আতশবাজির সূত্রপাত চিন থেকে। নিজেদের নানান অনুষ্ঠান উদযাপন করতে তারা ব্যবহার করতেন আতশবাজি। আর এই থেকেই ধীরে ধীরে এই আতশবাজি তৈরিকে মানুষ পেশা হিসাবে গ্রহণ করে। এই পেশা ছিল খুবই সম্মানীয়। চিনে এটি বিশ্বাস ছিল যে, আতশবাজি খারাপ আত্মা কে তাড়িয়ে দিয়ে আনতে পারে সৌভাগ্য এবং সুখ। কিন্তু কালীপুজোর সঙ্গে এই সব বাজির সম্পর্ক কি তার উত্তর খুঁজতে দ্বন্দে পড়েন ইতিহাসবিদেরাও।
২০ শতকে বাঙালি বাড়ির বিয়ের উদযাপনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো বাজি। ১৭ শতকে লেখা সৈয়দ আলাউলের পদ্মাবতী কাব্যে রানী পদ্মাবতীর বিয়েতে উল্লেখ আছে বাজির। তবে এরপর ১৯ শতক পর্যন্ত সেভাবে বাজির উল্লেখ পাওয়া যায়নি। উত্তরভারতের দিওয়ালি থেকেই বাঙালি বাজি ফাটানো শিখেছে। ব্যবসার নিরিখেই এর রমরমা বেড়েছে।
১৮০২ থেকে ১৮১২ বাঙালির সমাজ জীবনের দর্পণ উইলিয়ম ওয়ার্ড সাহেবের জার্নাল থেকে প্রবীণ অধ্যাপক শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কিন্তু তাতে বাঙালির নানা আচার, অনুষ্ঠান পার্বণের খুঁটিনাটি, ফিরিস্তি থাকলেও কালীপুজোয় বাজি পোড়ানোর গল্প এক ফোঁটা নেই।
আরও পড়ুন: (ডাকিনী-যোগিনী সত্যিই রাক্ষসী না দয়ালু, বিদ্বান দুই নারী? কেন তাদের এই রূপ)
আরও পড়ুন: (ডাকিনী-যোগিনী ছাড়াও তন্ত্রে পাওয়া যায় ৬৪ ভয়াল যোগিনীর কথা! কীভাবে উৎপত্তি এদের)
বাঙালির সংস্কৃতি বিষয়ক প্রাবন্ধিক তথা প্রাক্তন আমলা ও সাংসদ জহর সরকার বলেন, আসলে কালীপুজো ও বাজির সম্পর্ক অনেকটাই প্রেম, ভালবাসা ও দামি হিরের সম্পর্কের মতো। ইতিহাস বা লোকাচার নয়, নিছকই বাণিজ্যের শর্ত মেনে তৈরি হয়েছে! এর মধ্যে প্রাচীন পরম্পরাটরা নেই। তিনি মনে করেন, ১৯৪০ এর শিবকাশীর বাজির কারবারের পর থেকেই এতটা বেড়েছে এই বাজির জনপ্রিয়তা।
মোগল আমলে দীপাবলিতে আলোর রোশনাই দেখা গেলেও বাজির উল্লেখ পাওয়া যায়নি। বিংশ শতকের গোড়ায় কলকাতার বনেদি বাড়িতে ফাটানো হতো তুবড়ি, রংমশাল। তখনকার দিনে বাজি বলতে প্রধানত বড় বাড়ির ব্যাপার ছিল বলে মনে করা হয়। পল্লীবাংলায় বাজির আলাদা তাত্পর্য রয়েছে। এই সময় প্রচুর পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়ে। আর তা দমন করতেই এই বাজি ফাটানো হয়ে থাকে।
বর্তমান সমাজে আতশবাজি ছাড়া কালীপুজো ভাবাই যায় না। পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, আগে বিক্ষিপ্ত ভাবে চললেও শব্দবাজির দৌরাত্ম্য বেড়েছে ১৯৭০এর দশক থেকে। অর্থাত্ কালীপুজোর সঙ্গে বাজির সম্পর্ক খোঁজা অযৌক্তিক বলেই মনে করেন তিনি।