বাংলা নিউজ > টুকিটাকি > সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেয় জটিল ইতিহাস, তিন গ্রন্থের মূল সুর ধরা পড়ে সরলতায়
পরবর্তী খবর

সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেয় জটিল ইতিহাস, তিন গ্রন্থের মূল সুর ধরা পড়ে সরলতায়

তিন গ্রন্থের মূল সুর ধরা পড়ে সরলতায়

সহজ কথা সহজে বলা কঠিন তো বটেই, লেখা প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। বই তিনটির রচয়িতারা সেই অসাধ্য সাধনে অনেকটাই সফল। তা বলে নিজেদের ঐতিহাসিক/সমাজবিজ্ঞানী সত্তার সঙ্গে কেউই যে আপোস করেননি সেটা প্রতিটি বই থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

রজতকান্তি সুর

আমাদের অনেকেরই শৈশব থেকে কৈশোর, এমনকী যৌবনের অনেকটাই কেটেছে কতগুলো সাধারণ বোধের মধ্য দিয়ে। সেই বোধ জনকল্যাণের, সেই বোধ মানবিকতার। স্কুল বা কলেজে, পাড়ায় বা পরিবারে, খেলার মাঠে বা বন্ধুদের আড্ডায় ধর্ম, জাত ইত্যাদি কথাগুলি যে একেবারে আলোচিত হত না এমন কথা বলা যাবে না। তবে সেই আলোচনার পরিসর ছিল সীমিত। আর যুদ্ধ, জাত্যাভিমান, জাতিগৌরব ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা ছিল আরওই সীমিত। অন্তত পশ্চিমবাংলায় তো বটেই, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে শিক্ষিত সমাজ একটা স্বপ্নে বিশ্বাস করতেন। হিংসা, হানাহানি ও ভেদাভেদমুক্ত এক সমাজের স্বপ্ন। ১৯৫০ এর দশকে সদ্য উপনিবেশের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া দেশগুলি যে স্বপ্ন দেখবে বলে ভেবেছিল, সেই স্বপ্ন নেই নেই করেও একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক অবধি বেঁচে ছিল। সেই স্বপ্নই আমাদের শিখিয়েছিল যুদ্ধের ভয়াবহতা, আবার যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মুক্তির আন্দোলনের স্বাদ। নদীকে বাঁধার কাজ, বেঁধে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্বপ্ন দেখা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু পাশাপাশি ভাবিয়েছিল কীভাবে এই নদীর চলার পথ আটকে দেওয়া আমাদের জীবনে বিপদ ডেকে আনতে পারে। শ্রমিকের অধিকার নিয়ে আলোচনা কলেজে যাওয়ার সময় বাসে শুনতে পেতাম। মোটের উপর বলতে গেলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক পরিসরের চেহারা কেমন হতে পারে, সেই বিষয়ে সম্যক ধারণা আমরা স্কুল, কলেজ, পাড়া বা খেলার মাঠে অনায়াসে পেয়েছিলাম। আর পেয়েছিলাম বলেই হয়তো হেলায় (বা প্রযুক্তির চোখ ধাঁধানো আকর্ষণের ঠেলায়) হারিয়ে ফেলেছি। শিশুদের স্কুলে প্রথম থেকেই প্রতিযোগিতার পরিবেশ আর স্বাভাবিক সামাজিক সম্পর্কগুলোকে, বোধগুলোকে গড়ে উঠতে দেয়না। আরেকটি দিকও অবশ্য আছে। সেটা হল পরিবেশ, দেশভাগ, শ্রমিক, গণতন্ত্র, যুদ্ধ ও শান্তি, সমাজ দেশ বিষয়ে আলোচনা এখন আর বিদ্যালয়ে চর্চার বিষয় নয়। তাকে আমরা, তথাকথিত এলিট শিক্ষিত সমাজের মানুষেরা, বড় বেশি করে আলোচনা-চক্রে বেঁধে ফেলেছি। সহজ ভাষায় কথা বলে কীভাবে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারা যায়, সেটা নিয়ে কারও খুব একটা ভাবনাচিন্তা নজরে পড়ে না। ইন্সটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ কলকাতা ও রোজা লুক্সেমবুর্গ ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ যে তাঁরা এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেছেন। তার ফসল হিসাবে আমরা এর আগে ‘দেশভাগ’, ‘দেশের ভাষা’ , 'দেশের মানুষ’ নামে সহজ ভাষায় লেখা বই দেখেছি। যা নিঃসন্দেহে স্কুলের পাশাপাশি সাধারণ পথচলতি মানুষকেও আবার নতুন করে ভাবনাচিন্তা করবার সুযোগ করে দিতে পারে।

