বাড়ি থেকে অফিস, খেলার ময়দান থেকে ব্যবসা- বর্তমান সময়ে মহিলারা পিছিয়ে নেই কোনও কিছুতেই। কিন্তু যেখানে দাঁড়িয়ে আজও কোথাও গিয়ে শুনতে হয় ‘বাঙালিদের দ্বারা ব্যবসা হয় না’, সেখানে নারী দিবসের ঠিক প্রাক্কালে নিজের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি একজন ব্যবসায়ী হয়ে কী করে অন্যদের ব্যবসায় আলাদা মাত্রা যোগ করছেন সেটাই হিন্দুস্থান টাইমসকে শোনালেন দীপান্বিতা গুপ্ত।
৯-৫ টার চাকরি, নির্দিষ্ট সময়ে মাইনে... মোটামুটি একটা নিশ্চিন্ত, নিরাপদ জীবন ছেড়ে ব্যবসায় কেন?
দীপান্বিতা গুপ্ত: (হেসে) আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আর ৯-৫ টার চাকরি নেই। সবারই কম বেশি ৯-১০ ঘণ্টার চাকরি জীবন। আর আমার বাড়ি থেকে অফিস এতটাই দূরে ছিল যে যাতায়াত মিলিয়ে ১২-১৩ ঘণ্টা কেটেই যেত রোজ। এমন অবস্থায় ব্যবসায় আসা মূলত ২ টো কারণে। প্রথমটা ব্যক্তিগত। মা একদিকে শয্যাশায়ী তখন, স্বামীর বদলির চাকরি, ছেলে ছোট- এমতাবস্থায় নিজের দায়িত্বগুলোকে সুষ্ঠভাবে পালন করতে চেয়েছিলাম কাজটাকে সামলে। কাজের জায়গাটাকে অবহেলা করতে চাইনি কোনও শর্তেই। পড়াশোনা করেছি, কাজ শিখেছি, ফলে জীবনে কিছু তো করতে হতোই। যত প্রতিকূলতা আসুক কাজ বন্ধ করা যাবে না। এমন অবস্থায় মা, মেয়ে, স্ত্রী সহ অন্যান্য ভূমিকায় সমস্ত দায়িত্বগুলোকে অবহেলা না করে কীভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া যায় ভাবতে গিয়েই মনে হয়, আমি যদি নিজের কিছু শুরু করতে পারি, তাহলে কেমন হয়? মনে হয়েছিল, এটা হলে সময় ম্যানেজ করা আমার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। ব্যবসা শুরু করার পর বুঝলাম ১০০ শতাংশ না হলেও, ৮০-৯০ শতাংশ আমি সবটা ব্যালেন্স করে চলতে পারছি। আর দ্বিতীয় কারণ ছিল, যখন এমবিএ করি তখন ব্যবসা করার চিন্তা, নিজের একটা কিছু করার ভাবনা, একটা ছোট হলেও আমার টিম হবে, ভারতের অর্থনীতিতে আমার একটা ক্ষুদ্র হলেও অবদান থাকবে এমন একটা আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল। আর এই ব্যবসা করার আকর্ষণ, আনন্দ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে সেটা আমার মধ্যে কোথাও একটা আত্মবিশ্বাসের বীজ বপন করে দেয়, সেখান থেকেই শুরু। মনে হয়েছিল যতই প্রতিকূলতা থাকুক, আমি পারব। বিশেষ করে যেখানে আমার পরিবার এত সপোর্টিভ।
কন্টেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের দুনিয়ায় যেখানে এত কম্পিটিশন সেখানে মনে হয়নি আর পারছি না। হাল ছেড়ে দিই?
