দিল্লি ও অন্যান্য রাজ্য থেকে পাচারকারীদের হেফাজতে থাকা ৭৬ শিশুর সন্ধান করার জেরে ব্যতিক্রমী পদোন্নতি ঘটল মহিলা পুলিশ হেড কনস্টেবল সীমা ঢাকার। বুধবার দিল্লি পুলিশ কমিশনার এস এওন শ্রীবাস্তব আনুষ্ঠানিক ভাবে এই পদোন্নতি কার্যকর করেছেন। সময়পুর বদলি থানার পুলিশকর্মী সীমাই প্রথম এমন পদোন্নতিতে পুরষ্কৃত হলেন।
গত অগস্ট মাসে ১৪ বছরের কম ৫০টি শিশুকে উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত সমস্ত কনস্টেবল ও হেড কনস্টেবলের ব্যতিক্রমী পদোন্নতির ঘোষণা করেন শ্রীবাস্তব। তিন মাসের কম সময়ে মোট ৭৬টি শিশুকে উদ্ধার করেন সীমা ঢাকা। তাদের মধ্যে ৫৬ জনের বয়স ৭-১২ বছরের মধ্যে।
সীমা জানিয়েছেন, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হরিয়ানা ও পঞ্জাব থেকে ওই শিশুদের উদ্ধার করা হয়েছে। মাসের পর মাস ধরে তিনি এই সব মামলায় কাজকরেন বলেও জানিয়েছেন মহিলা কনস্টেবল। তাঁর দক্ষতা দেখে এই ধরনের অপরাধ সমাধান করতে তাঁকেই এগিয়ে দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা, স্বীকার করেন সীমা ঢাকা।
তিনি জানিয়েছেন, ‘এই পদোন্নতির জন্য আমার অগ্রজ আধিকারিক ও সহকর্মীরা সাহায্য করেছেন। নিজে মা হওয়ায় কাউকে সন্তানহারা দেখতে চাই না। প্রতিদিন আমরা দিন-রাত এক করে নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধারের কাজ করেছি।’
এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ছিল পশ্চিমবঙ্গের এক নাবালককে গত অক্টোবর মাসে উদ্ধার করা, স্বীকার করেছেন সীমা। বন্যা কবলিত অঞ্চলে নৌকোয় দুটি নদী পেরিয়ে এক নাবালককে তাঁরা উদ্ধার করেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তার উপরে সমস্যা দেখাদেয় শিশুটির মাতাঁর ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর পরিবর্তন করায়।
সীমার কথায়, ‘ওঁকে কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এটুকু জানতাম যে, ওই পরিবার পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। তল্লাশি অভিযান শুরু হলে বন্যা বিধ্বস্ত অঞ্চলে দুটি নদী পেরিয়ে এক ছোট গ্রামে পৌঁছাই। ওই পরিবারের এক আত্মীয়ের বাড়ির কাছাকাছি শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।যদিও শিশুটি বাড়ি ফিরতে চায়নি। সে জানিয়েছিল, তার সৎবাবা প্রায়ই মারধর করেন।’
সীমা আরও জানিয়েছেন, ‘আমরা যখন শিশুদের উদ্ধার করি, তাদের থানায় নিয়ে এসে কাউন্সেলিং করা হয়। বেশিরভাগ নিখোঁজ শিশুকেই রেল স্টেশন ও বাস স্টপের আশপাশে খুঁজে পাওয়া যায়। আমরা ওদের সঙ্গে কথা বলে বাবা-মা সম্পর্কে তথ্য জানতে চাই।’
নিখোঁজ শিশু উদ্ধার অভিযানে নামার পরে গত জুলাই মাসে কোভিড আক্রান্ত হন সীমা ঢাকা। তিন সপ্তাহ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন থাকার পরে ফের তিনি কাজে যোগ দেন।
২০০৬ সালে দিল্লি পুলিশে যোগ দেন সীমা ঢাকা। চাকরিজীবনে তিনি দিল্লির উপকণ্ঠে রোহিনী ও উত্তরাংশে কর্মরত থাকেন। তাঁর স্বামীও রোহিনীতে হেড কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত।