কলেজের ভিতরে আবারও নির্যাতনের শিকার এক ছাত্রী। যার জেরে মর্মান্তিক পরিণতি হল তাঁর। গ্রেটার নয়ডার শারদা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিডিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল কক্ষে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশি তৎপরতায় মেলে একটি সুইসাইড নোট, যেখানে সরাসরি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে হেনস্তা, অপমান ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন তিনি। এবার সেই ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠেছে ওই ছাত্রীর বাবার বয়ানে।
জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডার পার্ক পুলিশ স্টেশন এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্রী শারদা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিডিএস-এর দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ছিল। গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যে হস্টেলের ঘরে আত্মঘাতী হন তিনি। পড়ুয়াদের থেকে খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। তাঁর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। সঙ্গে সেই ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে তারা। যেখানে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে হেনস্থার গুরুতর অভিযোগ করেছিলেন তিনি। চিঠিতে তরুণী লিখেছিলেন, পিসিপি ও ডেন্টাল মেটেরিয়ালসের শিক্ষক বারবার হেনস্থা করেছেন তাঁকেই। তাঁরাই তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী। কলেজে এলেই নানাভাবে হেনস্থার শিকার হতেন তিনি। সহপাঠীদের সামনে দিনের পর দিন অপমানিত হতে হয়েছে। মানসিক নির্যাতন আর সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
আরও পড়ুন-লিভ-ইন সম্পর্কের মর্মান্তিক পরিণতি! পুলিশ অফিসারকে খুনের পর CRPF জওয়ান যা করলেন...
ছাত্রী আত্মঘাতী হবার পর ওই তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে বৈঠক বসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্তের জন্য পাঁচ দিন সময় চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আত্মঘাতী ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই ওই দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।এই ঘটনায় ছয়জন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী এবং একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি-সহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে, কলেজ থেকে দুই অভিযুক্তকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
এই আবহে মৃত ছাত্রীর বাবা জানান, ' বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সদস্যের আচরণের কারণে আমার মেয়ে প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে ছিল। কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের সঙ্গে আমার দেখা করে অভিযোগ জানানোর সত্ত্বেও, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা মৌখিক আশ্বাস দিলেও, মেয়েকে ক্রমাগত হয়রানি করা হচ্ছিল।' তিনি আরও বলেন, ' মেয়ে আমাদের বলেছিল যে তাঁকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না। পরের দিনই সে চলে গেল।' অন্যদিকে, ছাত্রীর মৃত্যুকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছলেও পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। পুলিশের সঙ্গেও বিক্ষুব্ধ পড়ুয়াদের ধস্তাধস্তি হয়। এই ঘটনার পরেই অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন-লিভ-ইন সম্পর্কের মর্মান্তিক পরিণতি! পুলিশ অফিসারকে খুনের পর CRPF জওয়ান যা করলেন...
প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগেই ওড়িশার বালাসোরেও অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ জানিয়ে, কলেজের করিডোরে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন এক ছাত্রী। দেহের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল তাঁর। দিন কয়েক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। মঙ্গলবার হাসপাতালে ছাত্রীর মৃত্যু হয়।