দীপান্বিতা গুপ্ত: না, একদিনের জন্যও এটা মনে হয়নি। হ্যাঁ, কিছু ওঠাপড়া তো ছিলই বা আছে। সেটা তো চাকরির ক্ষেত্রেও থাকে। ব্যবসার ক্ষেত্রেও ছিল। আছে, থাকবেও। কিন্তু কখনও মনে হয়নি যে হচ্ছে না, ছেড়ে দিই। এই জায়গাটা তো আমি তৈরি করেছি, এটা আমার একটা ভালোবাসার জায়গা। আর এই কম্পিটিশন, রিস্ক এগুলোই কিন্তু আসলে অ্যাড্রেনালিনের গতিকে বাড়িয়ে দেয়। কোনও সমস্যা আসার পর সেটা ধৈর্য বা বিচক্ষণতার সঙ্গে যখন পার করি, তখন সেটা আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে রিস্ক, কম্পিটিশন যদি না থাকত তাহলে এই সফরটা এতটা আকর্ষণীয়, মজাদার হতো না। আর, কখনও যদি মনে হয়েছে যে 'এটা জানি না' এটা তখন এটাই ভেবেছি যে শিখে নেব, পারব ঠিক। ‘হবে না’ এই ভাবনা আসেনি কখনও। ছেড়ে দেওয়ার কথাও মনে হয়নি।
ওয়ান ম্যান আর্মি থেকে আজ এই জায়গায়। এই লড়াই বা সফরটা নিয়ে কী বলবেন?
দীপান্বিতা গুপ্ত: এটা লড়াই তো বটেই। কিন্তু যখন ফেলে আসা সফর, সময়ের দিকে তাকাই তখন একটা ভালো লাগা কাজ করে। আমি আসলে শাহরুখ-প্রেমী। তাই ওঁর সিনেমার সেই সংলাপ 'যখন কিছু মন থেকে চাইবে তখন সেটা গোটা পৃথিবী তোমাকে পাইয়ে দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকে' সেই কথাটাকে সত্যি বলে মনে হয়। মনে হয় যেন আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে গুণী, ভালো টিমমেটদের সঙ্গে পেয়েছি। তাঁরা সকলে এখনও পর্যন্ত একজোট হয়ে আমার সঙ্গে রয়েছেন। কাজ করছেন। কখন যে একজন থেকে ১১ জনের টিম হয়ে গিয়েছি সেটা বুঝতে পারিনি। এই ১১ জন ছাড়া আরও বহুজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আমার সঙ্গে নিয়মিত কাজ করেন। এই টিমমেট বাড়ার সফরটা খুব অর্গ্যানিক্যালি হয়েছে। আমার টিম যে আমার সঙ্গে লেগে পড়ে থাকে এটা একটা বিশাল বড় পাওনা, একটা শক্তি। ফলে এটাকে লড়াই বলা হোক, বা সফর আমি খুব উপভোগ করেছি, করছি। আর এই শক্তির উপর উপর জোর দিয়েই বলতে পারি আমাদের আগামী পথটা খুব মসৃন না হলেও বন্ধুর নয়।
আরও পড়ুন: প্রেম দিবসেই 'বিশেষ' মানুষের সঙ্গে করিয়েছেন আলাপ, এবার কোন সিদ্ধান্ত নিলেন কবীর সুমন?
আগামীতে যাঁরা, বিশেষ করে যে মহিলারা ব্যবসায় আসতে চান বা ভাবছেন তাঁদের কী বলবেন?
দীপান্বিতা গুপ্ত: ব্যবসায়ী হিসেবে আমি নিজে যে জিনিসটা শেখার চেষ্টা করেছি সেটা হচ্ছে প্রসেস ওরিয়েন্টেড হতে হবে। আপনাকে ভালো প্ল্যানার হতে হবে। টাইম ম্যানেজমেন্ট শিখতে হবে। দ্বিতীয়ত, সব কিছুর মধ্যে নিজেকে উপেক্ষা করলে চলবে না। ব্যবসা ৯-৫ টার চাকরি নয়, এটা ২৪*৭ চলে। তার মধ্যেও নিজেকে ভালো রাখতে হবে, স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। এবং সবথেকে জরুরি যেটা, ফিন্যান্স ভালো করে বুঝতে হবে। এক্সেল, স্প্রেডশিট ঘাটাঘাটি করতে হবে। না জানলে শিখতে হবে, দরকারে অন্যদের থেকে সাহায্য চাইতে হবে। আর শেষ যেটা না বললেই নয়, মেয়ে বলে কিন্তু কেউ আমাদের ছোট করছে না এটা মাথায় রাখতে হবে।