‘সাম্প্রতিক সময়ে দেখা সবচেয়ে খারাপ এবং ভুল আদেশ।’ ইলাহাবাদ হাইকোর্টের এক বিচারপতিকে ভর্ৎসনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। একটি দেওয়ানি বিবাদকে ফৌজদারি মামলা হিসেবে বিবেচনা করার অনুমতি দিয়েছিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের যুক্তি ছিল দেওয়ানি মামলায় টাকা আদায় করতে যথেষ্ট সময় লাগতে পারে অভিযোগকারীর। শুধুমাত্র এই কারণেই একটি দেওয়ানি মামলাকে, ফৌজদারি মামলার হিসেবে বিবেচনা করেছিল তারা। এই প্রেক্ষিতে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতির অর্ডার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত।
গত ৪ অগস্ট ইলাহবাদ হাইকোর্ট একটি নির্দেশ দেয়। অপরাধের মামলাটি খারিজ করতে আপত্তি জানিয়েছে আদালত। মামলাটি শুনতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জে বি পরদিওয়ালা এবং আর মহাদেবনের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, 'হাইকোর্টের বিচারপতিকে কোনও ডিভিশন বেঞ্চে কোনও সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে বসা উচিত।' ওই মামলাটি যাতে হাইকোর্টের অন্য কোনও বিচারপতির কাছে আবার শুনানি হয়, সেই নির্দেশই দেওয়া হয়েছে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ইলাহাবাদ হাইকোর্টের এই অদ্ভুত যুক্তিটি বিচার প্রক্রিয়ার ‘স্পষ্ট অপব্যবহার’। এতে তারা ‘মর্মাহত’। পাশাপাশি হাইকোর্টের বিচারপতির এই পর্যবেক্ষণ ‘সকলের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে জানিয়েছেন বিচারপতি জে বি পরদিওয়ালা।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, কী কী উপাদান থাকলে প্রতারণার মামলা গঠন করা যাবে, আর কী কী উপাদান থাকলে ফৌজদারি বিশ্বাসভঙ্গের মামলা, তা হাইকোর্ট বুঝবে।’ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, দেওয়ানি মামলার নিষ্পত্তির জন্য ফৌজদারি আইনকে ব্যবহার করা যাবে না, এটা সুপ্রতিষ্ঠিত আইনি নীতি। হাইকোর্টের বিচারপতি এই দুই আইনের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্যটা বুঝবেন বলে আশা করে দেশের সুপ্রিম কোর্ট।ইলাহবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি প্রশান্ত কুমারের নির্দেশ নিয়েই মামলাটি হয়েছিল। অবিলম্বে বিচারপতি প্রশান্ত কুমারের কাছ থেকে যাবতীয় ফৌজদারি মামলা সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁকে আর কোনও ফৌজদারি মামলা না দিতে বলা হয়েছে।
মামলাটির সূত্রপাত এক টেক্সটাইল সংস্থা ললিতা টেক্সটাইলসের অভিযোগকে ঘিরে। আবেদনকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল তারা। তাদের দাবি ছিল, ৭,২৩,৭১১ টাকার সুতো বিক্রি করে কোনও টাকা পায়নি ওই সংস্থা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আবেদনকারীকে সমন পাঠানো হয়। আবেদনকারী যখন আদালতে যায়, তখন নোটিস খারিজ করা যাবে না বলে উল্লেখ করে আদালত। হাইকোর্ট মনে করে, সিভিল সুট ঠিক নয়।বিচারপতি প্রশান্ত কুমার পরামর্শ দিয়েছিলেন, ললিতা টেক্সটাইলস একটি ছোট ব্যবসায়িক সংস্থা। যে অর্থ বকেয়া রাখার অভিযোগ তারা করেছে, তার অঙ্কটা বেশ বড়। তাই এই মামলাটিকে দেওয়ানি বিরোধ হিসেবে উল্লেখ করলে ন্যায়বিচারের অবমাননা হবে।