'ইতিহাসে হাতেখড়ি' শীর্ষক এই গ্রন্থমালায় নবতম সংযোজন আরও তিনটি বই। 'নদীর চলা', 'চায়ের দুনিয়া' ও 'যুদ্ধের নানা দিক'। এই তিনটি বই নিয়েই আমরা এখন একটু আলোচনা করব।

প্রথম বইটির কথায় আসা যাক। ছোটবেলায় আমরা পড়েছি যে আমাদের দেশ (রাষ্ট্র বলছি না, দেশ) নদীমাতৃক দেশ। সেই নদীকে বেঁধে ফেলা কি বুদ্ধিমানের কাজ? খানিকটা সেই প্রশ্ন তুলেই যেন প্রথম বইটির সূত্রপাত। দেবারতি বাগচীর লেখা বইটি শুরুই হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুক্তধারা’ নাটককে উদ্ধৃত করে। ঝর্ণার, নদীর স্বাভাবিক গতিকে বাঁধতে গেলে কি সর্বনাশের মুখোমুখি আমরা হতে পারি রবীন্দ্রনাথ সেটা প্রায় ১০০ বছর আগেই (১৯২২ সাল) দেখিয়ে দিয়েছিলেন। দেবারতি বইটি শুরুই করেছেন নাটকের একটা ছোট অংশ দিয়ে। বইটির মূল সুর নির্ধারিত হয়ে গেছে সেইখানেই। অধ্যায় বিন্যাসের ক্ষেত্রেও বইটিতে মুন্সিয়ানা নজরে এসেছে। সূচনায় নদীর সঙ্গে মানুষের চিরন্তন সম্পর্কের কথা যেমন তুলে ধরা হয়েছে, পাশাপাশি উঠে এসেছে এই সম্পর্কের বারবার বদলে যাওয়া এবং তার ফলে উদ্ভূত বিপদের কথাও। কৃষি সভ্যতার গোড়ার সময় থেকে নদী কীভাবে তার দুধারে বসত করা সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে, সেই নিয়ে স্বল্প পরিসরে অথচ গুরুত্ব সহযোগে আলোচনা করা হয়েছে। এই আলোচনার ফাঁকে যে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি দেবারতি এখানে বলে দিয়েছেন, সেটি হল দেশ বা রাজ্যের সীমানা ধরে নদীর গল্প বলা যায় না (পৃ:১৩)। কেন বলা যায় না, গঙ্গা- ব্রহ্মপুত্রের ব-দ্বীপ অঞ্চলের আলোচনার সূত্রে সেই ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক সত্যকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।

নদীর এই যোগাযোগ স্বাভাবিকভাবেই বাণিজ্যের সহায়ক। প্রাক্‌ ঔপনিবেশিক সময় থেকেই বাণিজ্যের মাধ্যম হিসাবে নদীর ব্যবহার ঔপনিবেশিক শাসকদের নজর এড়ায়নি। ফলে বানিজ্যের উদ্দেশ্যেই একের পর এক এলাকা দখল, ইজারা ব্যবস্থা, কর পরিকাঠামোর সংস্কার। নদীর তৈরি করে দেওয়া জমির দখল নিয়ে সংঘাত মারামারি, মামলা-মোকদ্দমা সব উঠে এসেছে বইয়ের পাতায়। যার থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় নদী আর মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কের বদলটা ঠিক কীভাবে ঘটল।

