বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ হল ভারত। ভারতের মোট তেল আমদানির অন্তত ৩৫ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। যা নিয়ে ক্ষিপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিমধ্যে ভারতের পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন তিনি। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে গেলে ভারতকে জরিমানাও দিতে হবে। এই আবহে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে চুপিসারে নিজের সমীকরণ বদলে ফেলছে ভারত। রাশিয়ার উপর নির্ভরতা বজায় রেখেই হু-হু করে বাড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি।
সরকারি সূত্রের দাবি, ২০২৫ সালের প্রথম ছ’মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের খনিজ তেল আমদানি বেড়েছে ৫১ শতাংশ। খরচও হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।কেবল অশোধিত তেল নয়, এলপিজি এবং এলএনজির মতো গ্যাসও আগের থেকে অনেক বেশি পরিমাণে কেনা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে।২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন, এই সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত দৈনিক আমদানি করত ১.৮ লক্ষ ব্যারেল। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছেন ২০ জানুয়ারি। তারপর থেকেই ২০২৫-এ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দিনে ২.৭১ লক্ষ ব্যারেলে। অর্থাৎ আমদানির গতি বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, শুধুমাত্র এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসেই মার্কিন তেল আমদানি বেড়েছে ১১৪ শতাংশ। আর এই পরিমাণ তেলের জন্য ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে যেখানে খরচ হয়েছিল ১৭৩ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা), ২০২৫ সালে সেটাই গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭০ কোটি ডলারে (৩২ হাজার কোটি টাকা)।আপাতত মার্কিন তেল আমদানি কমার কোনও সম্ভাবনা তো নেই। উল্টে আগামী দিনে তা আরও বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন-মর্মান্তিক মৃত্যু! পুরীর নাবালিকাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় শোরগোল
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন মাসের তুলনায় জুলাইয়েই আবার ২৩ শতাংশ বেড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি। ফলে সামগ্রিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতের মোট তেল আমদানির ৮ শতাংশ জোগাচ্ছে। আগে যা ছিল মাত্র ৩ শতাংশ।শুধু খনিজ তেল নয়, এলপিজি ও এলএনজি-র মতো জ্বালানি গ্যাসের ক্ষেত্রেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা বেড়েছে ভারতের। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এলএনজি আমদানি দ্বিগুণ হয়েছে আগের বছরের তুলনায়।২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এলএনজি আমদানির পরিমাণ প্রায় ১০০ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে, সম্প্রতি ট্রাম্প ভারতের উপর প্রকাশ্যে অসন্তোষের পরেও নয়া দিল্লি কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার বার্তা দিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়ালকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাশিয়ার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়েও এগিয়েছে। প্রতিরক্ষায় দু’দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে।' রাশিয়ার নাম এড়িয়েই তিনি বলেন, 'তৃতীয় কোনও দেশের আয়নায় সম্পর্ক দেখা উচিত নয়।'
আরও পড়ুন-মর্মান্তিক মৃত্যু! পুরীর নাবালিকাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় শোরগোল
তেল আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান খুবই বাস্তববাদী, বাজারের দর, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, দেশের চাহিদা-এই সব কিছুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমদানি চালানো হচ্ছে বলে স্পষ্ট বার্তা দেন তিনি। বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেন, 'ভারত পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হতে চলেছে। তাই নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থের বিষয়ে ভারত অবশ্যই সজাগ থাকবে।' তবে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মার্কিন তেল আমদানিও। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, এর নেপথ্যে কি ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ? নাকি তেল বাণিজ্যের সমীকরণ বদলাচ্ছে নয়া দিল্লি?