বুধবার দেশজুড়ে হতে চলেছে এক ধর্মঘট। এই কর্মবিরতিতে অংশ নিতে চলেছেন ব্যাঙ্ক, বিমা, ডাক পরিষেবা থেকে কয়লাখনি, পরিবহণ-সহ বহু ক্ষেত্রের ২৫ কোটির বেশি শ্রমিক। শুধুই শহুরে পরিসরে সীমাবদ্ধ নয় এই আন্দোলনের ঢেউ পৌঁছে গিয়েছে গ্রামেও। কারণ, শ্রমিক সংগঠনগুলির পাশাপাশি কৃষক সংগঠন ও কৃষি শ্রমিকদের মোর্চাও জানিয়েছে সমর্থন। যার জেরে আশঙ্কা করা হচ্ছে, থমকে যেতে পারে দেশের বহু পরিষেবা।
১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ মঞ্চ
৯ জুলাই দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে দেশের ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ মঞ্চ। তাঁদের অভিযোগ, কেন্দ্রের শ্রমনীতি একেবারে কর্পোরেটমুখী, যা শ্রমিক, কৃষক ও দেশের সার্বভৌম স্বার্থের পরিপন্থী। এই নীতির বিরুদ্ধে গত কয়েক মাস ধরেই সংগঠনের তরফে লাগাতার প্রস্তুতি চলেছে, যার পরিণতিতে এবার বড়সড় বনধ। তাঁদের দাবি, ধর্মঘট শুধু কাজ বন্ধ রাখা নয়, এটি এক সর্বভারতীয় প্রতিবাদের প্রতীক।
বছরের পর বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১৭ দফা দাবি পেশ করে এসেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। কিন্তু অভিযোগ, সেই দাবিগুলিকে গুরুত্ব না দিয়ে সরকার পাশ করিয়েছে চারটি নতুন শ্রম কোড।যেগুলি কার্যত শ্রমিক অধিকার খর্ব করার জন্যই তৈরি। এই কোডে ট্রেড ইউনিয়নের সংগঠিত প্রতিবাদ, ধর্মঘটের অধিকার এবং শ্রমিক সুরক্ষার কাঠামো দুর্বল করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, কাজের সময় বাড়ানো, বেতন কাঠামোয় স্বচ্ছতা হ্রাস এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে আইনি দায়বদ্ধতার বাইরে রাখা হয়েছে, যাকে শ্রমিক সংগঠনগুলি ‘শোষণের বৈধীকরণ’ বলেই অভিহিত করছে।
কৃষকদের সমর্থন
শুধু শ্রমিক নয়, কৃষক সংগঠনও এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে। সংযুক্ত কৃষক মোর্চার তরফে জানানো হয়েছে, সরকার যেভাবে কৃষি এবং শ্রমকে কর্পোরেটের হাতে তুলে দিতে চাইছে, তা ভারতের আর্থ-সামাজিক কাঠামোর পক্ষে এক বিপজ্জনক সঙ্কেত। ফলে এবারের ধর্মঘট শহর ও শিল্পাঞ্চল ছাড়িয়ে গ্রাম এবং চাষের জমিতেও প্রভাব ফেলবে।এই ধর্মঘট শুধুই ন্যায্য বেতনের লড়াই নয়-এ এক বৃহৎ রাজনৈতিক বার্তা, কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধেই যেন রাস্তায় নামছে দেশের মজুর শ্রেণি ও কৃষক সমাজ।
ভারত বনধের প্রভাব
এমনিতেই ২৬ নভেম্বর ২০২০, ২৮-২৯ মার্চ ২০২২ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে দেশজুড়ে ধর্মঘট দেখেছে ভারত। কিন্তু এবারের প্রস্তুতি ও অংশগ্রহণের সম্ভাব্য পরিসর অনেকটাই বড়, অনেকটাই সাংগঠনিকভাবে সুসংহত। প্রশাসনের তরফে জরুরি পরিষেবাগুলি সচল রাখার চেষ্টা করা হলেও, আন্দোলন কতটা অভিঘাত তৈরি করবে, তা নির্ভর করছে এই বিরাট বনধের বাস্তব চিত্রের ওপর।এবারের বনধে অংশ নিতে চলেছেন ব্যাঙ্ক, বিমা, ডাক পরিষেবা থেকে কয়লাখনি, পরিবহণ-সহ বহু ক্ষেত্রের ২৫ কোটির বেশি শ্রমিক।ফলে এই ক্ষেত্রগুলির সংস্থা এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হিন্দ মজদুর সভা ইউনিয়নের নেতা হরভজন সিং সিধু বলেছেন যে ব্যাঙ্কিং, ডাক এবং খনির মতো ক্ষেত্র ছাড়াও কারখানা এবং রাজ্য পরিবহণ পরিষেবাও ব্যাপক প্রভাবিত হবে।