বাংলার পাশাপাশি উঠে এসেছে অসমের নদী, চর ও তাকে কেন্দ্র করে সাম্রাজ্য বিস্তারের কথা। গল্পের ভঙ্গিতে আলোচনা করা হলেও দেবারতি অতি মুন্সিয়ানার সঙ্গে ভূ-রাজনীতির জটিল অঙ্কের কথা। দেশ-রাজ্যের সীমানা না মেনে চললেও নদী যার ঘূর্ণিপাকে পড়তে বাধ্য হয়েছে। দেশভাগের দায়ভাগ যে নদীকেও বহন করতে হয়েছে। দেশভাগের বেদনার সাহিত্যিক সাদাত হাসান মান্টোর একটি ছোটগল্পের কথা এসেছে এই প্রসঙ্গে। পাশাপাশি এসেছে ব্রহ্মপুত্রের জলভাগের কথাও। আর এই জলভাগ করতে গিয়ে, ‘জনস্বার্থে’ জল ধরে রাখতে স্বাভাবিকভাবেই এসেছে বাঁধ তৈরির কথা। নদীবাঁধ মানুষের কতখানি উপকার করেছে সেই বিতর্কে না গিয়েও কীভাবে এবং কেন মানুষ উৎখাত হয়েছেন তা এই বইতে সহজ ভাষায় বলা আছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বাঁধকে উন্নয়নের ধারা হিসাবে তুলে ধরার যে সাধারণ ধারণা আছে. উত্তরাখণ্ডের বন্যা ও ধ্বসের ফলে যা একটু টাল খেলেও দেশের সর্বত্র তার প্রভাব পড়েনি, সহজ ভাষায় লেখা বইটি পড়লে অন্তত সেই বিপদটা কিছুটা বুঝতে সাহায্য মিলতে পারে। মাছের প্রজননে কীভাবে এই ‘উন্নয়নের’ প্রভাব পড়ছে ইলিশ প্রজননের প্রসঙ্গ তুলে সেই বিষয়টিও আলোচনা করা হয়েছে। বইটির একেবারে শেষে একটি সাপ-লুডোর মত ছক করে ইলিশ প্রজননের ধারা পাল্টে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা নিঃসন্দেহে নজর কাড়ে। বইয়ে আঁকা পটগুলি কথার সঙ্গে সাযুজ্য রাখে, তার জন্য রঞ্জিত চিত্রকর ও সিরাজদৌল্লা চিত্রকরকে ধন্যবাদ। মানচিত্রের ব্যবহারও (পৃ: ৪ ও পৃ: ৩৮) বইয়ের তথ্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই করা হয়েছে। আলোচনাচক্র ও গবেষণা গ্রন্থের ভারি ভারি জগতের বাইরে নদী ও মানুষের সম্পর্ককে বুঝতে ও বোঝাতে এই বই খুবই সাহায্য করবে এই কথা বলবার অবকাশ রাখে না।

এইবার আসা যাক 'ইতিহাসে হাতেখড়ি' গ্রন্থমালার দ্বিতীয় বইটির প্রসঙ্গে। বইটির নাম 'চায়ের দুনিয়া'। লিখেছেন সুপূর্ণা ব্যানার্জি ও অন্বেষা সেনগুপ্ত। বইয়ের প্রথমেই কুমুদরঞ্জন মল্লিকের 'রামসুক তেওয়ারী' (১৯৩১ সাল)-র স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার সঙ্গে চায়ের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে লেখা কবিতাটি দেখিয়ে দেয় বিংশ শতাব্দীর ৩০-এর দশক অবধি বাংলার বাইরে অনেকের কাছেই চা বিষবৎ বলে গণ্য ছিল। এমনকী বাংলাতেও 'চা পান, না বিষপান?' শীর্ষক লেখা নজরে পড়েছে। এমনকী অবিভক্ত বাংলার অন্যতম বিখ্যাত মনীষী ও রসায়নবিদ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় চা পানের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু তার পরেও কেমন করে তা বাঙালির নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য হিসাবে মুদিখানার তালিকায় ঢুকে গেল সেই সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ভূমিকা দিয়ে সুপূর্ণা ও অন্বেষা বইটি শুরু করেছেন। বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে এসে শুরু হয়েছে চায়ের ইতিহাস বিষয়ে আলোচনা। চীনা সম্রাট শেন নং-এর গরম জলের মধ্যে চায়ের পাতা এসে পড়ার বহুল প্রচলিত লোককথাটি দিয়ে সুপূর্ণা ও অন্বেষা চায়ের ইতিহাস বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।  চিনদেশ থেকে ইউরোপে কীভাবে চা তার সাম্রাজ্য বিস্তার করল সেই ইতিহাস নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করলেও ঔপনিবেশিক শাসকরাই যে ভারতীয়দের চায়ের নেশা ধরিয়ে দিয়েছিলেন, সেই সত্যটিও পাওয়া যায় চায়ের ইতিহাস বিষয়ক অধ্যায়ে। ঢাকার নবাব খাজা আব্দুল গণির (১৮১৩-১৮৯৬) চায়ের প্রতি অনুরক্তি থেকে কোচবিহারের রাণী ও কেশবচন্দ্র সেনের কন্যা সুনীতি দেবীর (১৮৬৪-১৯৩২) বিলেত থেকে অভ্যাস করে আসা চা-প্রীতি কীভাবে এবং কেন ১৯৩০-এর দশক থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল, সহজ ভাষায় দক্ষতার সঙ্গে সুপূর্ণা ও অন্বেষা তা বর্ণনা করেছেন। আর সেই সূত্র ধরেই তাঁরা প্রবেশ করেছেন ভারতে চায়ের চাষের ইতিহাস আলোচনায়।

