদের আটকে রাখবে না। আমাদের দখল করা মাতৃভূমির উপর মর্যাদা ও স্বাধীনতার সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত, ভূখণ্ড এবং জনগণের মুক্তির সেতুবন্ধন করো। আমি তোমাদের আমার পরিবারের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করছি।' (আরও পড়ুন: ঢুকে পড়ল 'জঙ্গি', স্বাধীনতা দিবসের আগে তৃতীয়বার নিরাপত্তা লঙ্ঘন লালকেল্লায়)
আরও পড়ুন-'এই কলিযুগে এত ভালবাসা...,' রাখি পূর্ণিমায় রেকর্ড গড়ে আবেগাপ্লুত খান স্যার
এদিকে, সংবাদ সম্প্রচারের সময় সহকর্মীদের মৃত্যুসংবাদ দিতে গিয়ে কান্না সামলাতে পারেননি এক আল জাজিরার উপস্থাপক। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আল-শরিফ ছিলেন উত্তর গাজার অন্যতম পরিচিত কণ্ঠ, প্রতিদিনের পরিস্থিতি সরাসরি জানাতেন দর্শকদের।’ সংবাদপত্র কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাঁদের দাবি, ‘সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দেওয়ার অভ্যাস ইজরায়েলের, কিন্তু কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ না দেওয়া, এটি প্রেস স্বাধীনতার প্রতি গভীর অবজ্ঞা প্রকাশ করে। সাংবাদিকরা তো অসামরিক শ্রেণিতে পড়ে, তাঁদের টার্গেট করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’ উল্লেখ্য ২২ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের মধ্যে সাংবাদিকদের উপর হামলার সর্বশেষ ঘটনা এটি। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলির হিসেব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০ সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন।