কেউ বলছেন দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সমগ্র তরুণ সমাজকে সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে! কারও মতে, চিনকে পিছনে ফেলত হলে 'বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বসে না থেকে' রবিবারও অফিসে আসতে হবে এবং সপ্তাহে অন্তত ৯০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে! এ নিয়ে দেশজুড়ে চলা বিতর্ক ও সমালোচনার মধ্যেই অন্য কথা বললেন আরও এক শিল্পপতি। তিনি মহিন্দ্রা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান আনন্দ মহিন্দ্রা।
আনন্দ মনে করেন, একজন ব্যক্তি কত ঘণ্টা কাজ করছেন, সেটা বড় কথা নয়। আসল বিষয় হল, তিনি তাঁর কাজ কতটা দক্ষতার সঙ্গে করছেন। আনন্দের কাছে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল সেরামানের কাজ করা।
ফার্সপোস্ট-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এই সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের উত্তরে আনন্দ মহিন্দ্রা বলেন, 'আমি এক্ষেত্রে কাজের সময় নয়, কাজের গুণমানকে গুরুত্ব দিই। আপনি আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন, আমার কাজের মান কেমন। আমি কত ঘণ্টা কাজ করি, সেই প্রশ্ন আমাকে করবেন না।'
এর থেকেও বড় কথা হল, তিনি আরও একটি মন্তব্য করেছেন। যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আনন্দ মহিন্দ্রা বলেন, ‘আমার স্ত্রী অসাধারণ। এবং আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালোবাসি!’
উল্লেখ্য, এর আগে এল অ্যান্ড টি-র চেয়ারম্যান এস এন সুব্রমণিয়ন তাঁর সংস্থার কর্মীদের উদ্দেশে একটি ভার্চুয়াল মিটিংয়ে বলেছিলেন, ছুটির দিনে 'কতক্ষণ আর নিজের বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবেন? অফিসে যান। কাজ করুন।'
তিনি আরও আক্ষেপ করেছিলেন, যেহেতু তিনি নিজে রবিবার কাজ করেন, তাই তাঁর অনুশোচনা হয় যে তিনি সংস্থার বাকি কর্মীদের রবিবার কাজ করাতে পারেন না। এবং সুব্রমণিয়ন এও বলেন, চিনকে পিছনে ফেলতে হলে ভারতীয়দের সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করতেই হবে।
তাঁর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা হয় দেশজুড়ে। আমজনতা, তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী থেকে শুরু করে দীপিকা পাডুকোনের মতো সেলেব, সকলেই সোশাল মিডিয়ায় রীতিমতো তুলোধনা করেন এল অ্যান্ড টি কর্তাকে।
সেই ঘটনার বহু আগে দেশের তরুণদের সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করার নিদান দিয়ে তীব্র কটাক্ষ ও সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন ইনফোসিস কর্তা নারায়ণ মূর্তি।
এই প্রেক্ষাপটে আনন্দ মহিন্দ্রার মন্তব্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজের অমানবিক তত্ত্বে মোটেও বিশ্বাসী নন, সেই বার্তাই দিয়েছেন এই শিল্পপতি।
আনন্দ মহিন্দ্রা এই প্রসঙ্গে বলেন, 'আমি একাকীত্বে ভুগি বলে এক্স অ্য়াকাউন্ট খুলেছি, তা কিন্তু নয়। আমার স্ত্রী অসাধারণ। ওঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে আমি ভালোবাসি। আমি ওঁর সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে ভালোবাসি। আমি এখানে (এক্স মাধ্যমে) বন্ধুত্ব করতে আসিনি। আমি এখানে এসেছি, কারণ অনেকেই বোঝেন না, এটা কী দারুণ একটা মাধ্যম। এই একটা মঞ্চেই আমি ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের মতামত জানতে পারি।'
প্রসঙ্গত, ভারতীয় প্রভাবশালবী ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের এক্স ফলোয়ার সবথেকে বেশি, আনন্দ মহিন্দ্রা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে ফলো করেন প্রায় ১ কোটি ১৪ লক্ষ ইউজার।