শুধু অবসর কেন, কোনও স্বপ্নপূরণের জন্যও টাকা জমাতে হতে পারে। শখের চারচাকা/মোটরসাইকেল, নতুন ফ্ল্যাটের ডাউনপেমেন্ট- সবেতেই টাকা দরকার। কিন্তু যত্র আয়, তত্র ব্যয় হলে? সেটাতেই সমস্যা। মাসের শেষে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে গেলে কিন্তু চলবে না। তাই খরচে রাশ টানতে হবে। এই প্রতিবেদনে পাবেন সেই টিপস।
ছবি: পেক্সেলস
জীবন ছোট। টাকা ভোগ করার জন্যই। অনেকেই একথা বলেন। আবার এটাও সত্য যে একজন মানুষের গড় আয়ু নেহাত্ই কম নয়। অল্প বয়স থেকে টাকাপয়সা না জমালে পরে গিয়ে সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া পেনশনের ব্যবস্থা না থাকলে তো এই নিয়ে আরও ভাবা উচিত্।
শুধু অবসর কেন, কোনও স্বপ্নপূরণের জন্যও টাকা জমাতে হতে পারে। শখের চারচাকা/মোটরসাইকেল, নতুন ফ্ল্যাটের ডাউনপেমেন্ট- সবেতেই টাকা দরকার। কিন্তু যত্র আয়, তত্র ব্যয় হলে?
সেটাতেই সমস্যা। মাসের শেষে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে গেলে কিন্তু চলবে না। তাই খরচে রাশ টানতে হবে। এই প্রতিবেদনে পাবেন সেই টিপস:
১. আগে সঞ্চয় করে তবে খরচ করুন:
ধরুন স্যালারি ঢুকল। প্রথমেই মাসে কিছু টাকা সঞ্চয়ের খাতায় ফেলে দিন। এর জন্য একটি RD বা, রেকারিং ডিপোজিট করে রাখতে পারেন। PF জাতীয়ও কোনও ব্যবস্থা করা যায়। মানে এমন কিছু, যাতে আপনার মূল স্যালারি অ্যাকাউন্ট থেকে ১০-২০% টাকা আগেই তাতে সরে যায়। এবার সেই বাকি টাকা থেকে আপনার খরচ হিসাব করুন। এটি করলেই দীর্ঘ মেয়াদে দেখবেন সেই অপর অ্যাকাউন্টে একটি ভাল অঙ্কের টাকা জমে গিয়েছে। কিছুটা টাকা জমিয়ে সেটা FD-ও করে দিতে পারেন। সেরা ফিক্সড ডিপোজিট রেট কোথায় জানতে এখানে টাচ করুন।
শখের শার্ট থেকে শুরু করে মোটরসাইকেল। যা-ই কিনতে যাবেন, তার আগে ভাল করে পরিকল্পনা করুন। এতে 'বায়ার্স রিমর্স' বা কেনার পর আফসোস এড়ানো যাবে। মানে ধরুন, আপনি খুব একটা উজ্জ্বল রঙের জামা পড়েন না। কিন্তু ঝোঁকের বশে অনেক দাম দিয়ে ব্র্যান্ডেড, টুকটুকে লাল একটি শার্ট কিনে ফেললেন। পরে সেটি পরতে লজ্জা পাচ্ছেন। শার্টটা আলমারিতেই পড়ে থাকল। এতে কিন্তু আপনার ২-৩ হাজার টাকা চিরতরে জলে গেল।
আবার ধরুন আপনার ২০০ সিসির বাইকই যথেষ্ট। কিন্তু কিনতে ইচ্ছা করছে কোনও ৩৫০ সিসির দামি ক্রুজার। এমনটা করার আগে অবশ্যই তার মেনটেনেন্স, মাইলেজ, পার্টসের দাম বিচার করুন। রিসেল ভ্যালুও ধরুন। এরপরেই কেনার সিদ্ধান্ত নিন। হঠাত্ করে কিনে ফেলবেন না। এই একই নিয়ম স্মার্টফোন, গ্যাজেট, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
৩. যেখানে খরচ দরকার করুন
এবার ধরুন আপনি বাড়ির ছাদ নতুন করে ঢালাই করছেন। অথবা, পুরনো বাড়ি রঙ করছেন। সেখানে কার্পণ্য না করাই শ্রেয়। ভাল মানের সিমেন্ট, রঙ ব্যবহার করুন। যাতে সেটি দীর্ঘ মেয়াদে ভাল থাকে। অর্থাত্, 'অ্যাপ্রিসিয়েটিং অ্যাসেট'- যে সম্পত্তির দাম বাড়বে, তার যত্ন নিন।
কর বিশেষজ্ঞ মিহির দাসের কথায়, 'এখনকার দিনে ডাল-ভাত খেয়ে দিন কাটালেও সাধ্য মতো স্বাস্থ্য বিমা অবশ্যই করুন। করছাড় তো পাবেনই, স্বাস্থ্যবিমার সুরক্ষাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখনকার দিনে কোনও বেসরকারি হাসপাতালে গেলেই লাখখানেক টাকার বিল। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত পরিবারের পক্ষেও যা অসম্ভব।'
সেখানেই আপনার অনেক দেনা, সঞ্চয় বেরিয়ে যেতে পারে। তাই সময় থাকতে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিমা করিয়ে রাখুন। আপনার সাধ্যমতো প্রিমিয়ামের প্ল্যান বেছে নিন।
৬. নেশা ছাড়ুন
মদ, ধূমপানটা এবার ছেড়েই দিন। দাম নেহাত্ কম নয়। ধরুন আপনি রোজ ৬ টাকার ৫টি সিগারেট খান। দিনে ৩০ টাকা। মাসে ৯০০ টাকা। এক বছরে ১০,৮০০ টাকা। দশ বছরে ১,০৮,০০০ টাকা। সিগারেটের দাম বাড়লে আরও বেশি।
তার সঙ্গে মাঝে মাঝে 'সুরাপান' করার অভ্যাস থাকলে এটাই ধরে নিন আরও ১ লক্ষ টাকা বেড়ে যাবে।
তাছাড়া পরে চিকিত্সার যে খরচ হতে পারে, তা তো সহজেই অনুমেয়। তাই স্বাস্থ্য ও সঞ্চয়ের কথা ভেবে সংযম করুন।
৭. বাড়িতে খান
রেস্তোরাঁর খাবার এড়িয়ে চলুন। যতটা সম্ভব বাড়িতে টাটকা, মরসুমি শাক-সবজি খান। এতে টাকাও সাশ্রয় হবে, স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে।
সবশেষে মাথায় রাখবেন, টাকা বাঁচানো মানেই কিপটে হওয়া, তা কিন্তু নয়। শখের জিনিস অবশ্যই কিনুন। সেগুলির জন্যও আলাদা করে মাসের শুরুতে কিছুটা টাকা সাশ্রয় করুন। খুব বেশি ক্রেডিট কার্ড বা লোনের চক্করে পরবেন না।