আমরা যারা চায়ের চাষের ইতিহাস বিষয়ে অল্প-বিস্তর অবহিত, তারা সকলেই জানি যে ভারতে চায়ের সন্ধান প্রথম পাওয়া যায় অসমের জঙ্গলে। সেই খুঁজে পাওয়ার ইতিহাস বিস্তারিতভাবে বইতে উল্লেখ করা আছে। পাশাপাশি উল্লেখ করা আছে দার্জিলিং জেলায় পাহাড় ও ডুয়ার্স উপত্যকায় চায়ের চাষের ইতিহাসের কথাও। সংক্ষেপে হলেও দার্জিলিং ও অসমের চা কোথায় আলাদা সহজ ভাষায় সেই কথাটি জানাতে সুপূর্ণা ও অন্বেষা ভুলে যাননি। আর সেই জন্যই আমাদের কাছে চা চাষের সঙ্গে বিপুল সংখ্যায় পরিযায়ী শ্রমিকের প্রয়োজন কেন, সেই বিষয়টাও বোঝা সহজ হয়ে যায়। কেন চা-চাষের শ্রমিকদের সদূর বিহারের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে নিয়ে আসতে হল, সুপূর্ণা ও অন্বেষা সেই ইতিহাস সহজ ভাষায় বিশ্লেষণ করেছেন। দেখিয়েছেন শ্রমিক নির্যাতনের- শ্রমিক সংগ্রামের ইতিহাসও। সেই কাজে জনপ্রিয় লোকগীতিকে, চা শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে ঊনবিংশ শতাব্দীর দুই বিখ্যাত বাঙালি দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের লেখা প্রবন্ধ ও গ্রন্থগুলিকে ব্যবহার করেছেন। চা বাগানের শ্রম বিভাজনের ইতিহাস, শ্রমিকদের মজুরির (এবং মজুরির নামে বঞ্চনার) ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন।

এই বঞ্চনার ইতিহাসের আলোচনা করতে গিয়ে সুপূর্ণা ও অন্বেষা তুলে এনেছেন চা-শ্রমিকদের দাবী দাওয়ার প্রসঙ্গ। ঔপনিবেশিক যুগের ইউরোপীয় মালিকদের হাত থেকে বাগানের মালিকানা যখন দেশীয় শিল্পপতিদের হাতে এল, শ্রমিকদের অবস্থা তখনও পাল্টায়নি। ধুমচিপাড়ার এক বৃদ্ধা চা শ্রমিকের (নিরালা দিদা) সঙ্গে কথা বলে লেখিকারা তুলে এনেছেন চা-শ্রমিকদের দুর্দশার ইতিহাস এবং তার ফলে চা-শিল্প থেকে শ্রমিকদের সরে আসবার কাহিনী। কেমনভাবে একশো বছরের বেশি আগে ছোটনাগপুরের মালভূমি অঞ্চল থেকে পরিযায়ী হয়ে আসা শ্রমিক পরিবারের নতুন প্রজন্ম উপযুক্ত মজুরির আশায় আরেকবার পরিযায়ী হয়ে যাচ্ছেন, নিরালা দিদার গল্পের মধ্য দিয়ে সেই তথ্যও উঠে এসেছে।

