জারি হয়েছিল কার্ফু। ডাকা হয়েছিলে সেনাকেও। তা উপেক্ষা করেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন অসমের মানুষ। পুড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক গাড়ি, ব্যারিকেড। ছোড়া হয় পাথর। পরিস্থিতি সামলাতে শূন্যে গুলিও চালায় পুলিশ। তাতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।কার্যত ভেঙে পড়েছে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
দীর্ঘদিন ধরেই নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে অসমে বিক্ষোভ হলেও সোমবার থেকে প্রতিবাদের মাত্রা বাড়ে। গতকাল তা কার্যত প্রশাসনের হাতের বাইরে চলে যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও কাজ না হওয়ায় আসরে নামেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ সকালে অহমিয়ায় টুইট করে আশ্বাস দেন, চিন্তার কিছু নেই। আপনাদের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। পরে ঝাড়খণ্ডে ভোটপ্রচারে গিয়েও দেন আশ্বাস। তবে তাতে কোনও কাজ হয়নি। বরং বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে সকাল ১১টার সময় গুয়াহাটির লাটাসিল মাঠে জড়ো হন সাধারণ মানুষ।

পরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে জনতা। ব্যারিকেড পুড়িয়ে, বিভিন্ন ভারী জিনিস রেখে গুয়াহাটিতে রাস্তা অবরোধ করা হয়। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গুয়াহাটি-শিলং রোড। পুড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক গাড়ি। ভাঙচুর চালানো হয় দোকানে। উত্তেজিত জনতার সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে পুলিশের। পরিস্থিতি সামলাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পালটা ইট ছোড়েন কয়েকজন পুলিশকর্মীকে। তাতেও পরিস্থিতি আয়ত্তে না আসায় শূন্যে গুলি চালায় পুলিশ। বিকেলের দিকে জি এস রোডে অসম পুলিশের প্রধান ভাস্করজ্যোতি মোহান্তর কনভয়ে পাথর ছোড়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, গুয়াহাটির অম্বারি এলাকায় অসম গণ পরিষদের সদর দফতরে ভাঙতুর চালানো হয়েছে। তাদের একটি কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ আরএসএসের।

গুয়াহাটির লালুঙ্গ গাঁও এলাকাতে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়েন বিক্ষোভকারীরা। সেখানেও গুলি চালায় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের দাবি, আহত হয়েছেন কমপক্ষে চারজন। রাঙ্গিয়াতেও শূন্যে তিন রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শহরের কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করা হয়। গোলাঘাটের খবর মিলেছে গোলাঘাট থেকেও। প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ৩৯ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছিল। জনতাকে হটাতে শূন্যে গুলি চালানো হয়েছে।

ডিব্রুগড়ের চাবুয়াতে স্থানীয় বিধায়ক বিনোদ হাজারিকার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর অফিসেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক আধিকারিক। কামরূপ জেলায় জনজীবন পুরোপুরি স্তব্ধ। বন্ধ স্কুল-কলেজ, অফিস, দোকান। রাস্তাও গাড়িশূন্য। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক -সহ সব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় চলছে অবরোধ।

গুজব ছড়ানো রুখতে ১০টি জেলায় আরও ৪৮ ঘণ্টা ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। যা আজ বেলা ১২টা থেকে শুরু হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব (স্বরাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিভাগ) সঞ্জয় কৃষ্ণা পিটিআই-কে জানান, লক্ষীপুর, ধেমাজি, তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড়, চারাইডিও, শিবাসাগর, জোরহাট, গোলাঘাট, কামরূপ (মেট্রো) ও কামরূপে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে।

এরইমধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দীপক কুমারকে। নতুন দায়িত্ব নেন মুন্নাপ্রসাদ গুপ্ত। রাজ্যের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) মুকেশ অগারওয়ালকে এডিজিপি (সিআইডি) পদে বদলি করা হয়েছে। নতুন এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) জিপি সিং।
অসমের বিভিন্ন প্রান্ত পাঁচ কলাম সেনা নামানো হয়েছে। গুয়াহাটি, তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড়, জোরহাটে ফ্ল্যাগ মার্চ করেছে সেনা।

শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনেওয়াল। তিনি বলেন, "অসমের সব মানুষের কাছে শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানাচ্ছি। এটা আমাদের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অ্যাধ্যাত্মিক ট্র্যাডিশন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, অসমের মানুষ আসন্ন সময় শান্তি বজায় বজায় রাখবেন।"
অন্যদিকে, বিলের প্রতিবাদে ত্রিপুরায় চাপা উত্তেজনা থাকলেও সেভাবে উত্তপ্ত হয়নি পরিস্থিতি। আগরতলার কয়েক জায়গায় টায়ার জ্বালানো হলেও হিংসা ছড়ায়নি।