'কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এখন দেশের কন্যা।' গুজরাটে প্রধানমন্ত্রীর রোডশোতে যোগ দিয়ে জানিয়েছেন সেনা অফিসারের বাবা তাজ মহাম্মদ। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর প্রথম গুজরাটে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার ভাদোদরায় তাঁর রোডশোয়ে উপস্থিত ছিলেন হাজার পঞ্চাশেক জনতা। আর সেই ভিড়ের মধ্যে ছিল কর্নেল সোফিয়া কুরেশির পরিবারও। পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করার জন্য সিঁদুর অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেই অভিযানের বিষয়ে জনসাধারণের সামনে নিয়মিত তথ্য তুলে ধরার দায়িত্বে ছিলেন দুই মহিলা সেনা অফিসার। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন কর্নেল সোফিয়া।
সোম এবং মঙ্গল দুদিনের জন্যে একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে নিজের রাজ্যে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। গুজরাটে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে ভুজে ৫৩ হাজার ৪১৪ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথা রয়েছে তাঁর। গুজরাট পৌঁছেই ভাদোদরায় রোড শো করেন। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান স্থানীয়েরা।পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর 'অপারেশন সিঁদুর' অভিযানের অন্যতম মুখ কর্নেল সোফিয়া কুরেশির পরিবারের সদস্যরাও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রোড শো'য়ে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্যে করেছেন পুষ্প বৃষ্টিও।উড়েছে দেশের পতাকা।অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকেও শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গিয়েছে স্থানীয়দের।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীকে দেখে উচ্ছাস প্রকাশ করেন কর্নেল সোফিয়ার বাবা তাজ মহম্মদ এবং মা হালিমা কুরেশি। তাজ মহম্মদ বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী মোদীর রোডশো দারুন লেগেছে। আমরা গর্বিত যে প্রধানমন্ত্রী মোদী আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। সোফিয়া কুরেশি দেশের কন্যা, সে কেবল তাঁর কর্তব্য পালন করেছে।' কর্নেলের মা হালিমা কুরেশিও দেশের বোনদের সিঁদুরের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অপারেশন সিঁদুরের প্রশংসা করেছেন। কর্নেল সোফিয়ার যমজ বোন সায়না সুনেসারাও প্রধানমন্ত্রী মোদীর রোড শো-তে যোগ দিয়েছেন।সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য উদ্যাপন করতে আমরা আজ প্রধানমন্ত্রী মোদীর রোড শোয়ে উপস্থিত হয়েছি। ভারতীয় বাহিনীর এই অভিযান দুই মহিলা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যাঁদের মধ্যে একজন আমার বোন। কোনও হতাহত ছাড়াই এই অভিযান সম্পূর্ণ হয়েছে। এই অভিযানের সময়ে দেশের কারও মনে কোনও ভয় ছিল না। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দেখার অনুভূতিটাই আলাদা।’ তিনি আরও বলেন, 'আপনার বোন যখন দেশের জন্য কিছু করেন, তখন তা কেবল আমাকেই নয়, অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করে। তিনি এখন আর কেবল আমার বোন নন, দেশের বোনও।'
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি কে ?
গুজরাটের বাসিন্দা কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বাহিনীর সামরিক যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক্স সহায়ক শাখা 'সিগন্যাল কর্পস'-এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে কর্মরত ৷ ২০১৬ সালে ইতিহাস সৃ্ষ্টি করেন সেনার এই শীর্ষ আধিকারিক ৷ সে বছর ভারতের সামরিক মহড়া 'ফোর্স ১৮'-এর নেতৃত্ব দেন তিনি ৷ পুণেতে আয়োজিত ৬ দিনের বিশাল আন্তর্জাতিক মহড়ায় প্রথম মহিলা অফিসার হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে খবরের শিরোনামে উঠে আসেন তিনি ৷১৯৯০ সালে ভারতীয় সেনায় যোগদান করেন সোফিয়া ৷ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাহিনীতে কাজ করে চলেছেন ৷ তাঁর অসামান্য অবদান, আপোষহীন মনোভাব এবং নির্ভীক প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসাও কুড়িয়েছেন সেই শুরুর দিন থেকে ৷ দীর্ঘ অভিজ্ঞতার জন্য সেনার শীর্ষস্থানে পোস্টিং হয় তাঁর ৷শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত কাজেও সেনার এই শীর্ষ আধিকারিকের অভিজ্ঞতা অনেক । ২০০৬ সালে রাষ্ট্রসংঘের কঙ্গো শান্তিরক্ষা অভিযানে সামরিক পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন ৷ শুধু সোফিয়াই নন, ভারতীয় সেনার সঙ্গে যুক্তে তাঁর পরিবারও ৷