আর্থ-সামাজিক বঞ্চনার পাশাপাশি অসম ও বাংলার চা শিল্পের অন্য আরও অনেক কারণ ছিল। বইটির শেষ অধ্যায়ে সেই বিষয়েও সুপূর্ণা ও অন্বেষা আলোচনা করেছেন। জমির চরিত্র পাল্টে যাওয়া, জমিতে সারের ব্যবহার, ছোট চাষীর উদ্ভব ভারতীয় চায়ের গুণমানে বড়সড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল। ফলে চায়ের ব্যবসা অনেকটা ধাক্কা খায়। পাশাপাশি বইতে চা শিল্পের সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক কারণের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে ভারতে অন্যান্য বাণিজ্যের পাশাপাশি চা-শিল্পেও এর প্রভাব পড়েছিল। একদিকে ইউরোপের রফতানির বাজার একধাক্কায় অনেকটা কমে যাওয়া ও অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়ার মত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ এবং  চিনও কেনিয়ার মত এশীয় ও আফ্রিকার দেশে সস্তায় চা উৎপাদনের ফলে রফতানি বাজার ভারত থেকে ঐ দেশগুলিতে চলে যাওয়াকে চা শিল্পের অবনমনের অন্যতম কারণ হিসাবে এই অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে। ২০০৭ সালের চা শিল্প-পরিচালন সংস্থা (Tea Board India) র বার্ষিক প্রতিবেদন এই তথ্যের স্বপক্ষেই সমর্থন যোগায়। প্রতিবেদন ঘাঁটলে জানতে পারা যাবে যে ভারতের তুলনায় চা রফতানিতে শ্রীলঙ্কা ও কেনিয়া এবং তার পাশাপাশি  চিনও ইন্দোনেশিয়া অনেক বেশি এগিয়ে ছিল। যদিও এই অবস্থা অনেকটা পাল্টেছে ২০২১-২২ সালে। চা শিল্প-পরিচালন সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে ভারত আবার চা রফতানিতে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে। সুপূর্ণা ও অন্বেষাও বইতে সেই আশার কথা শুনিয়েছেন।

রঞ্জিত ও সিরাজদৌল্লা চিত্রকরের পটচিত্রে এই বইটিও সজ্জিত। বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে তাঁদের আঁকা সম্পর্কে প্রশংসার ভাষা নেই। ভারতের মানচিত্রে চা উৎপাদনকারী এলাকাগুলি (পৃ: ৪) বইতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। শুধু পৃথিবীর মানচিত্রের জায়গায় একটি রফতানি সূচক মানচিত্র থাকলে আরও ভালোলাগত।

'ইতিহাসে হাতেখড়ি' গ্রন্থমালার দ্বিতীয় পর্যায়ের সর্বশেষ বইটি শান্তনু সেনগুপ্তের লেখা। নাম 'যুদ্ধের নানা দিক'। অন্য বইদুটির মত এই বইটি শুরু হয়েছে অন্নদাশংকর রায়ের 'যুদ্ধের খবর' নামক ছড়াটি দিয়ে। কুরুক্ষেত্রের আঠারোদিনের যুদ্ধের গল্প থেকে শিশুর হাতে বন্দি মুঠোফোনে নকল যুদ্ধের, শ্ত্রুপক্ষ নির্মাণের ও তাকে নিকেশ করবার উল্লাস ছড়িয়ে পড়লেও যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা বোধহয় আমরা স্কুলের বা কলেজের পরীক্ষার খাতাতেই রেখে এসেছি। এমনকী একদা চলা বা এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে চলতে থাকা মুক্তিযুদ্ধের কথা নিয়েও আজকাল জনপরিসরে তেমন আলোচনা শুনতে পাওয়া যায়না। শান্তনু তার বইয়ের শুরুর অধ্যায়ে যুদ্ধের রকমফের এবং সমাজে ও জনপরিসরে যুদ্ধের বিভিন্ন প্রভাবের প্রসঙ্গটি তুলে ধরতে চেয়েছেন। ‘ভাল’-‘খারাপের’ তক্‌মার বাইরে গিয়ে যুদ্ধকে দেখতে চেয়েছেন।

