শেখ হাসিনার আমলে যে 'বাংলাদেশ জামাত-ই-ইসলামি' নেতারা কার্যত কেঁচো হয়ে থাকতেন, আজ মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সেই জামাত নেতাদেরই রমরমা! ইতিমধ্য়েই জেলবন্দি বহু জামাত নেতাকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে। এবার সেই তালিকায় নাম জুড়ে গেল আরও একজনের। তিনি হলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। একটা সময় তিনি ছিলেন জামাতের কার্যনির্বাহী মহাসচিব।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে, সেই সময়ে এই এটিএম আজহারুল ইসলাম মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। হাসিনার আমলে ২০১২ সালের ২২ অগস্ট মগবাজারের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাঁকে ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এবং মৃত্য়ুদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর সেই রায় দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এবার সেই রায় খারিজ করে দিল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। আজ (মঙ্গলবার - ২৭ মে, ২০২৫) বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেছে। বস্তুত, তাঁকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তথ্য বলছে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনও আসামির সাজা মকুব করা হল এবং আপিল বিভাগের রায়ে তিনি খালাস পেলেন! আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এর ফলে ওই জামাত নেতার মুক্তিতে আর কোনও বাধা রইল না। তাঁদের মতে, বাংলাদেশে ইতিহাসে এই ঘটনা এককথায় নজিরবিহীন।
মামলার ঘটনাক্রম প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারকরা। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহারুল ইসলাম। কিন্তু, শুনানি শেষ হওয়ার পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।
এরপর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সেই রায় পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়ে ওই বছরেরই ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে ফের আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম। এরপর চলতি বছরের (২০২৫) ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রিভিউ শুনে ফের আপিল শুনানির নির্দেশ দেয়। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম কোনও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা, যেটি রিভিউ পর্যায়ে আসার পর ফের আপিল শুনানির অনুমতি পেয়েছে।
এখানে আরও একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় রয়েছে। তা হল, জামাত নেতার মৃত্যুদণ্ডের সাজা রদ করে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার রায় ঘোষণা করা হল আজ। এর ঠিক দু'দিন আগেই - গত রবিবার (২৫ মে, ২০২৫) সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে 'জরুরি বৈঠক' করেন ইউনুস। গত রবিবার বিকেলে ইউনুসের সরকারি বাসভবন যমুনায় ওই বৈঠক হয়। তার ঠিক ৪৮ ঘণ্টার মধ্য়েই জামাত নেতাকে বেকসুর খালাস করল সুপ্রিম কোর্ট!