সাতসকালে মুম্বইয়ের কর্পোরেট মহলে শোরগোল। বৃহস্পতিবার শিল্পপতি অনিল আম্বানির সংস্থার একাধিক ঠিকানায় তল্লাশি চালিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া রিলায়েন্স কমিউনিকেশন এবং এর প্রোমোটার-ডিরেক্টর অনিল আম্বানিকে ‘প্রতারক’ ঘোষণা করার পরপরই এই অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ইডি-র তদন্ত মূলত ঘিরে রয়েছে রিলায়েন্স গ্রুপ অফ কোম্পানিজ-এর বিরুদ্ধে আনা আর্থিক প্রতারণার অভিযোগকে কেন্দ্র করে। যদিও অনিল আম্বানির ব্যক্তিগত বাসভবনে এদিন তল্লাশি চালানো হয়নি। মুম্বই ও দিল্লি থেকে আসা ইডি-র যৌথ টিম তাঁর সংস্থাগুলির গুরুত্বপূর্ণ দফতর ও কর্পোরেট অ্যাকাউন্টের উপর নজরদারি চালায়।মুম্বই ও দিল্লির ৫০টি অফিসের ৩৫টিরও বেশি ভবনে তল্লাশি চলেছে। পাশাপাশি অভিযোগে নাম থাকা ২৫ জনের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়েছে।এই মামলায় ২৫ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।এসবিআই 'প্রতারক' ঘোষণার পর বিভিন্ন রেগুলেটরি এবং ফিনান্সিয়াল সংস্থার থেকে ইনপুটের ভিত্তিতেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের এই হানাদারি বলে জানা গিয়েছে। ন্যাশনাল হাউসিং ব্যাঙ্ক, সেবি, ন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং অথোরিটি, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা এবং সিবিআই-এর দায়ের করা দুই এফআইআর-এর ভিত্তিতে অনিল আম্বানির সংস্থায় হানা দেয় ইডি।
আরও পড়ুন-অভিনয়ে ফিরেই রাজনীতি থেকে অবসর! প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যা বললেন...
সূত্রের খবর, তদন্তের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকার ঋণ। অভিযোগ, এই ঋণের একাংশ বেআইনি পথে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিছু অজ্ঞাত সংস্থার মাধ্যমে টাকার গন্তব্য পাল্টানো হয়, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যার মধ্যে রয়েছে সেবি, এনএইচবি, এনএফআরএ, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা এবং সিবিআই।ইডি-র ধারণা, এই অর্থ তছরুপের কৌশল পূর্ব পরিকল্পিত। এতে শেয়ারহোল্ডার, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগকারী, এমনকি ব্যাঙ্কগুলিও প্রতারিত হয়েছেন। তদন্তে উঠে এসেছে, রিলায়েন্স হোম ফাইনান্স-এর কর্পোরেট ঋণ বিতরণের হার একটি বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়, যা আর্থিক অস্বচ্ছতার বড় ইঙ্গিত।
আরও পড়ুন-অভিনয়ে ফিরেই রাজনীতি থেকে অবসর! প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যা বললেন...
২০১৬ সাল থেকে আরকম সংস্থার ঋণ অনাদায়ী। সেই সূত্র ধরেই, চলতি বছরের ১৩ জুন, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা মেনে, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে অনিল আম্বানি এবং রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস-কে ‘প্রতারক’ ঘোষণা করে।এছাড়াও, আরকম বর্তমানে দেউলিয়া ঘোষণা হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে। ইন্সলভেন্সি কোড অনুযায়ী সংস্থা ও ব্যক্তিগত উভয় স্তরেই অনিলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। মামলাগুলি মুম্বইয়ের এনসিএলটি-তে বিচারাধীন।এই ঘটনা কেবল একটি কর্পোরেট হাওয়ালার ইঙ্গিত নয়, বরং দেশের কর্পোরেট জগতের একাংশে দীর্ঘদিন ধরে চলা অস্পষ্ট আর্থিক ব্যবস্থাপনার পর্দাফাঁস। অনিল আম্বানির মতো এক সময়ের কর্পোরেট টাইটানের এমন পতন ভারতীয় শিল্প জগতের কাছে বড় সতর্ক সংকেত।