যুদ্ধ তো সব জায়গায় এক রকমের হতে পারেনা। প্রকৃতি ও পরিবেশের হেরফের হলে যুদ্ধেরও হেরফের ঘটে। আবার দাবার ছকেও আমরা যুদ্ধ দেখি। ঘোড়া, হাতি, রাজা, মন্ত্রী, সেনা নিয়ে যুদ্ধ। শান্তনু এই সব বিষয়েই বিস্তারে আলোচনা করেছেন বইটির 'প্রকৃতি, পরিবেশ ও যুদ্ধ' অংশে। কেমনভাবে স্থান ভেদে যুদ্ধের চরিত্র পাল্টে যায় আকবরের আমলে বাংলা জয়ের ব্যর্থ চেষ্টাকে বর্ণনা করে সহজ ভাষায় সেই সত্যকে তুলে ধরেছেন। প্রচলিত লোকছড়া কে ব্যবহার করে নিয়ে এসেছেন বাংলায় বর্গী হানা ও তার বিরূদ্ধে বিরূপ প্রকৃতিকে ব্যবহার করে আলীবর্দী খানের বর্গী দমনের কথা। ঔপনিবেশিক শাসনের প্রথম যুগে ইংরেজরাও কীভাবে প্রকৃতির প্রতিকূলতার সঙ্গে যুঝেছিলেন ১৮২৪-১৮২৬ এর ইঙ্গ – বর্মা যুদ্ধের প্রসঙ্গটি তুলে শান্তনু সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। জলপথে আক্রমণ আসতে পারে এই ভয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ভারতের পূর্ব ও উত্তর পূর্বের মৎসজীবীদের নৌকা পরিকল্পিত ভাবে ডুবিয়ে দেয় ঔপনিবেশিক সরকার। গরীবকে ভাতে মেরে রণকৌশল, এও যুদ্ধের এক শিক্ষা বটে। শান্তনু তাঁর বইতে সে’কথা বলেছেন।

যুদ্ধের প্রসঙ্গে দেশ-বিদেশের যুদ্ধের কথাও এসেছে। কীভাবে একটা অঞ্চলের সীমানা পেরিয়ে যুদ্ধ আন্তর্জাতিক হতে পারে বিংশ শতাব্দীর দুই বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ নিদর্শন থেকে আমাদের বোধহয় তার শিক্ষা হয়নি। তারপরেও লড়াই শেষ হয়নি। দেশ কালের গণ্ডী অতিক্রম করে সেই লড়াই এখন কোন না কোন উপায়ে বিশ্বব্যাপী। শান্তনু এই প্রসঙ্গে ইউক্রেন- রাশিয়ার যুদ্ধে গোটা ইউরোপ ও এশিয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবের প্রসঙ্গ এনেছেন। আর কিছুদিন চললে বোধকরি গাজা ভূখণ্ডের সংঘাতের প্রসঙ্গও উঠে আসবে পরের লেখাগুলিতে। প্রচলিত প্রবাদ অনুযায়ী দুই রাজায় যুদ্ধ হলে সবথেকে বেশি ভোগেন সাধারণ মানুষ। যাঁদের দাম উলুখাগড়ার মতই সস্তা। দুই বিশ্বযুদ্ধের সময়তেই ঔপনিবেশিক শাসনে থাকা ভারতের সাধারণ মানুষের জীবনের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। যুদ্ধের আলোচনায় সাধারণ মানুষের প্রসঙ্গ এনে, ঔপনিবেশিক সরকারের শস্য মজুত করবার নীতি বিষয়ে আলোচনা করে শান্তনু দেখিয়েছেন এই নীতি কীভাবে বাংলায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও মন্বন্তর ডেকে এনেছিল। প্রায় তিরিশ লক্ষ মানুষ তাতে প্রাণ দিয়েছিলেন। যুদ্ধের সঙ্গে যাদের কোন প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল না। যুদ্ধের সময় শহরের অবস্থা নিয়ে শান্তনু আলোচনা করেছেন। এসেছে কলকাতায় জাপানী বোমা, ধর্মতলার মোড়ে ইন্‌সিওরেন্স বিল্ডিং এর মাথায় বিমান বিধ্বংসী কামান বসানোর কথাও।

