বাংলাদেশি হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায়কে তাঁর বাড়ি থেকে অপহরণ করে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এবার সরব হলেন তসলিমা নসরিন। এই ঘটনাকে 'জঘন্য' আখ্যা দিয়ে সেই দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউনুসের সরকারকে সতর্ক করেছে ভারত। ঢাকাকে দিল্লির স্পষ্ট বার্তা, অজুহাত দেওয়া বন্ধ করুন। আর এবার ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনে তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তিনি বলেন, ইউনুস চলে গেলেই বাংলাদেশে হিন্দুরা টিকে থাকবে। (আরও পড়ুন: 'পুলিশই মমতার তত্ত্ব খারিজ করেছে', বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে পালটা আক্রমণ বিজেপির)
আরও পড়ুন: জম্মু ও কাশ্মীরে প্রবল বৃষ্টির জেরে মৃত ৩, ভূমিধসে বন্ধ জাতীয় সড়ক
লেখক তসলিমা নাসরিন ভবেশ চন্দ্রের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লেখেন, 'হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায়কে বাড়ি থেকে অপহরণ করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছি কারা খুনি? ইউনুস হিন্দু হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেন না। তিনি প্রচার করেন যে হিন্দুরা ঠিক আছে এবং হিন্দুদের উপর নির্যাতনের সমস্ত প্রতিবেদন মিথ্যা, গুজব বা ভারতের বানানো। ইউনুস ক্ষমতায় থাকলে অচিরেই দেশ হিন্দুশূন্য হয়ে পড়বে। হিন্দুদের বাঁচাতে হলে ইউনুসকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।' (আরও পড়ুন: কানাডায় সাহস বাড়ছে ভারত বিরোধীদের, ১২০ বছরের গুরুদ্বারে 'হামলা' খলিস্তানিদের)
আরও পড়ুন: BJP সাংসদকে কি 'পিটবুল' বলে ডাকলেন মহুয়া? চাঁচাছোলা আক্রমণ TMC MP'র
উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে ৩৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে দিনাজপুরের বাসুদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন নিহত ভবেশ। বছর ৫৮-র প্রৌঢ়কে গত ১৭ এপ্রিল খুন করা হয়েছিল। সেদিন রাত ১০টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ও মৃতের পরিবারকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টার জানিয়েছে, ১৭ এপ্রিল বিকেলে ভবেশকে বাড়ি থেকে অপহরণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। ভবেশের রায়ের স্ত্রী সান্ত্বনা জানান, ১৭ এপ্রিল বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ একটি ফোন আসে এবং অপরাধীরা নিশ্চিত করে যে তিনি বাড়িতেই আছেন কি না। জানা গিয়েছে, সেই ফোনের প্রায় ৩০ মিনিট পর দু'টি মোটরসাইকেলে করে চারজন লোক এসে ভবেশকে তাঁর বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপরে ভবেশ রায়কে নরবাড়ি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নাকি উন্মত্ত মৌলবাদী জনতা তাঁকে নির্মমভাবে মারধর করে। পরে ভবেশকে উদ্ধার করে দিনাজপুর হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। (আরও পড়ুন: আমেরিকায় জোট বাঁধল ভারত-চিন পড়ুয়ারা! মামলা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে)
ভবেশ রায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সবুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হবে। এদিকে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদিকে পুলিশ আধিকারিক জানান, আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের প্রস্তুতি চলছে। এদিকে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের জারি করা বিবৃতিতে এই নিয়ে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘু নেতা শ্রী ভবেশ চন্দ্র রায়ের অপহরণ এবং নৃশংস হত্যাকাণ্ড আমাদের মর্মাহত করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর পদ্ধতিগত নির্যাতনের আরও একটি নমুনা এই হত্যাকাণ্ড। যদিও পূর্ববর্তী এই ধরনের ঘটনার অপরাধীরা দায়মুক্তির সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং আবারও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে তারা যেন অজুহাত না দেখিয়ে বা ভেদাভেদ না করে হিন্দু সহ সকল সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করে।'