কিন্তু যুদ্ধ কি শুধুই খারাপ অর্থে ব্যবহৃত? এই আলোচনায় শান্তনু নিয়ে এসেছেন ঔপনিবেশিক ও উত্তর-ঔপনিবেশিক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলা মুক্তি আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের কথা। স্বাভাবিকভাবেই এসেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ। আবার তাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের লড়াইয়ের কথাও। বইতে এসেছে এখনও মীমাংসা না হওয়া অনেক লড়াই, অনেক যুদ্ধের কথা যা অর্থের পাশাপাশি নিয়েছে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের প্রাণ। প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে শান্তি ও মৈত্রীর উদ্দেশ্যে তৈরি হওয়া জাতিসংঘ (League of Nations) বা রাষ্ট্রসংঘের (United Nations) বিভিন্ন প্রচেষ্টার কথা উঠে এসেছে শান্তনুর লেখায়।

শান্তনু লেখা শেষ করেছেন আমাদের বহুদিনের লালিত একট শান্তির স্বপ্ন, ভ্রাতৃত্বের স্বপ্ন দিয়ে। সত্যজিৎ রায়ের গুপী গাইন বাঘা বাইন চলচ্চিত্রের যুদ্ধবিরোধী গানের উদ্ধৃতি যেন বইটির মূল সুরটি বেঁধে দিয়েছে। সত্যিই তো যুদ্ধ করে কার কি লাভ হয়েছে?

রঞ্জিত ও সিরাজদৌল্লা চিত্রকরকে বারবার ধন্যবাদ দিয়ে ঋণ শেষ হবেনা। অন্য বইদুটির মত এই বইটি সাজাতেও তাঁরা যথাসাধ্য পরিশ্রম করেছেন। বইতে তিনটি মানচিত্র (একটি ৪ ও অন্য দুটি ৪৯ ও ৫০ নম্বর পাতায়) যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যা বইটির গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়।

সহজ কথা সহজে বলা কঠিন তো বটেই, লেখা প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। বই তিনটির রচয়িতারা (দেবারতি, সুপূর্ণা ও অন্বেষা এবং শান্তনু) সেই অসাধ্য সাধনে অনেকটাই সফল। তা বলে নিজেদের ঐতিহাসিক/সমাজবিজ্ঞানী সত্তার সঙ্গে কেউই যে আপোস করেননি সেটা প্রতিটি বইয়ের শেষে ব্যবহৃত আকরগ্রন্থগুলির তালিকা থেকে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। বইয়ে ব্যবহৃত জটিল শব্দের সংখ্যা নগন্য বললেই চলে। তবুও তা লেখিকা/লেখকদের দৃষ্টি এড়ায়নি। প্রতিটি বইয়ের শেষেই এইরকমের কিছু শব্দ ও তার অর্থ দেওয়া রয়েছে। অধুনা প্রচলিত বিদ্যালয় পাঠ্যক্রমের বাইরে গিয়ে গল্পের ছলে এই বইগুলি থেকে কিছু কিছু গল্প যদি শিক্ষিকা-শিক্ষকেরা ব্যবহার করেন তবে তা শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় হবে বলেই বিশ্বাস। পাশাপাশি রাজনীতি ও গণ-আন্দোলনের পরিসরে যদি বইগুলি ব্যবহার করা হয় তবে রাজনীতি বা গণ-আন্দোলনের পরিসরে ব্যবহৃত অযত্নসাধিত, দুর্বোধ্য এবং প্রায় অপাঠ্য ভাষার যন্ত্রনা থেকে হয়ত মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

আলোচিত গ্রন্থ:

১) দেবারতি বাগচী। ইতিহাসে হাতেখড়ি: নদীর চলা (কলকাতা: আই ডি এস কে, ২০২৩) ।

২) সুপূর্ণা ব্যানার্জি ও অন্বেষা সেনগুপ্ত। ইতিহাসে হাতেখড়ি: চায়ের দুনিয়া (কলকাতা: আই ডি এস কে, ২০২৩) ।

৩) শান্তনু সেনগুপ্ত। ইতিহাসে হাতেখড়ি: যুদ্ধের নানা দিক (কলকাতা: আই ডি এস কে, ২০২৩) ।

Latest News

ধনু-মকর-কুম্ভ-মীনের বুধবার ২১ মে কেমন কাটবে? জানুন রাশিফল ইউনুসের সময় শেষ? জরুরি বৈঠকের ডাক বাংলাদেশি সেনাপ্রধানের! পিছনের দরজা দিয়ে খেলা? সিংহ-কন্যা-তুলা-বৃশ্চিকের কেমন কাটবে ২১ মে বুধবার? জানুন রাশিফল মেষ-বৃষ-মিথুন-কর্কট রাশির কেমন কাটবে বুধবার ২১ মে? জানুন রাশিফল ভয়ানক তেতো স্বাদের উচ্ছে! তিক্ততা কমানোর ৫ সহজ উপায় ফুটবলের পর ২২ গজেও সাফল্য, জেসি মুখার্জির ফাইনালে বাগান, প্রতিপক্ষ কালীঘাট ক্লাব রাতের কলকাতায় তরুণীকে টানা হেঁচড়া, 'শ্লীলতাহানি' রাস্তায়, ধরে ফেলল জনতা মাঠেও খেললেন, আবার গ্যালারিতে বসেও খেলা দেখলেন CSK অধিনায়ক ধোনি,কী করে সম্ভব হল? দুর্ঘটনায় বিচ্ছিন্ন বাবার শরীর, পুলিশের 'অর্ডার', দেহাংশ তুলতে বাধ্য হল ছেলে বাংলাদেশি ও পাকদের ঢুকতে দিতে চায় না ইউরোপ! শেনজেন ভিসা বাতিলের হারে পড়ল লজ্জায়

Latest lifestyle News in Bangla

ভয়ানক তেতো স্বাদের উচ্ছে! তিক্ততা কমানোর ৫ সহজ উপায় স্কুল থেকে ফিরলে এই ৫ প্রশ্ন নয়, প্যানিক করতে পারে আপনার সন্তান টাকার বৃষ্টি হবে, শুধু জেনে নিন ঘরে টাকা রাখার সঠিক জায়গাটি অবশেষে চিকিৎসা শুরু রানাঘাটের অস্মিকার! কিছু দিনেই ভারতে আসবে প্রাণদায়ী ইনজেকশন জলখাবারে বানিয়ে ফেলুন মিষ্টি-মশলাদার কাঁচা আমের পরোটা, জেনে নিন সহজ রেসিপি কোষ্ঠকাঠিন্যের জেরে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক, কী ভাবে এড়াবেন এই সমস্যা? এসি থেকে বেরোনো জল নোংরা ভেবে ফেলে দেন? এই ৫ সুবিধা জানলে বালতি নিয়ে দৌড়াবেন দাঁতে ক্যাভিটি ভর্তি! দাঁতের ক্ষয় সারানোর নিশ্চিত উপায় আজ জেনে নিন প্রেমিকার সঙ্গে ঘুরে আসুন আন্দামানের এই ৭ জায়গা থেকে, ভুলে যাবেন মালদ্বীপ রাতে এই কাজগুলি করা সবচেয়ে অশুভ! ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে আপনাকে

IPL 2025 News in Bangla

মাঠেও খেললেন, আবার গ্যালারিতে বসেও খেলা দেখলেন CSK অধিনায়ক ধোনি,কী করে সম্ভব হল? সূর্যবংশীর ব্যাটিং ঝড়, যুধবীরের গতি, ফের আটকে গেল ধোনির CSK! ৬ উইকেটে জিতল RR পরের বছরের উত্তর খুঁজতে শুরু করেছি… IPL 2026 নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন ধোনি গুরুত্বপূর্ণ MI ম্যাচের আগে বিরাট ধাক্কা খেল DC, নেটে চোট পেলেন কেএল রাহুল এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে… IPL 2025-এর প্লে-অফের লড়াই নিয়ে বড় দাবি MI কোচের IPL-এ প্রথমবার ৩ উইকেট নিলেন, RR vs CSK ম্যাচে চমকে দিলেন জম্মু-কাশ্মীরের যুধবীর শ্রেয়স-রাহানেদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ! IPL 2025 Final-এর পরের দিনেই শুরু এই লিগ KKR ছিটকে যেতেই হুঁশ ফিরল, চিন্নাস্বামীতে নয়, RCB হোম ম্যাচ খেলবে অন্য ভেন্যুতে বৃষ্টির কারণে IPL 2025 নিয়ে BCCI-এর বড় সিদ্ধান্ত! বদলে দেওয়া হল এই নিয়ম ইডেন থেকে শেষমেশ আমেদাবাদেই সরল IPL 2025-এর ফাইনাল, মুল্লানপুরও হল লাভবান

Copyright © 2025 HT Digital Streams Limited. All RightsReserved.